পাগলায় মানববন্ধন : মন্দিরের জায়গা উদ্ধারের দাবি

আগের সংবাদ

স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে দ্বিধা করবে না যুক্তরাষ্ট্র : মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর

পরের সংবাদ

চট্টগ্রামে আমেরিকান হাসপাতাল ঘিরে বিশাল সিন্ডিকেট!

প্রকাশিত: জুন ২২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অফিস : চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে আমেরিকান হাসপাতাল নামে পরিচিত কেন্দ্রীয় চর্ম ও সামাজিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসকরা রোগীদের অনিবন্ধিত ওষুধ সেবনের পরামর্শ দিচ্ছেন। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য তাদের পাঠানো হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। সরকারি এই হাসপাতালের চিকিৎসকরা এভাবে মোটা অঙ্কের কমিশন বাণিজ্য করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গত সোমবার জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ৬ লাখ টাকার ওষুধ জব্দ করার পাশাপাশি ৩টি ফার্মেসিকে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসন জানায়, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেয়ে ঔষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর চট্টগ্রাম কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে আমেরিকান হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে হাসপাতালটির সামনে থাকা মা মেডিকেয়ার ও স্বাগতা ফার্মেসিতে বিপুল পরিমাণ অননুমোদিত ওষুধ পাওয়া যায়। প্রশাসনের কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদে এসব ফার্মেসি মালিকরা জানান, সরকারি হাসপাতালের ডাক্তাররাই এসব অননুমোদিত ওষুধ লিখছেন। যে কারণে তারা এগুলো বিক্রি করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ফার্মেসি মালিক জানান, দোকানে এমন বিদেশি ক্রিম রয়েছে যেগুলোর দাম ১ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। প্রতি ক্রিমে ডাক্তাররা ২০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত কমিশন পান। এছাড়া এ হাসপাতালের রোগীদের মেডিলিভ নামক একটি ল্যাবে যাবতীয় টেস্ট করানোর জন্য বলে দেয়া হয়। একই সময়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছে হাসপাতালটির রোগীরা অভিযোগ করেন, ডাক্তাররা এমন ওষুধ লেখেন যা এখানে অবস্থিত কয়েকটি ফার্মেসি ছাড়া অন্য কোথাও পাওয়া যায় না।
সরকারি হাসপাতালের ডাক্তারদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অনিয়মের সরাসরি প্রমাণ পেয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত। এ সময় তিনি হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গে কথা বলে অসাধু ডাক্তারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, অভিযানে কয়েকজন রোগীর প্রেসক্রিপশন যাচাই করা হয়েছে। এ সময় অননুমোদিত ওষুধ লেখার বিষয়ে সত্যতা পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
অভিযানের সময় থাকা ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক এস এম সুলতানুল আরেফীন বলেন, অভিযানে বেশ কিছু ওষুধ পাওয়া গেছে যেগুলো ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের নিবন্ধিত নয়। এগুলো কোনো ফার্মেসিতে বিক্রি করা যাবে না এবং কোনো ডাক্তার এগুলো প্রেসক্রিপশন করতে পারবেন না। কিন্তু এই সরকারি হাসপাতালের ডাক্তাররা কেন এটি প্রেসক্রিপশনে লিখছেন সেটি আমি বলতে পারব না।
হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. লুৎফর রহমান রাহাত ভোরের কাগজের কাছে বিভিন্ন অভিযোগ সম্পর্কে বলেন, ‘ভ্রাম্যমাণ আদালতের টিম তো হাসপাতালের ভেতরে প্রবেশ করেনি। তারা বাইরে ফার্মেসিগুলোতে অভিযান চালিয়েছে। হাসপাতালের চিকিৎসার মান যদি খারাপ হতো তাহলে প্রতিনিয়ত এত রোগী আসত না। প্রতিদিন গড়ে আমরা ৫০০ জনের মতো রোগীকে চিকিৎসা দিচ্ছি। হাসপাতালের ভেতরটি আমরা দালালমুক্ত করতে পেরেছি। কিন্তু হাসপাতালের গেটের বাইরের বিষয়গুলো তো আমরা চেক দিতে পারব না।’ তিনি উল্টো অভিযোগ করে বলেন, ‘এখানে হাসপাতালের বাইরে অবস্থিত ফার্মেসি ও দালালচক্র মিলে একটি বিশ্রী পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে এবং তাদের কাছে আমরাও অনেকটা জিম্মি। কারণ তাদের পক্ষে স্থানীয় রাজনৈতিক হোমরা-চোমরা রয়েছে।’
ডা. লুৎফর রহমান রাহাত বলেন, ‘যদি চিকিৎসকরা তাদের প্রেসক্রিপশনে অনিবন্ধিত ঔষধ লিখে থাকেন সে ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বলা হবে। তিনি বলেন, এরই মধ্যে আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করেছি। তারা একটি নির্দেশনা দেবেন। আমরা সেই নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবস্থাপত্র দেব।’
চট্টগ্রামে স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. সুমন বড়–য়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, কোনো চিকিৎসকেরই অনিবন্ধিত ঔষধ লেখা উচিত নয়। তারপরও যদি কেউ লিখে থাকেন সে ব্যাপারে আমরা নির্দেশনা দেব। চিকিৎকদের কমিশন বাণিজ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অভিযোগ তো একপক্ষীয়, তাই সবার বক্তব্য না জেনে কাউকে দোষী বলা যাবে না। এটি তদন্তসাপেক্ষ বিষয়।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়