জিএম কাদের : স্বাধীনতার ৫০ বছরেও দেশে সাংবাদিকতা অনিরাপদ

আগের সংবাদ

রাজশাহীতে লিটনকে টেক্কা দেয়ার মতো প্রতিদ্ব›দ্বী নেই

পরের সংবাদ

লিটনের দুর্দান্ত ক্যাপ্টেন্সি : ম্যাচসেরা শান্ত, ফাইফারবঞ্চিত তাসকিন

প্রকাশিত: জুন ১৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে এক অনন্য রেকর্ড গড়েছে টাইগাররা। গতকাল আফগানিস্তানকে ৫৪৬ রানের ব্যবধানে হারিয়ে ৮৯ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জয়ের রেকর্ড গড়েছে লিটন বাহিনী। হাথুরুসিংহের শিষ্যদের দেয়া ৬৬২ রান তাড়া করতে নেমে গতকাল টেস্টের চতুর্থ দিনের প্রথম সেশনেই আফগানদের ইনিংস গুটিয়ে যায় ১১৫ রানে। এর আগে টাইগারদের করা ৩৮২ রানের জবাবে প্রথম ইনিংসে আফগানরা করেছিল ১৪৬ রান। এরপর প্রতিপক্ষকে ফলোঅন না করিয়ে ৪ উইকেট হারিয়ে ৪২৫ রানে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে স্বাগতিকরা। তাতে দুই ইনিংস মিলিয়ে টাইগারদের সংগ্রহটা দাঁড়ায় ৮০৭ রান। বিপরীতে সফরকারীরা তোলে মাত্র ২৬১ রান। ফলে ৫৪৬ রানের বড় ব্যবধানে জয় তুলে নেয় লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।
টেস্ট অভিষেকের পর থেকেই ব্যাট হাতে নিজের জাত চিনিয়েছেন লিটন দাস। উইকেটের পেছনেও সরব থাকেন তিনি। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ৮ বছর পর আফগানদের বিপক্ষে টেস্টের দায়িত্বভার দেয়া হয়েছে লিটনকে। সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশের দ্বাদশ টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে অভিষেকও ঘটে তার। সেই অভিষেক ম্যাচেই দুর্দান্ত নেতৃত্ব আর রেকর্ড গড়া জয়ে লিটনের সাফল্যের মুকুটে যুক্ত হয়েছে আরো একটি পালক। মাঠে সব সময় লিটনকে দেখা যায় কাম এন্ড কুল। আফগানদের বিপক্ষে যখন যে বোলার প্রয়োজন ঠিক তখন তাকেই এনেছেন বোলিংয়ে। দেখিয়েছেন ধৈর্যের দক্ষতা। মাঠে পরামর্শ করতেও দেখে গেছে সাবেক অধিনায়কদের সঙ্গে। বিশেষ করে নজরে এসেছে মুশফিকুর রহিম, মুমিনুল হকদের সঙ্গে আলোচনার দৃশ্য। যখনই কোনো আলোচনার প্রয়োজন পড়েছে, লিটন নিয়েছেন সেসব টোটকা। অধিনায়ক লিটনকে অবশ্য সফল বলাই যায়। কেননা টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে অভিষিক্ত হয়েই লিটন জিতেছেন বড় রানের ব্যবধানে।
ইতিহাস গড়া জয়ের পর গতকাল সংবাদ সম্মেলনে হাসিমুখে আসেন লিটন। প্রথমবার টেস্টে নেতৃত্ব দেয়া লিটন চাপের চেয়ে অধিনায়কত্ব উপভোগই করেছেন বেশি। মিরপুর টেস্টে জয়ের পর তিনি বললেন, ‘অধিনায়কত্ব অনেক উপভোগ করেছি। বোলাররা আমাকে যথেষ্ট সমর্থন দিয়েছে। উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়ে আমি দেখেছি বোলাররা বল সুইং করাচ্ছে, স্লিপে বল যাচ্ছে। কিপিং করতেও মজা। আর আমি যদি অধিনায়ক থাকি, সেক্ষেত্রে আরো ভালো লাগে, যে কোনো মুহূর্তে উইকেট পড়ার সুযোগ থাকে।’ টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে ফুল মার্ক পেয়ে পাস করে গেলেন লিটন। সেই সঙ্গে সবাইকে বার্তা দিলেন, তাকে দেশের ভবিষ্যৎ অধিনায়ক হিসেবে ভাবা যেতেই পারে। যদিও ব্যাট হাতে প্রথম ইনিংসে ভালো করতে পারেননি তিনি, করেছিলেন মাত্র ৯ রান। তবে দ্বিতীয় ইনিংসেই চেনা ছন্দে ফেরেন লিটন, ৬৬ রানে অপরাজিত থেকেছেন টাইগারদের নতুন এই অধিনায়ক। রানের বিবেচনায় বাংলাদেশও পেয়েছে তার টেস্ট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জয়। ২০১৫ সালে ভারতের বিপক্ষে ফতুল্লায় টেস্ট অভিষেক লিটনের। সেই থেকে লাল-সবুজের জার্সিতে ৩৮টি টেস্ট খেলা লিটন আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের ১২তম টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে দুর্দান্ত নেতৃত্ব দিয়ে দলের অসামান্য জয়ে রেখেছেন বড় ভূমিকা।
২০১৯ সালে বাংলাদেশ দলকে যে আফগানরা টেস্টে হারিয়েছিল, তাদেরই এবার উড়িয়ে দিতে পেসারদের রয়েছে বিরাট ভূমিকা। গতকাল ম্যাচ শেষে লিটন চার বছরের ব্যবধানে দুই টেস্টের পার্থক্য তুলে ধরতে গিয়ে পেসারদের কথাটা আলাদা করে উল্লেখ করেছেন, ‘আমরা বড় ব্যবধানে জেতা মানে বড় দল হওয়ার পথে এগোচ্ছি। আমরা এখন অনেক টেস্ট খেলি। আর ২০১৯ সালে আমাদের পেস বোলিং এত ভালো ছিল না। এখন অনেক ভালো। আমরা মিরপুরে ৩ পেসার নিয়ে খেলি না। যেহেতু এখানে উইকেটে যথেষ্ট সাহায্য ছিল, পেসাররা সেটা কাজে লাগাতে পেরেছে। তারা তাদের দায়িত্ব পালন করেছে। আমি এতে খুশি।’ ভবিষ্যতেও দল এমন উইকেটে খেলবে কিনা, এ প্রশ্নের উত্তরে লিটন বলেন, ‘এটা প্রতিপক্ষের ওপর নির্ভর করবে।’
পেস বোলিং বিভাগের উন্নতি কতটা হলো, লিটন সেটা বুঝিয়েছেন এভাবে, ‘ওরা কত ভালো করছে, সেটা পিচ ম্যাপেই বোঝা যায়। ওরা এখন কাভার পয়েন্ট ছাড়া বল করছে। ওদের বিপক্ষে আমাদের নেটে ব্যাটিং করতেও কষ্ট হয়। তাতে আমাদের প্রস্তুতিও ভালো হচ্ছে। এটা ধরে রাখতে পারলে নতুনেরা আরো আগ্রহী হবে।’
বাংলাদেশের বিশাল জয়ে ম্যাচসেরা হয়েছেন জোড়া সেঞ্চুরি করা শান্ত। ব্যাটার নাজমুল হোসেন শান্তর ধারাবাহিক রান করার পেছনে ওর প্রসেসের পরিবর্তন দেখছেন অধিনায়ক লিটন কুমার দাস। এক বছর আগেও ধারাবাহিক খারাপ পারফরম্যান্স করে যাচ্ছিলেন শান্ত। সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্রমাগত ট্রলের শিকার হওয়া নাজমুল হোসেন শান্ত তখন রেহাই পাননি। ব্যাটিং কিংবা ফিল্ডিংয়ে গ্যালারি থেকে ছুটে আসত দর্শকদের তির্যক মন্তব্যের স্রোত। লিটনও একই রকম সময় পার করে এসেছেন।
শান্তকে নিজের এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখার পরামর্শ দিয়ে লিটন বললেন, দেখেন, শান্তর জায়গায় আমিও ছিলাম কিছুদিন আগে। শান্তর সঙ্গে আমার অনেক কথাবার্তা হয়েছে আগে। জানি না কতটুকু হেল্প হয়েছে তার। আমি যেটা বিশ্বাস করি, তার অনুশীলনের পদ্ধতিতে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আগে যেভাবে অনুশীলন করত, তার থেকে একটু গোছানো এখন।

শান্তর পরিবর্তন নিয়ে লিটন বলেন, আপনি যখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে থাকবেন, অনেক কিছু জানবেন। আপনার সমস্যা কী হচ্ছে, কোন জায়গা আপনার শক্তি, কোন জায়গায় দুর্বল- এ বিষয়গুলো ভালোভাবে খুঁজে বের করেছে। সেগুলো নিয়ে অনুশীলন করছে। এটা অনেক ভালো দিক, আমি চাই ও সব সময় এটা করে যাক। যেভাবে খেলছে, এটা সব সময় ধরে রাখুক। কিন্তু একটা সময় আবার খেলোয়াড়দের এমন সময় আসবে। কিন্তু সে যেন এই জিনিসটা ধরে রাখতে পারে। কীভাবে সে সফল হয়েছে, এটা যদি বুঝতে পারে, আমার মনে হয় সব সময় করতে পারবে জিনিসটা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়