জিএম কাদের : স্বাধীনতার ৫০ বছরেও দেশে সাংবাদিকতা অনিরাপদ

আগের সংবাদ

রাজশাহীতে লিটনকে টেক্কা দেয়ার মতো প্রতিদ্ব›দ্বী নেই

পরের সংবাদ

ময়মনসিংহ শহরে জনদুর্ভোগ : ব্যাটারিচালিত যান গিলছে লাখো ইউনিট বিদ্যুৎ

প্রকাশিত: জুন ১৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি : সড়কে অনুমোদনহীন ব্যাটারিচালিত যান প্রতিদিন ময়মনসিংহ নগরীতেই গিলছে প্রায় ১ লাখ ইউনিট বিদ্যুৎ। এসব যানে প্রচুর বিদ্যুৎ ব্যবহার হওয়ায় গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের সুফল মিলছে না। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, ব্যাটারিচালিত যানের কিছুটা লাগাম টানলে নগরীতে যানজট ভোগান্তি দূর হওয়ার পাশাপাশি কমবে লোডশেডিং।
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের হিসাব মতে, সিটি করপোরেশন এলাকায় অনুমোদিত ইজিবাইক রয়েছে ৫ হাজার ৯৫৬টি। ব্যাটারিচালিত রিকশা রয়েছে ১২ হাজার, এর মধ্যে চার ব্যাটারির মোটা চাকার রিকশা ৫ হাজার ৬০০টি। বাকিগুলো ৩০ অ্যাম্পিয়ার ব্যাটারির চিকন চাকার রিকশাভ্যান। এ ছাড়া ইজিবাইকে অনেকে ৬ ব্যাটারিও ব্যবহার করেন। সিটি করপোরেশনের নির্দেশনা অনুযায়ী নগরীতে প্রতিদিন ৩ হাজার ইজিবাইক ও ২ হাজার ৮০০টি মোটা চাকার রিকশা চলাচল করতে পারে।
তবে নগরীতে ব্যাটারিচালিত এসব যানের সংখ্যা সিটি করপোরেশনের হিসেবের কয়েকগুণ বেশি। ফলে ভোর থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত নগরীজুড়ে যানজটের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। বর্তমানে চলমান উন্নয়ন কাজে কয়েকটি রাস্তা বন্ধ থাকায় পুরো নগরীকে প্রায় স্থবির করে রাখে ব্যাটারিচালিত যান। সরকার ব্যাটারিচালিত যানবাহন আমদানির অনুমোদন দেয়নি।
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) ইঞ্জিনচালিত নয় বলে এসব যানকে সড়কে চলাচলের জন্য লাইসেন্স দেয় না। কিন্তু বিদ্যুৎ বিভাগ এসব যানবাহনে চার্জ দেয়ার জন্য আলাদা ট্যারিফ নির্ধারণ করে সংযোগ দিচ্ছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের একাধিক প্রকৌশলীর কাছ থেকে নেয়া তথ্য বিশ্নেষণ করে দেখা গেছে, একটি ইজিবাইকে ৫টি ১২ ভোল্টের ব্যাটারি থাকে। সাধারণ হিসাবে ৫টি ১২ ভোল্টের ব্যাটারিতে ১ দশমিক ৭৫ কিলোওয়াট থেকে ২ কিলোওয়াট ক্ষমতা থাকে। গড়ে ১ দশমিক ৫ কিলোওয়াট ধরে দিনে একটি ৫ ব্যাটারির ইজিবাইক ৮ ঘণ্টা চার্জ দিলে ১৪ ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হয়। অর্থাৎ নগরীতে দৈনিক ৩ হাজার ইজিবাইক বিদ্যুৎ গিলছে ৪২ হাজার ইউনিট।
এছাড়া, চারটি ১২ ভোল্টের ব্যাটারিযুক্ত একটি মোটা চাকার রিকশায় ৮ ঘণ্টা চার্জ দিতে দিনে ১১ দশমিক ২ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়। দৈনিক নগরীতে চলা ২ হাজার ৮০০টি মোটা চাকার রিকশায় বিদ্যুৎ খরচ হয় ৩১ হাজার ৩৬০ ইউনিট। বাকি ৩০ অ্যাম্পিয়ার ব্যাটারির চিকন চাকার রিকশা-ভ্যান ও প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে চলা যানে দৈনিক প্রায় ২৫ হাজার ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছে। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ময়মনসিংহ মহানগর শাখার সম্পাদক আলী ইউসুফ বলেন, নগরীতে ভোগান্তির বড় কারণ যানজট।
বিভিন্ন সময় যানজট নিরসনে প্রশাসন নানামুখী উদ্যোগ নিলেও কী কারণে বাস্তবায়ন হচ্ছে না তা বোধগম্য নয়। অতিরিক্ত ব্যাটারিচালিত যানে যেমন বিদ্যুতের অপচয় হচ্ছে তেমন যানজটেও মানুষের মূল্যবান কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। স¤প্রতি উন্নয়ন কাজ চলমান থাকায় যানজট তীব্র আকার ধারণ করেছে। সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিতে সিটি করপোরেশন এবং প্রশাসনের কঠোর হওয়ার বিকল্প নেই।
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের সহকারী সচিব মুহা. আমিনুল ইসলাম বলেন, সিটি করপোরেশনের অধীনে সব ইজিবাইক এবং রিকশা-ভ্যান রেজিস্ট্রেশন করা।
এগুলো লাল ও নীল দলে ভাগ করে দেয়া হয়েছে। একদিন লাল ইজিবাইক ও অন্যদিন নীল ইজিবাইক নগরীতে ভাগ ভাগ করে চলে। যারা অবৈধভাবে ইজিবাইক এবং রিকশা চালিয়ে সমস্যা সৃষ্টি করছে আমরা নিয়মিত তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে আসছি। গত ১ বছরে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ময়মনসিংহ অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, লোডশেডিং কমাতে অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। বিদ্যুৎচালিত অবৈধ যানের বিরুদ্ধে প্রশাসন এবং সিটি করপোরেশন যদি ব্যবস্থা নেয় তাহলে সাধারণ গ্রাহক বিদ্যুতের সুফল পুরোপুরিভাবে ভোগ করতে পারবে।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) ময়মনসিংহের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুদুল হক বলেন, ময়মনসিংহ থেকে পুরো বিভাগে পিডিবি ও পল্লী বিদ্যুতের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। বিভাগে বিদ্যুতের চাহিদা ১২০০ মেগাওয়াট। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে ১ হাজার মেগাওয়াট। ফলে গড়ে ২০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাওয়ায় এবং গরমে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় লোডশেডিং বেশি হচ্ছে।
ময়মনসিংহ ট্রাফিকের পরিদর্শক (প্রশাসন) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রাচীন জনপদ ময়মনসিংহ শহরে মানুষের কর্মচঞ্চলতা বাড়লেও রাস্তাঘাট প্রশস্ত হয়নি।
নগরীতে ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত পরিবহন হওয়ায় যানজট সবসময় লেগেই থাকে। তবে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির বিষয়টি মাথায় রেখে অবৈধভাবে চলা যানের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়