সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা করে বিপাকে ভুক্তভোগীরা

আগের সংবাদ

উন্নয়ন ও প্রত্যাশায় ফারাক অনেক : ক্লিন সিটি খ্যাত রাজশাহীর মানুষ অনেক সেবা পান না

পরের সংবাদ

২২ বছরেও শেষ হয়নি বিচার, নিহতদের স্বজন-আহতরা ক্ষুব্ধ : নারায়ণগঞ্জ আ.লীগ অফিসে বোমা হামলা

প্রকাশিত: জুন ১৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি : নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া আওয়ামী লীগ অফিসে বর্বরোচিত বোমা হামলা মামলার বিচার ১০ বছর ধরে ঝুলে আছে নি¤œ আদালতে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মামলাটির তদন্ত শেষ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করতে সময় লেগেছিল ১২ বছর। দীর্ঘ ২২ বছরেও বোমা হামলা মামলার বিচার না পেয়ে ক্ষুব্ধ নিহতদের স্বজন ও আহতরা। তাদের দাবি, ভারতের দিল্লিতে গ্রেপ্তার হওয়ার দুই ভাই মোরসালিন ও মোক্তাকীনকে দেশে ফিরিয়ে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রকৃত দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার।
আজ নারায়ণগঞ্জের ভয়াল ১৬ জুন। ২০০১ সালের এই দিনে চাষাঢ়ায় আওয়ামী লীগ অফিসে বর্বরোচিত বোমা হামলায় প্রাণ হারান ২০ জন। আহত হন সংসদ সদস্য শামীম ওসমানসহ অর্ধশত লোক। দীর্ঘ তদন্ত শেষে মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ২০১৩ সালের ২ মে আদালতে ছয়জনকে আসামি করে বিস্ফোরক ও হত্যা মামলায় আদালতে অভিযোগ দাখিল করে। আসামি করা হয় ভারতে আটক জঙ্গি নেতা দুই ভাই মোরসালিন ও মোত্তাকীন, মুফতি হান্নান, সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর শওকত হাসেম শুকু, যুবদল নেতা শাহাদাত উল্লাহ জুয়েল ও ওবায়দুল হক। এরই মধ্যে অন্য একটি বোমা হামলা মামলায় জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।
ঘটনার দিন চাষাঢ়া আওয়ামী লীগ অফিসে বসে নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন মানুষের সমস্যার কথা শুনছিলেন সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান। দলীয় কার্যালয়ে তৎকালীন নগর ছাত্রলীগের সভাপতি সাইদুল হাসান বাপ্পিসহ দলীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। রাত আটটার দিকে বিকট শব্দে দুটি ভয়াবহ বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে দলীয় কার্যালয়টি দুমড়ে মুচড়ে যায়, আহত ও নিহতদের শরীর খণ্ডবিখণ্ড হয়ে ২০ থেকে ৩০ ফুট দূরে গিয়ে পড়ে। সেই দিনের বিভীষিকাময় দৃশ্যের কথা এখনো ভুলতে পারেন না আহতরা।
এদিকে দীর্ঘ ২২ বছরে বোমা হামলা বিচার না পেয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন নিহত সংগীত শিল্পী নজরুল ইসলামের স্ত্রী হামিদা ইসলাম। তিনি বলেন, এই দুনিয়ায় হয়তো বিচার পাব না। তাই তো আল্লাহর কাছে বিচার দিয়ে রেখেছি। সরকারের কাছে আর এই হত্যার বিচার চাই না। নজরুল মারা যাওয়ার পর কত কষ্ট করে সন্তানদের লালন-পালন করে আসছি, তা কাউকে বোঝাতে পারব না। আমার ছেলে মেয়েরা বাবা ডাকতে পারছে না। এই অভাব সরকার বা কারো পক্ষে পূরণ করার সামর্থ্য আছে? কেউ পারবে না। তাই এ নিয়ে আর কোনো কথা বলতে চাই না।
২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে শেখ হাসিনাকে গ্রেনেড মেরে হত্যাচেষ্টা, উদীচী বোমা হামলা, রমনার বটমূলে বোমা বিস্ফোরণ, গোলালগঞ্জে গির্জায় বোমা বিস্ফোরণসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যে বোমা হামলা হয়েছে তা একই সূত্রে গাথা বলে মনে করেন বোমা হামলায় দুপা হারানো বর্তমান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চন্দন শীল।
তিনি বলেন, ভারতে আটক দুই ভাই মোরসালীন ও মোত্তাকীনকে দেশে ফিরে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে এই বোমা হামলার মূলহোতাদের খুঁজে বের করে শাস্তি নিশ্চিত করার। কারণ এই বোমা হামলা মূল উদ্দেশ ছিল একসঙ্গে আওয়ামী লীগে নেতাদের হত্যা করে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব শূন্য করার। আমার মনে হয়, মুফতি হান্নানসহ যারা এই বোমা হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন তারা শুধু নির্দেশ বা হুকুম পালন করেছেন মাত্র। তাদের পেছনে যে মূলহোতারা রয়েছেন তারা কিন্তু ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন। তাই সরকারে কাছে দাবি করছি, মোরসালিন ও মোত্তাকীনকে দেশে ফিরিয়ে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে মূলহোতাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার।
ন্যক্কারজনক এই বোমা হামলা মামলার বিচার দ্রুত শেষ করার জন্য সকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন মামলার বাদী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট খোকন সাহা। তিনি বলেন, এই মামলাটি দীর্ঘ দিন হয়ে গেছে। বোমা হামলার মামলার দ্রুত বিচার শেষ করার তাগিদ দেন।

নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এডভোকেট মনিরুজ্জামান বুলবুল জানান, চাষাঢ়া আওয়ামী লীগ অফিসে বোমা হামলা মামলাটি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এই মামলায় গত ১০ বছরে ২২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ আরো চার-পাঁচজনের সাক্ষগ্রহণ করা হবে। মামলাটির ধীরগতির কারণ, মামলায় যাদের সাক্ষী করা হয়েছে তাদের অনেককেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আবার মামলার একাধিক তদন্ত কর্মকর্তার হাত বদল হওয়ায় দীর্ঘ সময় লেগেছে। তদন্ত শেষ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করতে। তিনি বলেন, শিগগিরই বাকি সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ করে দ্রুত বিচার শেষ করার চেষ্টা চলছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়