সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা করে বিপাকে ভুক্তভোগীরা

আগের সংবাদ

উন্নয়ন ও প্রত্যাশায় ফারাক অনেক : ক্লিন সিটি খ্যাত রাজশাহীর মানুষ অনেক সেবা পান না

পরের সংবাদ

বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুর : প্রতিবাদে উত্তাল চট্টগ্রাম, গ্রেপ্তার ২৪

প্রকাশিত: জুন ১৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অফিস : চট্টগ্রামে বিএনপির তারুণ্যের সমাবেশে যোগ দিতে যাওয়ার সময় বিএনপির উশৃঙ্খল নেতাকর্মীদের হামলায় মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক দলিল ও বঙ্গবন্ধুর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের স্থিরচিত্র সংবলিত ট্যাম্পার্ড, গøাস ম্যুরাল ভাঙচুরের ঘটনায় চট্টগ্রামের সর্বত্র নিন্দা ও প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠছে রাজপথ। আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠন, ১৪ দল, বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে এই ঘৃণ্য কাজের প্রতিবাদ জানিয়ে সমাবেশ, মিছিল ও নিন্দা বিবৃতি দেয়া হয়েছে। এসব সমাবেশ ও বিবৃতিতে এ ধরনের ধ্বংসাত্মক-স্বাধীনতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করা হয়। পাশাপাশি তাদের সামাজিকভাবে প্রতিহত করারও ডাক দেয়া হয়।
গত বুধবার নগরীর কাজীর দেউড়ি মোড়ে বিএনপি তারুণ্যের সমাবেশে যোগ দিতে যুবদল-ছাত্রদলের ব্যানার নিয়ে মিছিল করে যাওয়ার সময় নগরের জামালখানে স্থাপিত স্বাধীনতার ৫০ বছর উপলক্ষে বানানো কাঁচের তৈরি বঙ্গবন্ধুর দেয়ালচিত্র ভেঙে দেয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। সেখানে স্থাপিত মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক দলিলের রেপ্লিকা, জাতীয় নেতার ছবি সংবলিত ঐতিহাসিক মুহূর্তের চিত্রও বিএনপি নেতাকর্মীরা ভেঙে দেয়। সৌন্দর্যবর্ধনের কাজের আওতায় স্থাপিত নকশা করা নৌকাসহ আরও বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙচুর করা হয়।
এদিকে ভাঙচুরের ঘটনায় নগরীর কোতোয়ালি থানায় ৭৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ২শ থেকে ২৫০ জনের নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে। কোতোয়ালি থানার এসআই ইমরানুস সাজ্জাদ মামলাটি দায়ের করেন। সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এই ঘটনায় এ পর্যন্ত ২৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। নগর পুলিশ জানায়, চান্দগাঁও থানাধীন মৌলভী পুকুরপাড় এলাকা থেকে ৪ জন, কোতোয়ালি থানা পুলিশ ৫ জন এবং চান্দগাঁও থানা, বাকলিয়া থানা ও চকবাজার থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে মোট ২৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি ও চকবাজার থানায় দুটি মামলা হয়েছে। বুধবার দিবাগত রাত ৪টার দিকে নগরীর গোয়ালপাড়া এলাকা থেকে মো. নওশাদ আল জাশেদুর রহমান ওরফে নওশাদ উদ্দিন নশু(৩২) নামে মহানগর ছাত্রদলের এক নেতাকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে নওশাদ জানায়, তারুণ্যের সমাবেশকে কেন্দ্র করে দেশের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক দলিলের স্থিরচিত্র ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ জাতীয় নেতার ছবি সংবলিত ম্যুরাল ভাঙচুরের ঘটনায় সে নেতৃত্ব দেয়। এই ঘটনায় গ্রেপ্তার নওশাদের বিরুদ্ধে নগরীর বিভিন্ন থানায় ১৫টি মামলা রয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার নগরের দামপাড়ায় সিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে নগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপারেশন) আ স ম মাহতাব উদ্দিন বলেন, নগরের কোতোয়ালি থানাধীন জামালখান এলাকায় বিভিন্ন দেওয়ালে অঙ্কিত বঙ্গবন্ধুর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের স্থিরচিত্র সংবলিত ট্যাম্পার্ড, গøাস, ম্যুরাল ভাঙচুরের ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় ৭৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ২শ থেকে ২৫০ জনের নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে। তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রাম কলেজের গেটের সামনে নাশকতার ঘটনায় ৬১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ২শ থেকে ২৫০ জনের নামে চকবাজার থানায় মামলা করা হয়েছে। মামলাটি করেন চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্রলীগ কর্মী সাফায়েত রাজু। নগরের কোতোয়ালি, চকবাজার, বাকলিয়া, চাঁন্দগাও ও মহানগর গোয়েন্দা বিভাগ বুধবার রাতে অভিযান চালিয়ে ২৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
এদিকে, মুক্তিযুদ্ধের প্রামাণ্যচিত্র ও বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুরের প্রতিবাদে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে নগরীর প্রেস ক্লাব চত্বরে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ। সমাবেশে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, একাত্তরের পরাজিত সা¤প্রদায়িক অপশক্তি দেশকে অস্থিতিশীল করার অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধুর ও মুক্তিযুদ্ধের প্রামাণ্যচিত্র ভাঙচুর করেছে। নানা ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতায় বসতে না পেরে বিএনপি এই ঘৃণ্য কাজ করেছে। বিদেশি প্রভুদের ইশারায় দেশের উন্নয়নে প্রতিহিংসায় ভোগা দেশবিরোধী অপশক্তিকে বাংলাদেশের মানুষ ৭১ সালে যেভাবে পরাজিত হয়েছিল ২০২৪ সালেও তার ব্যতিক্রম ঘটবে না।
গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নামে আগুন সন্ত্রাস, মানুষ পুড়িয়ে মারার রাজনীতি, সরকারি ও ব্যক্তিগত সম্পদ ভাঙচুরের রাজনীতি এই চট্টগ্রামে করলে চট্টগ্রামে জনসাধারণ ঘৃণ্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শক্ত হাতে প্রতিহত করবে। মেয়র এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি দেবাশীষ নাথ দেবুর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান আজিজের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি সুজিত দাশ, দেলোয়ার হোসেন ফরহাদ, মনোয়ার জাহান মনি, আজাদ খান অভি, আব্দুর রশিদ লোকমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ মাসুদ খান, দেবাশীষ আচার্য প্রমুখ।
এই ন্যক্কারজনক হামলা ও ভাঙচুরের মাধ্যমে বিএনপির স্বরূপে আত্মপ্রকাশ করেছে বলে মন্তব্য করেছে চট্টগ্রাম মহানগর ১৪ দল। এক বিবৃতিতে ১৪ দল নেতারা উপরোক্ত ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এর বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সকল শক্তির প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান। বিবৃতিতে তারা বলেন, আমরা মনে করি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি এবং তাদের দোসর জামায়াত স্বরূপে আতœপ্রকাশ করতে চায়। জামালখানের ঘটনা তাদের একটি রিহার্সাল বলা চলে। ন্যক্কারজনক এ ঘটনাটিকে কোনোভাবেই বিচ্ছিন্ন ঘটনা ভাবার কোনো অবকাশ নেই।
বিবৃতি দাতারা হলেন- চট্টগ্রাম মহানগর ১৪ দলের সমন্বয়ক ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন, জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক জসিমুদ্দিন বাবুল, জাসদ চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি অভীক ওসমান, ওয়ার্কার্স পার্টি চট্টগ্রাম জেলা সভাপতি এডভোকেট আবু হানিফ, সাধারণ সম্পাদক শরীফ চৌহান, ন্যাপ কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি গাজী আলমগীর কবীর, সাংগঠনিক সম্পাদক মিটুল দাশগুপ্ত, তরীকত ফেডারেশনের কাজী আহসানুল মোরশেদ কাদেরী, গণআজাদী লীগ চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির আহ্বায়ক মাওলানা নজরুল ইসলাম আশরাফী, সাধারণ সম্পাদক মো. খোরশেদ আলম, ন্যাপ মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ উল্লাহ মজুমদার, জাতীয় পার্টি (জেপি) সাধারণ সম্পাদক ডা. বেলাল মৃধা, সাম্যবাদী দলের আহবায়ক অমূল্য বড়ুয়া, গণতন্ত্রী পার্টির স্বপন সেন প্রমুখ।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ (হলুদ দল) বৃহস্পতিবার হলুদ দলের আহ্বায়ক প্রফেসর ড. মো. সেকান্দর চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। বিবৃতিতে তারা বলেন, যুবদলের সমাবেশে যাওয়ার সময় তাদের উগ্র কর্মীদের এ ধরনের হামলা চরম ধৃষ্টতা ও স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন, যা পুরো জাতিকে হতভম্ব ও ব্যথিত করেছে। এ ধরনের হামলা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। জাতির পিতার ম্যুরাল ভাঙচুর কেবল স্বাধীনতা ও বাংলাদেশ বিরোধীরাই করতে পারে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়