প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকদের আন্দোলন দুদিন স্থগিত : প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাওয়ার আশ্বাস বিএসএমএমইউ উপাচার্যের

আগের সংবাদ

আনন্দে পাঠ উৎসবে মূল্যায়ন : ষষ্ঠ ও সপ্তমে চলছে ‘ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন উৎসব’, ঈদুল আজহার পর মূল্যায়নের বিশ্লেষণ

পরের সংবাদ

দরিদ্র পরিবারে তিন প্রতিবন্ধী চিকিৎসা যেন সোনার হরিণ

প্রকাশিত: জুন ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এইচ এম নাহিদ, ভোলা থেকে : তিন ছেলেকে নিয়ে সুখের সংসার ছিল ইয়ানুর বেগমের। বড় ছেলে ৯ বছর বয়সেই অজানা রোগে আক্রান্ত হলে সব কিছু তছনছ হয়ে যায়। এর পর এক এক করে ৩টি ছেলেই বিকলাঙ্গ হতে শুরু করে। দাঁত পড়ে দাঁত উঠলেই এই রোগের উপসর্গ দেখা দেয়।
স্বামী আবুল কালাম নদীতে মাছ ধরেন। মেঘনাই একমাত্র আয়-রোজগারের উৎস। দিনের এক বেলা খেলে আরেক বেলা খাবার থাকে না ঘরে। ৬ মাসে একবার সরকারি ভাতা জোটে। আবার কখনো জোটেও না। প্রতিবন্ধী হওয়ার এ সংকট থেকে পরিবারটি মুক্তির পথ খুঁজছে। সামনের দিনগুলোতে স্বাভাবিক শরীর নিয়ে বেঁচে থাকার বড় ইচ্ছা তাদের। প্রয়োজন উন্নত চিকিৎসা। কিন্তু যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায় চিকিৎসা তাদের কাছে সোনার হরিণের মতো।
ভোলা সদর উপজেলার পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ভাঙ্গতির খাল এলাকার মুন্সী বাড়ির আবুল কালাম মাঝির তিন ছেলে সাকিল (১৭), শরীফ (১৫) ও হাসান (৯) আর দশজনের মতো স্বাভাবিকভাবেই জীবনযাপন করছিল।
খেলাধুলা, স্কুলে পাঠদান চলছিল নিয়মিত। মা-বাবার স্বপ্ন ছিল অনেক। কিন্তু সন্তান ৩টির বয়স যখন ৯ বছর অতিক্রম করে তখনই শরীরে বাসা বাঁধে অজানা রোগ। ডাক্তার, কবিরাজ ধরে কোনো কূল-কিনারা পাচ্ছেন না। ঢাকা পঙ্গু হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছে, উন্নত চিকিৎসা হলে ভালো হয়ে যাবে। কিন্তু নুন আনতে পান্তা ফুরানো পরিবারটির উন্নত চিকিৎসার খরচ জোগাড়ের মতো কোনো অবলম্বনই নেই।
অসহায় ইয়ানুর বেগম বলেন, সব কিছু অন্ধকার দেখি, স্বামী নদীতে জাল ফেলে কিছু পেলেই আমাদের মুখে আহার জোটে। আর চিকিৎসা তো স্বপ্ন। শুনেছি এলাকার মেম্বার-চেয়ারম্যানদের কাছে অনেক দান-খয়রাত আসে। অনেকবার গিয়েছি। উল্টো গালমন্দ করে বের করে দেয়। এখন কারো কাছে সাহায্য চাইতেও ভয় লাগে।
প্রতিবন্ধী সাকিল এখনো আকাশ ভরা স্বপ্ন দেখেন, একদিন তাদের ঘরে এক রাজা এসে সাহায্য করবে। তাদের এ গøানি মুছে যাবে সেদিন। সবাই আবার তাদের নাম ধরে ডাকবে। ল্যাংড়া বলে কেউ আর ডাকবে না। আবার দৌড়ে স্কুলে যাবে, পেট ভরে ভাত খেতে পারবে।
ভোলা অটিস্টিক ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী স্কুলের শিক্ষক মোশারেফ লাবু বলেন, প্রতিবন্ধী শিশুদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারের ঋণসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেয়া হলে এই বিশেষ শিশুরা সঠিক পরিচর্যায় সামাজিকভাবে বেঁচে থাকার অবলম্বন খুঁজে পাবে।
ভোলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-সহকারী পরিচালক কাজী গোলাম কবির ভোরের কাগজকে বলেন, আমরা সাধ্যমতো সব ধরনের সহযোগিতা করব। আমরা সমাজসেবার আওতায় বিষয়টি দেখভাল করব এবং নিয়মিত ভাতা পাওয়ার ব্যবস্থা করব।
এছাড়া ওই পরিবার থেকে জেলা সমাজকল্যাণ পরিষদে আবেদন করা হলে তাদের আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থা করে দেবেন বলে আশ্বাস দেন তিনি।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন ছোটন এই প্রতিবেদককে বলেন, বিষয়টি এতদিন আমার জানা ছিল না, আপনাদের মাধ্যমে জানলাম। সামনে ঈদ, পরিষদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা যাতে তারা পায় আমি সেই ব্যবস্থা করার চেষ্টা করব। এছাড়া আমার ব্যক্তিগত তহবিল থেকেও তাদের সাহায্য করব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়