প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকদের আন্দোলন দুদিন স্থগিত : প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাওয়ার আশ্বাস বিএসএমএমইউ উপাচার্যের

আগের সংবাদ

আনন্দে পাঠ উৎসবে মূল্যায়ন : ষষ্ঠ ও সপ্তমে চলছে ‘ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন উৎসব’, ঈদুল আজহার পর মূল্যায়নের বিশ্লেষণ

পরের সংবাদ

চারঘাট উপজেলার জয়পুর নি¤œমাধ্যমিক বিদ্যালয় : বিদ্যালয় আছে, শিক্ষার্থী নেই

প্রকাশিত: জুন ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মাইনুল হক সান্টু, চারঘাট (রাজশাহী) থেকে : ঘড়ির কাঁটায় সকাল ১০টা পেরিয়ে গেলেও শিক্ষক, শিক্ষার্থী কারোরই দেখা নেই। প্রতিটি ক্লাস রুমে ঝুলছে তালা। পরে অবশ্য দেখা মিলল দুজন শিক্ষকের। কথা বলার একপর্যায়ে ওই শিক্ষকদের মধ্যে একজন ফোন দিয়ে বসলেন- স্যার, তাড়াতাড়ি বিদ্যালয়ে আসেন, কারা যেন আসছেন। এরপর হন্তদন্ত হয়ে এলেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। তখন সকাল সাড়ে ১০টা। আর পুরো বিদ্যালয়জুড়ে মাত্র দুই শিক্ষার্থীর দেখা মিলল বেলা পৌনে ১১টায়।
গত সোমবার সকালে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার ইউসুফপুর ইউনিয়নের জয়পুর নি¤œমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে। একটি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমন দুর্দশায় হতবাক ও ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এলাকাবাসীর পক্ষে জেলা প্রশাসক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরিচালক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও চারঘাট উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন আব্দুল হাদী নামে এক ব্যক্তি।
জানা গেছে, ১৯৯৫ সালে জয়পুর নি¤œমাধ্যমিক বিদ্যালয়টি স্থাপন করা হয়। এরপর ২০০৪ সালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত হয়। তবে বিদ্যালয়টিতে কাক্সিক্ষত শিক্ষার্থী নেই।
সরজমিনে দেখা গেছে, বিদ্যালয়টির অবকাঠামো দেখে বোঝার উপায় নেই এটি একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। নেই সাইনবোর্ডও। কয়েকটি ক্লাস রুমে তালা ঝুললেও একটিতে দরজা ভাঙা, আরেকটিতে দরজাই নেই। সঠিক সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি খোলা ও বন্ধ করা হয় না। বিদ্যালয়টিতে সঠিক নিয়মে জাতীয় পতাকাও উত্তোলন করা হয় না।
অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষার্থী না থাকলেও বেতন-ভাতা ঠিকই নিচ্ছেন শিক্ষকরা। এরই মধ্যে নিয়োগ দিয়েছেন নৈশপ্রহরী ও পরিছন্নতাকর্মী। যে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীই নেই, সেখানে কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে লাভ কী? স্থানীয় মিলন আলী, আখতার আলী, হোটেল ব্যবসায়ী মিন্টুসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, বিদ্যালয় থেকে কেন শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে গেল সে বিষয়ে শিক্ষকদের কোনো মাথাব্যথা নেই। মূলত বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হয়ে গেছে, শিক্ষকরা বেতন-ভাতা ঠিকমতো পাচ্ছে, তাই শিক্ষার্থী না থাকলে তাদের কিছু যায় আসে না। এ কারণেই এ বিদ্যালয়ে সন্তানদের ভর্তি করাতে চান না তারা।
শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম কেন জানতে চাইলে ওই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সাদেকুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা কিছু সময়ের মধ্যে চলে আসবে। আজ (সোমবার) বিদ্যালয়ে আসতে তাদের দেরি হচ্ছে কেন বুঝতে পারছি না। তবে ২০১৯ সালে একজন সহকারী শিক্ষক এবং ২০২১ সালে প্রধান শিক্ষক আফরোজা সরকার মারা যান। এরপর থেকেই বিদ্যালয়টিতে শিক্ষক সংকট রয়েছে। পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকার কারণেই অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের এই বিদ্যালয়ে ভর্তি করান না।’ এ সময় শিক্ষার্থীদের হাজিরা খাতা দেখতে চাইলে তাতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক।
মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি চারঘাট উপজেলা শাখার সভাপতি ইমদাদুল হক বলেন, জয়পুর নি¤œমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কেন শিক্ষার্থী নেই তা সমাধানে উদ্যোগ নেয়া হবে।
জয়পুর নি¤œমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিষয়ে চারঘাট উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সোহেল রানা বলেন, আমরা তদন্ত করছি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। শিক্ষা বিষয়ে কোনো ধরনের ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই।
চারঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, জয়পুর নি¤œমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ পেয়েছি। শিক্ষা বিষয়ে কারো কোনো ধরনের অনিয়ম সহ্য করা হবে না। তদন্ত সাপেক্ষে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়