হাসপাতালে খালেদা জিয়া

আগের সংবাদ

অপরাধের স্বর্গরাজ্য রোহিঙ্গা ক্যাম্প

পরের সংবাদ

রং-সুতার দাম ও উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি : তাঁতসমৃদ্ধ সিরাজগঞ্জে বন্ধ ১ লাখ কারখানা

প্রকাশিত: জুন ১৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বদরুল আলম দুলাল, সিরাজগঞ্জ থেকে : রং ও সুতার দাম বৃদ্ধি এবং লোডশেডিংয়ের কারণে সিরাজগঞ্জের তাঁত কারখানাগুলোতে ধস নেমেছে। এই সংকটে বহু কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। প্রায় চার লাখ শ্রমিক এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। সুতার বাজারমূল্য বাড়ার সঙ্গে কাপড় উৎপাদনে খরচ বেড়েছে। যার কারণে এই ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে তাঁত মালিকদের। তাঁত সমৃদ্ধ এই জেলায় ৩ লাখ তাঁত কারখানা ইতোমধ্যে ১ লাখ বন্ধ হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ হ্যান্ডলুম এন্ড পাওয়ার লুম ওনার্স এসোসিয়েশনের নেতারা।
জানা যায়, ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে কারখানা মালিকরা ডিজেল চালিত জেনারেটরের সাহায্যে বিদ্যুৎ দিয়ে তাঁত কারখানা সচল রাখার চেষ্টা করেন। তবে ডিজেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় তাও সম্ভব হচ্ছে না। তাঁত মালিকদের বিদ্যুৎ বিলও দিতে হচ্ছে, আবার জেনারেটরও চালাতে হচ্ছে। এতে শাড়ি, লুঙ্গি ও গামছা উৎপাদনে অতিরিক্ত টাকা খরচ হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে তাঁত শিল্পের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকরা পরিবার নিয়ে কোনোমতে দিন কাটাচ্ছেন।
বেলকুচি উপজেলার তাঁত মালিক হাজী শাহীন প্রামাণিক বলেন, বর্তমানে আমরা দুর্বিষহ জীবনযাপন করছি। দিনের বেলায় ৩-৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। এ সময় তেল, ডিজেল দিয়ে জেনারেটরের সাহায্যে কাপড় উৎপাদন করতে গেলে প্রচুর খরচ বেড়ে যায় এবং শ্রমিক থাকে না। বর্তমানে কাপড় ব্যবসায়ীরা লোকসানে রয়েছেন। এরপর শ্রমিক সংকট রয়েছে। শ্রমিকের অভাবে কাপড় উৎপাদন করা যাচ্ছে না।
সাউথ এশিয়া হাইটেক সাটেল ইন্ডাস্ট্রিজের ম্যানেজার (আমদানি-রপ্তানি) অনিমেষ সরকার বলেন, আমাদের ৪০টি তাঁত মাত্র দুজন শ্রমিক কাজ করছে। আমাদের লুঙ্গি উৎপাদন হচ্ছে না শ্রমিকদের বেতন দেব কি করে। শ্রমিকদের দাবি, তাদের মজুরি বাড়াতে হবে। কিন্তু বাজারে রং-সুতার যে দাম, তাতে উৎপাদন খরচ উঠছে না, ফলে মালামাল বিক্রি করতে পারছি না। শ্রমিকদের মজুরি কীভাবে বাড়াব।
তামাই গ্রামের শ্রমিক শাহ আলম বলেন, তাঁত শিল্পের অবস্থা ভালো না। ঈদের আগ থেকেই মহাজনের কেনাবেচা ভালো না। মহাজন কাপড় বেচতে পারেন না এ জন্য কারখানার শ্রমিকদের কাজে আসতে নিষেধ করেছেন। প্রতিদিন ৭০০-৮০০ টাকা কাজ হয়েছে। এখন ৩০০-৪০০ টাকা হয় না। বিল চাইলে বলেন, কাপড় বেচতে পারিনি। আমরা কি করি। কীভাবে সংসার চলে।
আরেক তাঁত শ্রমিক শহিদুল ইসলাম জানান, তিনি যে কারখানায় কাজ করেন, সেখানে ৩০টি তাঁতের বেশির ভাগই বন্ধ হয়ে গেছে। বেকার হয়ে পড়েছে অনেক শ্রমিক। মাত্র কয়েকজন শ্রমিক এখন ১০টি তাঁত চালাচ্ছে। তবে ঈদের পরে বাকি তাঁতগুলোও বন্ধ হয়ে যাবে। তাঁতগুলো বন্ধ হয়ে গেলে বেকার হয়ে পড়ার পর কীভাবে সংসার চালাবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে এই দরিদ্র তাঁত শ্রমিকরা।
বাংলাদেশ হ্যান্ডলুম এন্ড পাওয়ার লুম ওনার্স এসোসিয়েশনের জেলা শাখার সভাপতি হাজী বদিউজ্জামান বলেন, এই জেলাকে তাঁত কুঞ্জু হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। জেলায় ৩ লাখ তাঁত রয়েছে। এই তাঁতে আমরা শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা তৈরি করে থাকি। করোনার সময় তাঁতের ব্যবসার অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরবর্তীতে আশা ছিল আমাদের ব্যবসাটা ভালো হবে। কিন্তু করোনার পরে তাঁতশিল্পের জন্য যেসব কাঁচামাল রয়েছে রং, সুতা, তুলা সবকিছুর দাম দ্বিগুণ হয়েছে। যার কারণে কাপড় উৎপাদনে খরচ বেড়েছে। তিনি বলেন, অনেক শ্রমিক ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় চলে গেছে। অনেকে দেশের বাইরেও চলে গেছে। যে কারণে শ্রমিক সংকট চলছে। আরেকটি কারণ হচ্ছে, ঘন ঘন লোডশেডিং। সবকিছু মিলেই আজ তাঁতশিল্প ধ্বংসের পথে। জেলায় ৩ লাখ তাঁতের মধ্যে ১ লাখ তাঁত বন্ধ হয়ে গেছে। এর মূল কারণ শ্রমিক সংকট ও কাঁচামালের দাম বেশি। সরকার যদি তাঁতশিল্পকে বাঁচাতে চায় তাহলে তাঁত মালিকদের জন্য তাঁত ব্যাংক করা প্রয়োজন। যদি এই ব্যাংকের মাধ্যমে তাঁতিদের স্বল্প সুদে তাঁত লোন দেয়া হয়, তাহলে এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব। না হলে এই শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড বেলকুচি-চৌহালী উপজেলার লিয়াজোঁ অফিসার তন্বী হোসেন বলেন, আমরা তাঁতিদের স্বাবলম্বী করতে তাদের লোন দিয়ে থাকি। আগে আমাদের লোন ছিল ১৩ হাজার টাকা। এখন আমরা সেই লোন বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত দিচ্ছি। ১৯টি তাঁত যাদের আছে তারা প্রান্তিক তাঁতি। তাদের জন্য আমরা লোনের ব্যবস্থা করেছি। তাঁতিদের আমরা প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। দুর্যোগ সময়ে আমরা তাদের সহযোগিতা করে থাকি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়