সংসদে বিল উত্থাপন : আমানত সুরক্ষা ট্রাস্ট তহবিল গঠন করবে বাংলাদেশ ব্যাংক

আগের সংবাদ

খুলনা-বরিশালে ‘উন্নয়ন’ ম্যাজিক : খুলনার উন্নয়ন ভাবনা ও ব্যক্তি ইমেজেই খালেকের বাজিমাত

পরের সংবাদ

তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর কোটি টাকার সম্পদ

প্রকাশিত: জুন ১৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সাইমুম সাব্বির শোভন, জামালপুর থেকে : জামালপুরে অবসরপ্রাপ্ত এক তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি তার সম্পদের তালিকা করে দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দিয়েছেন এলাকাবাসী। এতে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানানো হয়েছে।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, জামালপুর সদর উপজেলার শরিফপুর ইউনিয়নের পিঙ্গলহাটি গ্রামের মৃত শমসের আলীর ছেলে শরাফত আলী শহরের দক্ষিণ কাচারীপাড়ার ফিশারি রোডের বাসিন্দা। শরাফত আলী একজন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী ছিলেন। তিনি ২০১৪ সালে সর্বশেষ কর্মস্থল মাদারগঞ্জ সাবরেজিস্ট্রারের কার্যালয়ের অফিস সহকারী পদ থেকে অবসরে যান। সেই সময় তার মাসিক বেতন ছিল ২৮ থেকে ২৯ হাজার টাকা।
অভিযোগের সূত্র ধরে সরজমিন অনুসন্ধান করে জানা যায়, শহরের দক্ষিণ কাচারীপাড়া এলাকার ফিশারি রোডে খেজুরতলা মসজিদের সামনে শরাফত আলীর চার তলা একটি বাড়ি রয়েছে।
যেটির দ্বিতীয় তলায় তিনি নিজে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন এবং বাকিগুলো ভাড়া দিয়েছেন। একই এলাকার আজাদ ডাক্তারের মোড় থেকে ফকির বাড়ির দিকে রাস্তার পূর্বপাশে চার শতাংশের একটি প্লট রয়েছে। এই প্লটটি তিনি একজন ব্যবসায়ীর কাছে ভাড়া দিয়েছেন। এছাড়া তার গ্রামের বাড়ি পিঙ্গলহাটিতে প্রায় ৩০০ শতাংশ কৃষিজমি রয়েছে। এর মধ্যে ১০০ শতাংশ পৈত্রিক সূত্রে পেয়েছেন। বাকি জমি তিনি চাকরিকালে ক্রয় করেছেন বলে জানিয়েছেন তার স্বজনরা। এদিকে অভিযোগপত্রে ফিশারি রোডে দুটি দোতলা বাড়ির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সেই বাড়ি দুটিতে তার মেয়েরা পরিবার নিয়ে বসবাস করেন বলে জানায় এলাকাবাসী। তবে বাড়ি দুটির নকশা ও আকৃতি একই। এছাড়া সম্প্রতি চার তলা বাড়ির পেছনে ৫ শতাংশ জমি ক্রয় করেছেন শরাফত আলী। সব মিলিয়ে সরজমিন অনুসন্ধান করে শরাফত আলীর কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তির খোঁজ পাওয়া যায়।
এসব বিষয়ে শরাফত আলী বলেন, খেজুরতলা মসজিদের সামনে যে চার তলা বাড়ি রয়েছে, সেটির জমি তার স্ত্রীর নামে। তার শ্বশুরবাড়ি থেকে এই জমি পেয়েছেন। পরে ১৯৯৬ সাল থেকে ধীরে ধীরে চার তলার নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা হয়। যে প্রাইভেট কারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেটি তার নামে নয়, অন্যজনের নামে। তবে তিনি মাঝেমধ্যে যাতায়াতের জন্য প্রাইভেট কারটি ব্যবহার করেন। আর ফকিরপাড়া রোডে যে চার শতাংশ জমির প্লট রয়েছে সেটি তিনি ২০০৯ সালে ক্রয় করেছেন। তার মেয়ের জামাইয়েরা দোতলা দুটি ভবন নির্মাণ করেছেন বলে দাবি তার।
শরাফত আলী আরো বলেন, স্থানীয় একটি মসজিদের ব্যবস্থাপনা কমিটি নিয়ে তার সঙ্গে কয়েকজনের দ্ব›দ্ব থাকায় তাকে হয়রানি করতে তার নামে মিথ্যা ও ভুল অভিযোগ করেছেন কতিপয় ব্যক্তি।
তবে এত কম বেতনে কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক হওয়া সম্ভব কিনা এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি শরাফত আলী।
জামালপুর জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, শরাফত আলী অত্যন্ত চতুরতার সঙ্গে তার সম্পদগুলো স্ত্রী ও মেয়েদের নামে দেখিয়েছেন- যাতে তিনি ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকেন। যার নামেই সম্পদ থাকুক, তাদের আয়ের উৎসগুলো খতিয়ে দেখা দরকার। তাহলেই থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে। একজন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী তার চাকরিকালে যে বেতন পান তাতে তার সংসার পরিচালনা করাই কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। সেখানে কোটি কোটি টাকার সম্পদ অর্জন মানেই অসৎ উপায়ে আয়।
এসব বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুর্নীতি দমন কমিশনের একজন কর্মকর্তা বলেন, আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ এলে আমরা অভিযোগটি প্রধান কার্যালয়ে পাঠাই। এরপর সেখানে যাচাই-বাছাইয়ের পর তদন্ত করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়। পরে আমরা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করি। তবে শরাফত আলীর বিষয়ে অভিযোগটি আমরা এখনো হাতে পাইনি। এটি হাতে পেলে প্রধান কার্যালয়ে পাঠাব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়