শাহজালালে ১২ কোটি টাকার কোকেনসহ ভারতীয় গ্রেপ্তার

আগের সংবাদ

খুলনায় খালেকের হ্যাটট্রিক, বরিশালে খোকন : খুলনায় শান্তিপূর্ণ ভোট, উপস্থিতি কম > তালুকদার আবদুল খালেক ১,৫৪,৮২৫ ভোট, আবদুল আউয়াল ৬০,০৫৪ ভোট

পরের সংবাদ

অংশীদার

প্রকাশিত: জুন ১২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রুমার কোনো আবদার ফেলতে পারেন না হেদায়েত উল্লাহ। মা মরা মেয়েটার দিকে তাকালে দুঃখে যে তার বুকটা কেঁপে ওঠে। ছয় বছর বয়সে মাকে হারায় রুমা। শাহানা বেগমের মৃগী রোগ ছিল। ভাদ্রের তালপাকা দুপুরে বাড়ির পেছনের পুকুরে ভেসে উঠেছিল হতভাগিনীর লাশ। সেই বেদনাময় দৃশ্যের কথা ভাবতে চান না হেদায়েত উল্লাহ। স্ত্রী বিয়োগের ব্যথায় অকূল পাথারে পড়লেন যেন। ছোট্ট রুমাকে জড়িয়ে ধরে বেলা-অবেলায় কাঁদতেন কেবল। এক সময় রুমার জন্য নতুন মা নাসিমা বেগমকে ঘরে আনেন হেদায়েত উল্লাহ। মা মরা রুমার মিষ্টি মুখটার দিকে তাকিয়ে প্রথমে ভারি মায়া জন্মেছিল নাসিমা বেগমের মনে। কিন্তু দুই বছর পর নিজের গর্ভজাত মেয়ে আঁখি দুনিয়াতে এলে রুমার প্রতি আদর-মমতার ঘাটতি দেখা দেয়। ততদিনে সৎমায়ের অনাদরের সঙ্গে পরিচিত হতে হতে রুমাও চিনতে-জানতে শুরু করে নিষ্ঠুর এই দুনিয়ায় সম্পর্কের জটিলতম রহস্যগুলো। সৎমায়ের অবজ্ঞা প্রথমে হজম করতে পারত না মেয়েটা। দুয়ারের পিছে মুখ লুকিয়ে কাঁদত। কাউকে বলতে পারত না মনের অভিপ্রায়ের কথা। একটা সময় সবকিছু ভাগ্যের পরিণতি ভেবে মেনে নেয় ওইটুকুন বয়সের কিশোরী রুমা। তবে হেদায়েত উল্লাহ মেয়ের দুঃখ টের পেতেন। নাসিমা বেগমকে শাসন করতে গেলে সংসারে কেলেঙ্কারি শুরু হয়ে যেত বলে বেশির ভাগ সময় নীরবতা পালন করা ছাড়া আর কোনো কিছুই করার ছিল না।
আঁখি দিন দিন বড় হতে থাকে। সৎবোন হলেও আঁখির প্রতি কোনো অভিযোগ নেই রুমার। বরং দুই বোন যেন হরিহর আত্মা। বড় বোন রুমাকে যথেষ্ট মান্য করে আঁখি। গান গাইবার প্রতিভা আছে তার। রুমা গানের আবদার করলেই আঁখি গলা ছেড়ে গাইতে থাকে। দুই বোনের এমন মধুর সম্পর্ক দেখে হেদায়েত উল্লাহ আড়াল থেকে তৃপ্তির হাসি দিলেও নাসিমা বেগমের কাছে এই সম্পর্কের বিশেষ প্রশংসা কখনোই ছিল না। রাতে বড় বোনের সঙ্গে একই বিছানায় ঘুমাবার জন্য আঁখি যখন জোরালো আবদার তুলত, নাসিমা বেগম তখন মেয়ের আবদারকে পরোয়া না করে তিক্ত গলায় বলতেন, ‘কারো সঙ্গে ঘুমোতে হবে না। তুই পশ্চিমের রুমে একা ঘুমাবি।’
হেদায়েত উল্লাহ বলতেন, ‘ও যখন বোনের সঙ্গে ঘুমাতে চাইছে, তুমি বাধা দাও কেন?’ তাতেই নাসিমা বেগম বজ্রকণ্ঠে স্বামীকে জবাব দিতেন, ‘সৎবোনের সঙ্গে এত ভাব করতে নেই। শত্রæতা করে রুমা যদি আমার মেয়েকে গলা টিপে মেরে ফেলে!’
পাশের ঘর থেকে বাবা-মায়ের এমন বিষমাখা কথা ঠিকই রুমার কানে আসত। মনে মনে আন্দোলিত হলেও প্রতিবাদ করার অভিপ্রায় হতো না। সবকিছুকে নিজের ভাগ্যের রেখা বলেই গণ্য করেছে।
রুমা খেয়াল করল, বাবা যদি তার জন্য হাট-বাজার থেকে কোনো কিছু নিয়ে আসেন, নাসিমা বেগম মেয়ে আঁখির ভাগেরটাও দাবি করে বসেন। জিলাপি রুমার ভীষণ প্রিয়। প্রায়ই হাট থেকে বাবা তার জন্য জিলাপি নিয়ে আসেন। পলিথিনের মোড়ানো জিলাপিগুলো রুমার হাতে তুলে দিলে স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে নাসিমা বেগম বলেন, ‘আমার মেয়ের ভাগের জিলাপি কই?’
সেই থেকে হেদায়েত উল্লাহ রুমার জন্য যখন যা কিনেছেন, আঁখির জন্যও তা কিনতে ভুল করেননি। নয়তো স্ত্রীর কাছে তাকে যে দাঁতভাঙা কৈফিয়ত দিতে হবে। প্রতিবার ঈদে রুমার জন্য যে দরের জামা কিনেন, আঁখির জন্যও তাই করেন।
নিঃসঙ্গ বিকালগুলো এখন বড়ই বিতৃষ্ণা লাগে রুমার। তাই সে ঠিক করেছে রোজ বিকালে টিউশনি করবে। পাড়ার প্রাইমারি পড়–য়া কিছু শিক্ষার্থীও পেয়ে গেল, যারা রোজ বিকালে রুমার কাছে প্রাইভেট পড়তে আসে। তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য রুমার একখানা মোবাইল দরকার পড়ল। কথাটা জানাতেই নিরাশ করেননি বাবা, বরং আশ্বাস দিলেন। সাত দিন পর বাজার থেকে মেয়ের জন্য কিনে আনলেন ঝকঝকে একখানা সাশ্রয়ী দামের এন্ড্রয়েড সেট। রুমার হাতে সেটটি তুলে দেয়ার পর হেদায়েত উল্লাহ নিজের ঘরে এলে নাসিমা বেগম জোর আপত্তি তুললেন আঁখির জন্যও মোবাইল কিনে দেয়ার। হেদায়েত উল্লাহ বিরক্ত হয়ে বললেন, ‘আঁখির মোবাইলের কাজ কী!’ নাসিমা বেগমের জবাব, ‘তা জানি না, কিন্তু তোমার মেয়ের মতো আমার মেয়েও একটা মোবাইলের অংশীদার।’ হেদায়েত উল্লাহ স্ত্রীর কথাকে পাত্তা দেন না। কিন্তু থেমে থাকেন না চতুর নাসিমা বেগম। আঁখির জন্য একটা মোবাইল উদ্ধারের প্রচেষ্টায় স্বামীর সঙ্গে বিবাদ শুরু করেন। শেষ পর্যন্ত পরাস্ত হয়ে হেদায়েত উল্লাহ আঁখির জন্যও একটি মোবাইল কিনতে বাধ্য হলেন। মোবাইল পেয়ে আঁখি যেন হাতে আকাশের চাঁদ পেল আর সে দৃশ্য দেখে দূর থেকে মুখ টিপে হাসলেন নাসিমা বেগম।

২.
রুমা আর আঁখির এখন মোবাইল আছে। স্টুডেন্টদের অভিভাবকদের সঙ্গে দু-চারটা কথা বলা ছাড়া রুমার মোবাইলে সে রকম কাজ না থাকলেও আঁখি যথেষ্ট সময় দেয় মোবাইলে। ইতোমধ্যে ফেসবুক আইডি খুলে সে হাজার জনের ভার্চুয়াল ফ্রেন্ডে পরিণত হয়েছে। সেসব ভার্চুয়াল ফ্রেন্ড প্রায়ই আঁখির জন্য গিফট পাঠায় দেখে গর্বে বুক ভরে যায় নাসিমা বেগমের।
একদিন দুপুর গড়িয়ে বিকাল নামে। বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা। আঁখি কলেজ থেকে ফেরে না। দুশ্চিন্তা বাড়ে নাসিমা বেগমের। আঁখিকে বারবার ফোন দেয়, কিন্তু সংযোগ পায় না। আঁখির ফোন বন্ধ।
মাগরিবের পর রুমা দৌড়ে আসে নাসিমা বেগমের রুমে। হাতে একটা চিঠি। আঁখির ঘরে পাওয়া গেছে। চিঠিতে আঁখির লেখাগুলো পড়ছেন নাসিমা বেগম, ‘মা, আমাকে তোমরা ক্ষমা করো। আমি চলে গেলাম নোয়াখালীর আমিশাপাড়াতে। ওখানে আহাদ থাকে, যার সঙ্গে আমার ছয় মাসের প্রেম। পরিচয়টা আমাদের ফেসবুকে। ভালো থেকো তোমরা সবাই।’
নাসিমা বেগম চিৎকার দিয়ে কাঁদতে লাগলেন। সর্বনাশা মোবাইল কিনে না দিলে নিশ্চয়ই আঁখি এই কলঙ্ক দিয়ে যেত না বংশে। রুমাকে মোবাইল দেয়াটা সহ্য হয়নি বলে স্বামীর সঙ্গে বিবাদ করে আঁখিকে অংশীদার দাবি করে মোবাইল কিনিয়ে ছেড়েছেন। আজ আঁখির কর্মকাণ্ড যেন উচিত বিচার হয়ে তাকে উচিত শিক্ষা দিয়ে গেল। কিছু বিচার প্রকৃতি ছাড়া কেউ করতে পারে না। কখনোই না।

জোবায়ের রাজু : আমিশাপাড়া, নোয়াখালী

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়