পেঁয়াজ-সবজির দামে স্বস্তি, মাছ চড়া

আগের সংবাদ

ভোটের জন্য প্রস্তুত খুলনা কার ভাগ্যে ছিঁড়বে শিকে

পরের সংবাদ

মাছ চাষে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে ‘কার্প ফ্যাটেনিং’

প্রকাশিত: জুন ১১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মর্তুজা ফারুক রুপক, মেহেরপুর থেকে : ‘কার্প ফ্যাটেনিং’ পদ্ধতিতে মাছ মোটাতাজা করে লাভবান হচ্ছেন মেহেরপুরের মৎস্যচাষিরা। জেলার মৎস্যচাষিদের ভাগ্য বদলের মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে কার্প ফ্যাটেনিং। সাধারণ পদ্ধতির চেয়ে কার্প ফ্যাটেনিং পদ্ধতিতে স্বল্প সময়ে তিনগুণ বেশি মাছ উৎপাদন হয় বলে চাষিদের দাবি। এতে বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হচ্ছেন শত শত পুকুরমালিক। পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় কার্যক্রমটি বাস্তবায়ন করছে বেসরকারি সংস্থা মেহেরপুরের পলাশীপাড়া সমাজ কল্যাণ সমিতি ।
জানা গেছে, সারাদেশে সমন্বিত কৃষি ইউনিটভুক্ত মৎস্য খাতের বিপ্লব ঘটাতে পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন ২০১৪-১৫ অর্থবছরে একটি প্রকল্প চালু করে। প্রকল্পটি মেহেরপুর অঞ্চলে বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় বেসরকারি সংস্থা পলাশীপাড়া সমাজ কল্যাণ সমিতি। জেলায় মোট ১৩৪টি প্রদর্শনীর মাধ্যমে কার্প ফ্যাটেনিং পদ্ধতিতে মাছ মোটাতাজাকরণ শুরু করেন মৎস্যচাষিরা। সুফলভোগীদের মাঝে মাছ চাষের বিভিন্ন উপকরণ বিতরণের পাশাপাশি চাষিদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেয়া হয়। আর্থিক সহায়তাসহ পরামর্শ নিয়ে মাছ মোটাতাজাকরে অধিক মুনাফা আয় করে সাবলম্বী হয়েছেন অনেকেই।
মেহেরপুর জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, মাছ চাষে মেহেরপুর স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি জেলা। জেলায় ছোট বড় ৯০৬৫ জন মৎস্যচাষি আছে। এসব চাষিরা প্রতি বছর ১৩ হাজার ৫৯০ টন মাছ উৎপাদন করে। জেলায় মাছের চাহিদা রয়েছে ১৩ হাজার ৯৯৫ টন। জেলায় পুকুর রয়েছে ৫ হাজার ৩৬৫টি। এর মধ্যে শুধু গাংনী উপজেলাতেই পুকুর রয়েছে ৩ হাজার ৭১৩টি। মৎস্যচাষি রয়েছে ৮ হাজারেরও অধিক। ৬ হাজার ২২১ টন মাছ শুধুমাত্র গাংনী উপজেলাতেই উৎপাদন হয়ে থাকে। মৎস্য উৎপাদনে পিকেএসএফের আর্থিক সহায়তা প্রকল্পটি বড় ভূমিকা রেখে চলেছে।
এ ব্যাপারে গাংনী উপজেলার তেরাইল গ্রামের মৎস্যচাষি কিবরিয়া ভোরের কাগজকে জানান, ছোট মাছ বিক্রি করে আগে যে পরিমাণ টাকা আয় হতো তাতে আমাদের পুকুর খরচ, মাছের পোনা, খাবার ইত্যাদিতে আয় এবং ব্যয় সমান সমান হতো। পরে পলাশীপাড়া সমাজ কল্যাণ সমিতির মৎস্য কর্মকর্তার পরামর্শে কার্প ফ্যাটেনিং পদ্ধতিতে মাছ মোটাতাজাকরণ শুরু করি। আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি বিভিন্ন মৎস উপকরণও সহায়তা পেয়েছি। আমার পুকুরে ৩ থেকে ৪ কেজি ওজনের মাছ রয়েছে। এক বিঘা পুকুরে এ বছর দেড় থেকে ২ লাখ টাকার মাছ বিক্রি হবে বলেও আশাবাদী তিনি।
জোড়পুকুরিয়া গ্রামের মৎস্যচাষি ওবাইদুর রহমান জানান, বাজারে সব সময়ই বড় মাছের চাহিদা অনেকাংশে বেশি। ফলে দামও ভালো। আমার এক বিঘা পুকুরে বড় মাছ তৈরি করেছি। ২ কেজি ওজনের নিচে মাছ বিক্রি করলে দাম কম হয়। তাই ৩ থেকে ৪ কেজি ওজনের মাছ বিক্রি করি ৩০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত।
সুফলভোগী করমদি গ্রামের হামিদুল ইসলাম ও নাজমুল হক জানান, বাজারে আধা কেজি ওজনের মাছের মূল্য ১৩০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা। একই ওজনের মাছ মোটাতাজা করে বিক্রি করা হলে অনেক ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে। এতে দাম ভালো পাওয়ার পাশপাশি পুকুরে খাবারও কম লাগে।
পলাশীপাড়া সমাজ কল্যাণ সমিতির (পিএসকেএস) মৎস্য কর্মকর্তা সাঈদ-উর রহমান জানান, বাজারে রুই, কাতলা, মৃগেল, সিলভার কার্প, কমন কার্প প্রভৃতি মাছের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ জাতীয় মাছ দ্রুত বড় হয়, রোগাক্রান্ত কম হয়, খাদ্য ও জায়গার জন্য একে অপরের প্রতিযোগী নয়, পানির সব স্তর থেকে প্রাকৃতিক খাদ্য প্রাপ্তি নিশ্চিত হয়। তাই পুকুরের পরিবেশ ভালো থাকে এবং এসব মাছ খেতে সুস্বাদু। সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগের মাধ্যমে চাষ করে দেড় বছরে ৫ কেজি থেকে ৬ কেজি ওজনের মাছ উৎপাদন করাই কার্প ফ্যাটেনিং বা মাছ মোটাতাজাকরণ। এতে অধিক মুনাফা আয় করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন অনেকেই। মৎস্যচাষিদের আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি পিকেএসএফের পক্ষ থেকে পলাশীপাড়া সমাজকল্যাণ সমিতি তা বাস্তবায়ন করে চলেছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গাংনী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা খন্দকার মো. সহিদুর রহমান ভোরের কাগজকে জানান, জেলায় চাহিদা ও উৎপাদন মোটামুটি সমান সমান। বাইরে থেকে মাছের প্রত্যাশা করে না। কার্প ফ্যাটেনিং পদ্ধতিতে মোটাতাজাকরণ প্রকল্পের আওতায় পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন সরকারের পাশাপাশি মৎস্যচাষিদের অর্থ ও পরামর্শ দিয়ে জেলার মৎস্যচাষিদের সহায়তা করে আসছে। অনেক মৎসচাষি পিকেএসএফের প্রণোদনা পেয়ে মাছ মোটাতাজাকরণ করে লাভবান হচ্ছেন। মৎস্যচাষিদের ভাগ্যবদলে কার্যক্রমটি সহায়ক বলেও জানান এ মৎস্য কর্মকর্তা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়