তারেক-জোবায়দার বিরুদ্ধে আরো তিন ব্যাংকারের সাক্ষ্য

আগের সংবাদ

বিপাকে রোহিঙ্গারা, বিপাকে বাংলাদেশ : ভূ-রাজনীতির গ্যাঁড়াকলে কমল খাদ্য সহায়তা > এক বেলা খাবারের জন্য মাথাপিছু বরাদ্দ কমে ৯ টাকা

পরের সংবাদ

গাইবান্ধায় নদীর তীর রক্ষায় ৬ কোটি টাকার কাজ ভাগাভাগি : অনিয়মের অভিযোগ প্রতিমন্ত্রীকে

প্রকাশিত: জুন ১০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

গাইবান্ধা প্রতিনিধি : গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে ভাঙন রোধে তিস্তা নদীর তীর রক্ষায় প্রায় ৬ কোটি টাকার বালিভর্তি জিও ব্যাগ স্থাপনের কাজ ভাগাভাগির অভিযোগ উঠেছে। কুড়িগ্রাম পাউব, ঠিকাদার ও স্থানীয় জাপার সংসদ সদস্যের প্রতিনিধির মধ্যে এই ভাগাভাগি হয়। ফলে যেনতেন কাজ করায় এসব বস্তা আবারো বন্যায় বিলীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে কাজে অনিয়মের অভিযোগ এনে গত ৫ জুন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ দিয়েছেন এলাকাবাসী। এলাকাবাসীর পক্ষে রেজাউল করিম, দুলাল মিয়া ও আমজাদ হোসেন এই চিঠি পাঠিয়েছেন। কুড়িগ্রাম পাউব ও প্রকল্প এলাকায় টানানো বিলবোর্ড সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর বর্ষায় গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কারেন্ট বাজার এলাকায় নদী ভাঙন দেখা দেয়। হাজার হাজার ঘরবাড়ি, আবাদি জমি বিলীন হয়ে যায়। এ অবস্থায় ভাঙন ঠেকাতে ৫ কোটি ৭৫ লাখ ৬৩ হাজার ৪২২ টাকা জরুরি বিশেষ বরাদ্দ দেয় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এই টাকায় সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের কারেন্ট বাজার এলাকা থেকে এক কিলোমিটার তিস্তা নদীর বাম তীর রক্ষার কথা। এজন্য নদীর তীরে ২৫০ কেজির ধারণ ক্ষমতার ৭৫ হাজার বালু ভর্তি জিও ব্যাগ এবং ৭৫ কেজি ওজনের বালু ও সিমেন্ট মিশ্রিত ৮১ হাজার ৭৪৬ টি গানি ব্যাগ স্থাপন করার কথা। কাজটি গাইবান্ধা জেলার মধ্যে। কিন্তু কুড়িগ্রাম সংলগ্ন হওয়ায় তা বাস্তবায়ন করছে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড। ২০২২ সালের ২৪ মে এ কাজ শুরু হয়। শেষ হওয়ার কথা ছিল চলতি বছরের ২৮ ফেব্রয়ারি। এ পর্যন্ত ৯০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। রংপুরের ঠিকাদার হাসিবুল হাসান কাজটির দায়িত্ব পান।
এদিকে প্রতিমন্ত্রীকে দেয়া অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, দরপত্র অনুযায়ী, ৭৫ কেজি ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন বালু ও সিমেন্ট ভর্তি গানি ব্যাগের বদলে ৩০ কেজি ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন চালের ব্যাগ ব্যবহার করা হয়েছে। বালু ও সিমেন্ট ভর্তি গানি ব্যাগে সিমেন্টের ভাগ কম দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া এসব ব্যাগের অধিকাংশ ছিঁড়ে ও ফেঁটে গেছে। এসব ব্যাগের বেশির ভাগ পঁচা। মবিল ও ময়লাযুক্ত। বস্তায় সিমেন্ট মিশ্রিত বালু থাকার নির্দেশনা রয়েছে। যাতে বস্তাগুলো পাথরের মতো শক্ত হয়ে থাকে। কিন্তু বাস্তবে ছেড়া ও ফেটে যাওয়া ব্যাগে শুধু বালুর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে।
একইভাবে ২৫০ কেজির ধারণ ক্ষমতার ৭৫ হাজার জিও ব্যাগের বদলে প্রায় ৫২ হাজার বস্তা ফেলেই কাজ শেষ করা হয়েছে। জিও ব্যাগে নির্ধারিত মাপের বালু ভরানোর কথা। সেখানে বালুর পরিবর্তে কাদা ও কাদা মিশ্রিত বালু ভরানো হয়েছে। অনেক বস্তা এখনই ফেটে গেছে। টাস্কফোর্সের লোক দেখানো বাতিল করা বস্তাও হিসাবের খাতায় তুলে ডাম্পিং করা হয়েছে।
অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়, রংপুরের ঠিকাদার হাসিবুল হাসানের লাইসেন্স ব্যবহার করে তিনিসহ কাজটি ভাগাভাগি হয় কুড়িগ্রাম পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন, তাদের ব্যবসায়িক অংশীদার চিলমারীর দুই ব্যক্তি ও স্থানীয় জাতীয় পার্টির (এরশাদ) সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারীর প্রতিনিধি ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমানের মধ্যে। আবেদনকারীদের অন্যতম রেজাউল করিম বলেন, এ অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে কাজে অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেযার দাবি জানানো হয়েছে।
গাইবান্ধা শহর থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দূরে হরিপুর ঘাট। সেখান থেকে শ্যালোচালিত নৌকাযোগে একঘণ্টার পথ। তারপর কারেন্ট বাজার। শুক্রবার সকালে সরজমিন গিয়ে দেখা গেছে, কারেন্ট বাজার তিস্তা নদীতে বিস্তীর্ণ চর। পানি নদীর তলায় পড়েছে। নদীর তীরে জমি ঘেষে কিছু জায়গায় স্যান্ড সিমেন্ট গানি ব্যাগ। কিছু চটের ব্যাগ ফেটে গেছে। তাতে সিমেন্টের মিশ্রণ নেই বললেই চলে। কিছু জায়গায় জি ব্যাগ। নি¤œমানের হওয়ায় সেগুলোর বেশকিছু ফেটে গেছে। তবে স্যান্ড সিমেন্ট গানি ব্যাগই বেশি। জিও ব্যাগ নিচে বসানো হয়েছে। উভয় ব্যাগে বালু ও সিমেন্টের ভাগ কম। বর্ষা এলেই ভেসে যাবে। বস্তা স্থাপনের হিসাবে গরমিল রয়েছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন।
এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। কারেন্ট বাজার সংলগ্ন মাদারিপারা এলাকার কৃষক মো বাদশা (৬০) বলেন, এখানে ৩০ কেজির চালের চটের বস্তা দেয়া হয়েছে। বস্তায় বালু বেশি সিমেন্ট কম দেয়া হয়েছে। নদীর চরের চিকন বালু দেয়া হয়। কাজের মান খারাপ। ফলে বর্ষা আসার আগে এখনই ভেঙে যাচ্ছে। হরিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নদীর তীরে মানুষের জমি ঢালু করেও বস্তা স্থাপন করা হয়েছে। তারা ক্ষতিপূরণ পায়নি।
এসব বিষয়ে ঠিকাদার হাসিবুল হাসানের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। খুদে বার্তাও দেয়া হয়। তিনি ফোন ধরেননি।
সংসদ সদস্যের প্রতিনিধি মিজানুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, আমি ঠিকাদারের পক্ষে অর্ধেক অংশ সাব কন্ট্রাকে কাজ করেছি। দরপত্রের নিয়ম অনুযায়ী কাজ হয়েছে। ঢাকা থেকে টাস্কফোর্স কমিটিও কাজ দেখে গেছেন। তবে সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী গণমাধ্যকে বলেন, বিষয়টি এমন নয়। কাজটি করছেন একটি কোম্পানি। সাব কন্ট্রাকে লোকাল লোকজন করছে। আমার প্রতিনিধি হিসেবে মিজানুর কাজটি দেখাশুনা করছে। উনি কাজ করবেন কেন? যদি করে থাকেন তার সঙ্গে কথা বলব। কাজে অনিয়ম হয়ে থাকলে সেটাও দেখব।
কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, আমি কাজ করবো কেন? ঠিকাদারের কাজ ঠিকাদার নিজেই করেছেন। তিনি ঠিকাদারের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। দ্রুত কাজ সম্পন্ন করতে ঠিকাদার দুই তিনটি গ্রুপকে দিয়ে কাজ করেছেন। প্রতিটি বস্তা ভরাটের আগে ওজন করা হয়। যেসব বস্তা খারাপ ছিল, তা বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া টাস্কফোর্স কমিটি তদন্ত ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত ৯০ ভাগ কার সম্পন্ন হয়েছে। এখনো চূড়ান্ত বিল দেয়া হয়নি। যাচাই-বাছাইয়ের পর সঠিক পেলে পুরো বিল দেয়া হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়