নম্বর জালিয়াতির অভিযোগ : নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে হাইকোর্টে তলব

আগের সংবাদ

ভোটের হাওয়া কোন দিকে? বরিশালে চার প্রার্থীর মধ্যে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস

পরের সংবাদ

সিলেটে সড়ক দুর্ঘটনা > ভাটিপাড়া গ্রামে চলছে স্বজনদের আহাজারি : হ মৃত্যু বেড়ে ১৫, ২ চালকের বিরুদ্ধে মামলা

প্রকাশিত: জুন ৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সিলেট অফিস ও সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি : সিলেটের দক্ষিণ সুরমার নাজিরবাজারে ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানের সংঘর্ষের ঘটনায় আরো একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫ জনে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বাদশা (২২)। তিনি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া এলাকার মায়েত নুরের পুত্র।
গত বুধবার সিলেট মহানগর থেকে পিকআপে করে প্রায় ৩০ জন নারী-পুরুষ ওসমানীনগর উপজেলার গোয়ালাবাজার যাচ্ছিলেন। তারা সবাই নির্মাণশ্রমিক। ভোর সাড়ে ৫টার দিকে দক্ষিণ সুরমার নাজিরবাজার এলাকার কুতুবপুর নামক স্থানে পৌঁছালে মুনশিগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী ট্রাকের সঙ্গে পিকআপের সংঘর্ষ হয়। ঘটনাস্থলেই মারা যান ১১ জন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এদিন আরো ৩ জনের মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় দুই চালকের বিরুদ্ধে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থানায় মামলা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) সুদীপ দাশ। সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের ভাটিপাড়ার ইজাজুল বাদী হয়ে এ মামলা করেন। ইজাজুলের বাবাও সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি শামসুদ্দোহা জানান, দুই চালক এখনো পলাতক। পুলিশ তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। গাড়ির মালিকেরও সন্ধান চলছে।
দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা রাকিব ভূঁইয়া মুঠোফোনে ভোরের কাগজকে বলেন, তার আত্মীয়সহ এই গ্রামের মোট ৭ জন মারা গেছেন। তারা একেবারেই হতদরিদ্র। তাদের দৈনন্দিন জীবনযাপন এমনিতেই কষ্টের ছিল। এখন সেই বোঝা আরো ভারী হলো। তিনি বলেন, যারা পরিবারের হাল ধরতেন তারাই মারা গেলেন। এখন তাদের স্ত্রী সন্তানদের দেখবে কে? ফুটবল কোচ রাকিব ভূঁইয়ার মতে, সপ্তাহখানেক এই পরিবারের পাশে হয়তো অনেকেই থাকবেন। কিন্তু এরপর আর কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। তার দাবি- সরকার যেন এই পরিবারগুলোর জন্য স্থায়ীভাবে আয়ের কোনো সুযোগ করে দেয়।
কেউ রইল না সেজুফার : গতকাল দুপুরে সরজমিন জানা যায়, ১৭ বছর আগে সন্তানসম্ভবা সেজুফা বেগম স্বামী শাজাহান ভূঁইয়ার সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় বাবার বাড়ি দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়ায় ফিরে আসেন। ওখানেই বাদশা মিয়ার জন্ম। এ বাড়ি ও বাড়ি গৃহপরিচারিকার কাজ করে বাদশাকে বড় করেছেন তিনি। অভাগা সেজুফার একমাত্র অবলম্বন ছিলেন বাদশা। সন্তানকে হারিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন তিনি।
ছেলের লাশের অপেক্ষায় বাবা : বুধবার বেলা ১১টার দিকে ছেলে সৌরভের এক সহকর্মীর ফোন আসে তার বাবার কাছে। ফোন ধরেই বাকরুদ্ধ হয়ে যান বাবা সিরাজ নূর। মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। একপর্যায়ে কাঁদতে কাঁদতে সিরাজ নূর বললেন, আমার ছেলে আর নেই। এরপর থেকে বাড়ির উঠানে ছেলের লাশের অপেক্ষায় একটানা বিলাপ করছিলেন তিনি।
বুধবার সন্ধ্যায় লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স ঢোকে দিরাইয়ের ভাটিপাড়া গ্রামে। এ সময় আশপাশের গ্রাম থেকে আসা মানুষও সেখানে জড়ো হন। দিরাই উপজেলার নিহতদের মধ্যে রয়েছেন- মৃত মাহিম উদ্দিনের ছেলে হারিস বলি (৫০), মৃত রজব আলীর ছেলে আব্দুর রশীদ (৪৫), সামসুন নূরের ছেলে মেহের মিয়া (৩৫), কাদির ভূঁইয়ার ছেলে বাদশা মিয়া (১৮) ও মিজানুর মিয়ার ছেলে সৌরভ মিয়া (২৪)। লাশ আসার পর সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। এ সময় স্বজনদের কান্নায় পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে।
দিরাইয়ের পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনায় শান্তিগঞ্জ উপজেলার ৩ শ্রমিক নিহত হয়েছেন। তারা হলেন- পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়নের বামনগাঁও গ্রামের মৃত ওয়াহাব আলীর ছেলে শাহিন মিয়া (৪০), শিমুলবাঁক ইউনিয়নের মুরাদপুর গ্রামের মৃত হারুন মিয়ার ছেলে দুলাল মিয়া (২৫) এবং একই ইউনিয়নের থলেরবন্দ গ্রামের মৃত আমানুল্লার ছেলে আউলাদ হোসেন (৫০)। গতকাল দুপুরে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাতে ছুটে যান শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আনোয়ার উজজামান ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান প্রভাষক নূর হোসেন। এ সময় নিহতদের পরিবারের মাঝে সরকারি সহায়তা বিতরণ করা হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়