কনস্টেবল বাদল হত্যায় ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড

আগের সংবাদ

দুর্ভোগের অবসান চান নগরবাসী : সুপেয় জলের তীব্র সংকট জলজটের খুলনায়

পরের সংবাদ

মানিকগঞ্জে বোরো ধানের নজিরবিহীন ফলন : বেশি টাকা নিচ্ছেন হারভেস্টার মালিকরা

প্রকাশিত: জুন ৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সুরেশ চন্দ্র রায়, মানিকগঞ্জ থেকে : মানিকগঞ্জে চলতি মৌসুমে বোরো ধানের নজিরবিহীন ফলন হয়েছে। মানিকগঞ্জ সদর, ঘিওর, দৌলতপুর, শিবালয়, হরিরামপুর, সাটুরিয়া ও সিংগাইরে বোরো ধানের ফলন সর্বকালের ইতিহাস ভঙ্গ করে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে বলে কৃষকদের দাবি। তবে হারভেস্টার মালিকরা ধান কাটতে বেশি টাকা নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
মানিকগঞ্জ কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা যায়, এবছর বোরো ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে। কৃষি অধিদপ্তরের পরামর্শ অনুসরণ করে বোরোধানের আবাদ করায় এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় জেলার কৃষকরা আশাতীত ফলন পেয়েছেন।
শিবালয় উপজেলার মহাদেবপুর, কলাগাড়ীয়া  বনগ্রাম ও সাহিলী গ্রামের আরিফ, মোতালেব, আব্দুল কুদ্দুস ও চানুসহ অনেক কৃষক বলেন, এবছর বোরোধানের ফলন অনেক ভাল হয়েছে। প্রতি বিঘায় গড়ে ৩০-৩২ মন ধান পাব বলে আশা করছি।
সাটুরিয়া উপজেলার দরগ্রাম এলাকার কৃষক মো. মতিন এবং দবির মোল্লা জানান, তারা ৭ বিঘা জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের বোরো ধান আবাদ করেছেন।  জমিতে চাষ, কীটনাশক, সেচ, আগাছা দমন, ধান কাটা ও মাড়াইসহ প্রতি মণ ধান উৎপাদনে তাদের গড়ে পাঁচশ টাকা খরচ হয়েছে। বর্তমান  বাজারে প্রতি মণ নতুন ধান বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১১০০ টাকা দরে। খরচ বাদে তারা এখন মণপ্রতি যে পরিমাণ টাকা পাচ্ছেন তাতে তারা বেশ খুশি।
দৌলতপুর উপজেলার জিয়নপুর ও চকমিরপুর এবং সিংগাইর উপজেলার সাহরাইল ও চারিগ্রাম এলাকার কৃষকরা জানান, কৃষি অফিসের পরামর্শ মেনে ৮৯ এবং ৯২ জাতের বোরো ধানের চারা রোপণ করায় তারা সন্তোষজনক ফলন পেয়েছেন। আগামীতেও তারা কৃষি অফিসের নির্দেশানুযায়ী চাষাবাদ করে সংসারে সচ্ছলতা আনতে এবং দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে বিশেষ অবদান রাখতে চান।
সদর উপজেলার বাঘিয়া, বালিরটেক, শানবান্দা, চৌল্লা ও বাঙ্গাবাড়ি গ্রামের কৃষকরা জানান, তাদের এলাকায় বোরোধানের আবাদ আগের চেয়ে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং কৃষি অফিসের যথাযথ তদারকিতে তারা এবছর আশানুরূপ ফলন পাবেন। তবে কৃষকদের অভিযোগ, হারভেস্টার মালিকরা কৃষকদের কাছ থেকে বিঘাপ্রতি ২৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা নিচ্ছেন, যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। এলাকার কতিপয় দালাল ও সিন্ডিকেট প্রতিহত করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা যদি সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় করেন তাহলে বাঁচবে কৃষক আর সফল হবে সরকারের মহতী উদ্যোগ। ধান ক্রয় এবং পর্যবেক্ষণের জন্য কমিটি থাকলেও তাদের ভূমিকা যেন খাতাকলমেই সীমাবদ্ধ। এই কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য কর্তৃপক্ষের নজরদারি কামনা করেন তারা।
এ বিষয়ে শিবালয় এবং ঘিওর উপজেলার কয়েকজন হারভেস্টার মালিক বলেন, ধান কাটার চাহিদার ভিত্তিতে আমরা দর নির্ধারণ করে থাকি। সরকার থেকে এ বিষয়ে আমাদের কোনো রেট নির্ধারণ করে দেয়নি।
তারা আরো বলেন, ইচ্ছে করলেই যে কোনো এলাকায় গিয়ে ধান কাটতে পারেন না তারা। এলাকার রাজনৈতিক একটি বিষয় আছে। তাদের ম্যানেজ না করে হারভেস্টার মালিকরা কাজ করতে পারেন না। সেক্ষেত্রে কৃষকদের কাছ থেকে টাকা বাড়িয়ে না নিয়ে কোনো উপায় থাকে না।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবু মো. এনায়েত উল্লাহ বলেন, চলতি মৌসুমে মানিকগঞ্জে মোট ৪৮ হাজার ৭৭৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এ বছর উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান পূর্বের তুলনায় বেশি আবাদের কারণে আশাতীত ফলন হয়েছে।
বিশেষ করে ৮৯, ৯২, বঙ্গবন্ধু ১০০, নতুন ভ্যারাইটি বিনা-২৫ জাতের চারা আমরা ব্যাপকভাবে কৃষকদের মাঝে পৌঁছে দিয়েছি। সরকারি প্রণোদনার মাধ্যমে, বিভিন্ন প্রকল্পের কর্মসূচির মাধ্যমে, গাজীপুর ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং বিনা ময়মনসিংহ ইনস্টিটিউট থেকে প্রচুর পরিমাণ উন্নতজাতের বীজ এনে আমরা কৃষকদের মাঝে বিতরণ করেছি। গত বছর মানিকগঞ্জে যে লিডিং ভ্যারাইটি ছিল ২৮-২৯ এবং যার কাভারেজ ছিল ৬৯ শতাংশ, চলতি বছর তার আনুপাতিক হার নেমে এসেছে ২০ শতাংশে। অপরদিকে ৮৯, ৯২, বঙ্গবন্ধু ১০০ এবং বিনা ২৫ লিডিং পয়েন্টে চলে এসেছে। যার কাভারেজ এখন ৭৭ শতাংশ। এর ফলে গত বছরের চেয়ে ১ লাখ টন ধান বেশি উৎপাদন হয়েছে, যার বাজারমূল্য প্রায় পাঁচশ কোটি টাকা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়