গ্রিন ভয়েস : প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধের দাবিতে সাইকেল র‌্যালি

আগের সংবাদ

বাজেটে কেউ খুশি নয় : সাধারণ মানুষের ওপর করের বোঝা বেড়েছে, পূরণ হয়নি ব্যবসায়ীদের বেশিরভাগ দাবি

পরের সংবাদ

সংবাদ সম্মেলনে পরিবারের অভিযোগ : গ্রিন লাইফ হাসপাতালে ‘ভুল চিকিৎসায়’ মৃত্যু

প্রকাশিত: জুন ৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : রাজধানীর গ্রিন লাইফ হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় জাকির হোসেন নামের এক রোগী মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলা ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগে ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং অনৈতিক রিং বাণিজ্যসহ অপচিকিৎসার দায়ে দায়িত্বরত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. গোলাম আজম, ডা. শেখর কুমার মন্ডল ও ডা. রাশেদুল হাসান কনকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন জাকির হোসেনের পরিবারের সদস্যরা। একই সঙ্গে তাদের বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) রেজিস্ট্রেশন বাতিলের দাবি উঠেছে। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নাসরুল হামিদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ ও দাবি জানান তারা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জাকির হোসেনের স্ত্রী নুরুন নাহার। এ সময় তার দুই মেয়ে উপস্থিত ছিলেন।
স্বজনদের দাবি, রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কোনো পরামর্শ না করেই জাকির হোসেনের (৫১) হার্টে রিং বসানো হয়। পরবর্তী সময়ে তার অবস্থার অবনতি হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকদের অবহেলায় গত ১৬ মার্চ রোগীর মৃত্যু হয়। রোগীর মৃত্যুর পর বিভিন্ন চিকিৎসক ও কার্ডিওলজিস্টদের থেকে পাওয়া তথ্য ও গ্রিন লাইফ হাসপাতালের চিকিৎসায় অবহেলায় স্বীকারোক্তির কথা উল্লেখ করে বিভিন্ন অসঙ্গতি তুলে ধরেন নুরুন নাহার। তিনি জানান, গত ১২ মার্চ বুকে ব্যথা নিয়ে গ্রিন লাইফ হাসপাতালে ভর্তি হন জাকির হোসেন। ভর্তির পরই তার ইসিজি করা হয়। সকালবেলার ইসিজি রিপোর্টেই তার স্বামীর হার্ট অ্যাটাক হয়েছে বলে জানা যায়। তবে সহযোগী অধ্যাপক ডা. রাশেদুল হাসান কনক সেটি ধরতে পারেননি। রোগীকে ৩টা গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ দিয়ে ছাড়পত্র দিয়ে দেন তিনি। যে সব টেস্ট করানো প্রয়োজন ছিল সেই মুহূর্তে তা তিনি করাননি, করাতেও বলেননি। এমন কি একজন কার্ডিওলজিস্টও দেখানোর পরামর্শ দেননি। একই দিন সন্ধ্যায় বিআরবি হাসপাতালের গ্যাস্টোলজির চিকিৎসক মো. মাহবুবুল আলম প্রিন্সকে দেখালে তিনি রোগীর ডায়াবেটিক ও বুকের ব্যথার বিষয়টি জেনে একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞক দেখানোর পরামর্শ দেন। পরে একই হাসপাতালের ডা. শেখর কুমার মন্ডলকে (ক্লিনিক্যাল ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট) দেখালে তিনি রোগীর ইসিজি ও ইকো করান। এসব পরীক্ষার ফল দেখে রোগী ঘণ্টা দেড়েকের বেশি বাঁচবে না বলে জানান। একইসঙ্গে যত দ্রুত সম্ভব রোগীর এনজিওগ্রাম করে হার্টে রিং পরাতে বলেন।
পুনরায় গ্রিন লাইফে ভর্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা অন্য হাসপাতালে যেতে চাইলেও আমাদের এক প্রকার ভয়ভীতি দেখিয়ে আমাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গ্রিন লাইফ হাসপাতালে নিয়ে আসেন। লিখিতভাবে হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের কথা বলা হলেও তিনি আমাদের ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে গ্রিন লাইফ হাসপাতালে আসতে বাধ্য করেন। এমনকি রোগী ভর্তি হওয়ার আগেই আমাদের সঙ্গে কোনো ধরনের পরামর্শ না করে বা আমাদের মতামত না নিয়ে রোগীকে রিং পরানো হয়।
ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতার অভিযোগ করে নুরুন নাহার বলেন, রোগীকে রিং পরানোর পর হাসপাতালে পোস্ট অপেরেটিভ ম্যানেজমেন্ট করতে চরম অবহেলা ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। ডায়াবেটিস রোগী জানার পরও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে সারারাত ইনসুলিন না দিয়ে ফেলে রাখে। রাতে রোগীর সুগার কন্ট্রোল না করায় রোগীর কিটোন বডি পজিটিভ চলে আসে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসার যন্ত্রপাতি না থাকা থাকায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীকে সময়মতো ডায়ালাইসিস সেবা প্রদান করতে পারেনি। ফলে মাল্টিপল অর্গান বিকল হয়ে গত ১৬ মার্চ রোগী মারা যান। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বিএমডিসিসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়া হয়েছে। দায়ীদের শাস্তির দাবিতে কলাবাগান থানায় জিডি করেছে পরিবারটি।
ঘটনার দুই মাস পর গণমাধ্যমের সামনে অভিযোগ করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিবারের সদস্যরা বলেন, রোগীর মৃত্যুর পর আমরা হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষের কাছে মৌখিক অভিযোগ করি। তারা আমাদের মৌখিক অভিযোগের সত্যতা পেয়ে হাসপাতালের বিল সাড়ে ছয় লাখের বেশি টাকা না নিয়েই ১৬ মার্চ লাশ হস্তান্তর করেন। একই সঙ্গে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানায়। তারা তাৎক্ষণিকভাবে মৌখিক আদেশ ডা. শেখর ও কনককে বহিষ্কার করে। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানায়। তবে তারা তাদের কথা না রাখায় আমরা আইনের দারস্থ হয়েছি। আইনি ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও বিএমডিসির কাছে গ্রিন লাইফ হাসপাতাল ও দায়ী চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে। তবে এত দিনেও তাদের তদন্তের কোনো অগ্রগতি নেই। পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় জিডি করা হয়েছে। তবে তারাও এখন পর্যন্ত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়নি। এ অবস্থায় আদালতে গ্রিন লাইফ হাসপাতাল ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে মৃত জাকির হোসেনের পরিবার।
এ বিষয়ে অধ্যাপক ডা. গোলাম আজম বলেন, রোগী জাকির হোসেনের হার্ট অ্যাটাক নিশ্চিত হওয়ার পর আমার সহকর্মী ডা. শেখর কুমার মন্ডলের অনুরোধে দ্রুততম সময় হাসপাতালে পৌঁছে রোগীকে ক্লিনিক্যালি পরীক্ষা করার পর ইসিজি এবং ব্লাড সুগার পর্যালোচনা করে প্রাইমারি পিসিআইয়ের পক্ষে মতামত প্রদান করি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়