গ্রিন ভয়েস : প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধের দাবিতে সাইকেল র‌্যালি

আগের সংবাদ

বাজেটে কেউ খুশি নয় : সাধারণ মানুষের ওপর করের বোঝা বেড়েছে, পূরণ হয়নি ব্যবসায়ীদের বেশিরভাগ দাবি

পরের সংবাদ

চট্টগ্রামে লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত জনজীবন : শিল্প-কারখানায় উৎপাদনে অচলাবস্থা, ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা

প্রকাশিত: জুন ৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

প্রীতম দাশ, চট্টগ্রাম অফিস : চট্টগ্রামে তীব্র গরমের সঙ্গে ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। দিন-রাত সমানতালে চলছে লোডশেডিং। নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন নগরবাসী। জাতীয় গ্রিড থেকে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ না পাওয়ায় ঘন ঘন লোডশেডিং হচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রচণ্ড দাবদাহ। একদিকে লোডশেডিং, অন্যদিকে প্রচণ্ড গরমে দুর্বিষহ জনজীবন।
তীব্র গরমের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা অনেক বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুতের নাজুক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে অফিস-আদালতের কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটছে প্রতিদিন। প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ না পাওয়ায় লোডশেডিং করতে হচ্ছে। কিন্তু কাপ্তাই হ্রদে পানি কমে যাওয়ায় ও জ¦ালানির অভাবে চট্টগ্রামের অনেক ইউনিট চালু করা যাচ্ছে না। এ কারণে ঘাটতি দূর করাও যাচ্ছে না।
তীব্র গরম আর লোডশেডিংয়ে শিশু ও বয়স্করা অসুস্থ হওয়ার পাশাপাশি নগরীতে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। ওয়াসার পানি উৎপাদন দৈনিক ৭/৮ কোটি লিটার কম হচ্ছে। ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দিনে যেমন অবস্থা, তেমনি রাতের অবস্থা আরো খারাপ। প্রত্যেক রাতেই প্রথমদিকে, মধ্যভাগে এবং শেষার্ধ্বে বিদ্যুৎ থাকে না বিভিন্ন এলাকায়। দুপুরে সূর্যের তাপ বাড়ার কারণে চট্টগ্রাম শহরে লোকজনের আনাগোনাও কমে গেছে। জরুরি কাজ না থাকলে ঘর থেকে বের হচ্ছেন না অনেকে। চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলার চিত্রও একই। লোডশেডিং পরিস্থিতির অবনতির কারণে বিকল্প ব্যবস্থায় ঝুঁকছেন চট্টগ্রামের মানুষ। একটু স্বস্তির আশায় অনেকেই চার্জার ফ্যান, চার্জার বাতি ও আইপিএস কিনছেন; যদিও চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এসব পণ্যের দামও বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
এদিকে শিল্পমালিকরা জানান, বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে শিল্পকারখানায় উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। চট্টগ্রামের শিল্পাঞ্চলগুলোতে বিভিন্ন কারখানায় উৎপাদনে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় এক ঘণ্টা পর পর লোডশেডিং চলছে। ঘন ঘন বিদ্যুতের আসা-যাওয়ার কারণে কারখানার ভারী মেশিন নষ্ট হতে চলেছে। যাদের নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা নেই, এসব শিল্পকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
শিল্পমালিকরা রেশনিংয়ের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিতরণের দাবি জানিয়েছেন। বিজিএমইএ নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, লোডশেডিংয়ের কারণে তৈরি পোশাক কারখানাগুলোতে উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ডিজেল চালিত জেনারেটরের মাধ্যমে উৎপাদন চালু রাখতে হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। নির্ধারিত সময়ে পণ্য ডেলিভারি দেয়া যাচ্ছে না। চট্টগ্রামে হাজার কোটি টাকার দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ অপেক্ষা করছে। গ্যাস ও বিদ্যুৎ-সংকটে বিনিয়োগকারীরা বিমুখ হবে। নগরীর সেন্ট স্কলাস্টিকাস স্কুলের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী গ্রন্থনা দাশ অশ্মী জানায়, স্কুলে গেলে বিদ্যুৎ থাকে না, বাসায় এলেও বিদ্যুৎ পাই না। সন্ধ্যায় পড়তে বসলেও বিদ্যুৎ অনেকটা ভোগায়। সেই সঙ্গে তীব্র গরমে পড়ালেখা করা দায়। রাতে পরিস্থিতি আরো খারাপ। ঘুমাতে গেলে কিছুক্ষণ পরপর বিদ্যুত চলে যায়। রাতে ঘুম হয় না।
চট্টগ্রামে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। লোডশেডিংয়ের পরিমাণ দিনের বেলায় প্রায় ৪০০ মেগাওয়াট। রাতের বেলায় প্রায় ৩০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত হয়। কখনো কখনো আবার সেটা ৪০০ মেগাওয়াটও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। মূলত গ্যাস ও জ¦ালানি সংকটের কারণেই এমনটা হচ্ছে। কাপ্তাই হ্রদে পানি কমে যাওয়ায় কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিটের চারটিই বন্ধ হয়ে গেছে।
আবার গ্যাস ও জ¦ালানি তেলের অভাবেও অন্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতেও উৎপাদন প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে। এ অবস্থায় টানা বৃষ্টি না হলে লোডশেডিং কমার সম্ভাবনা খুব একটা নেই বলে মনে করছেন পিডিবির কর্মকর্তারা। পিডিবি সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রতিদিন ১২০০ থেকে সাড়ে ১৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু এর বিপরীতে মিলছে ৯০০ থেকে ৯৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। জ¦ালানি সংকটের কারণে চট্টগ্রামের ছয়টি বিদ্যুৎকেন্দ্রে বন্ধ রয়েছে উৎপাদন।
চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী এম রেজাউল করিম বলেন, চট্টগ্রামে তীব্র গরম পড়েছে। চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই দফায় দফায় লোডশেডিং করতে হচ্ছে। জাতীয় গ্রিড থেকে যা পাওয়া যায় তা-ই সরবারহ করা হচ্ছে। চট্টগ্রামে দৈনিক যে বিদ্যুতের চাহিদা তার চেয়ে ৩০০ থেকে ৪০০ মেগাওয়াট কম বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। পরিস্থিতি কতদিন এমন অবস্থায় থাকবে জানতে চাইলে রেজাউল করিম বলেন, ‘এটা বলা মুশকিল। জ¦ালানি সংকট নিরসন না হওয়া পর্যন্ত এমন অবস্থা থাকবে।’
দেশের একমাত্র পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র কাপ্তাইয়ে হাইড্রোলিক পাওয়ার স্টেশনে তীব্র পানির সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন সর্বনি¤œ পর্যায়ে পৌঁছেছে। অনাবৃষ্টি এবং প্রচণ্ড দাবদাহে কাপ্তাই হ্রদের পানি শুকিয়ে যাওয়ার ফলে এই সংকট দেখা দিয়েছে। জানা গেছে, গত রোববার সকাল ১০টা পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদের পানির পরিমাণ ৭৩ দশমিক ৬২ ফুট (মিন সি লেভেল)। রুলকার্ভ অনুযায়ী এ সময় হ্রদে পানি থাকার কথা ৭৮ দশমিক ২০ ফুট এমএসএল (মিন সি লেভেল)। প্রচুর বৃষ্টিপাত না হলে এই সংকট হতে উত্তরণ সম্ভব নয় বলে জানান প্রকৌশলীরা। কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এটিএম আবদুজ্জাহ জানান, হ্রদের পানি কমে যাওয়ায় কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে। পানির অভাবে কেন্দ্রের সব কটি ইউনিট সচল রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন সর্বনি¤œ পর্যায়ে ঠেকেছে। তিনি আরো জানান, কেন্দ্রের ৫টি ইউনিটের মধ্যে বর্তমানে ১ নম্বর ইউনিট চালু রয়েছে। এই ইউনিট থেকে মাত্র ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়