ভর্তিতে অতিরিক্ত অর্থ আদায় ৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে শোকজ

আগের সংবাদ

বাজেট বাস্তবায়ন করা সম্ভব : বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী

পরের সংবাদ

বর্ডার

প্রকাশিত: জুন ২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২, ২০২৩ , ১:২১ পূর্বাহ্ণ

দোদুলের আজকাল এমন বেহাল হকিকত কী করে হলো? কেউ ঠাওর পায় না! ২৭ বছরের জীবনে এমন জটিল সময় আসেনি। কোনো কিছুই ভালো লাগে না। কোনো কাজেই আর উৎসাহ বা উদ্যম নেই। প্রায়োগিক অর্থেই স্বপনে, শয়নে ও জাগরণে শুক্লা… শুক্লা। অবচেতন মনেই সে সব সময় ইচ্ছা-অনিচ্ছায় এ নাম জপে।
ঘটনার শুরু বছর চারেক আগে। দোদুলের নিজ শহর টাঙ্গাইলে। কবিতার মনোটোনাস এই শহরে। কবিতা উৎসবে ভারতীয় ২৬ জনের দলে ছিল শুক্লা ঘোষ। সাধারণ বিচারে শুক্লা এক সাধারণ মেয়ে। বিশেষত্ব কবিতা লেখে। দোদুলের কালে-ভদ্রে উঠতি বয়সের বাতাসে একটু-আধটু কবিতা লেখার বদ অভ্যেস আছে। কবিতা উৎসবে টাঙ্গাইলে নিজ জেলার কবির কোঠায় একটা কবিতা পড়বে না- এমনটা হতে দেয়া যায় না! তাহলে বন্ধু মহলে তার কবি খ্যাতির যবনিকাপাত হবে। সেই উৎসবেই শুক্লার সাথে আলাপ। টাঙ্গাইল শহর শুক্লাকে দেখানোর মহান দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে আলাপের গভীরতা। তিন দিনের উৎসবেই দোদুল আর শুক্লা অনেকটা বন্ধুত্ব গড়ে নিয়েছিল। দুজন একে অন্যের সান্নিধ্য পছন্দ করতে শুরু করে। যথারীতি কবিতা উৎসব সীমা তিন দিনের সমাপ্তিতে শুক্লা পশ্চিমবঙ্গে চলে যায়। এরপর থেকে দোদুলকে সব সময় মনমরা স্থায়ীভাবে পেয়ে বসে।
সারাক্ষণ শুক্লার চলা-বলা, অতি সাধারণ বিষয়গুলো দোদুলের মনের জমিনে ভেসে বেড়ায়। শুক্লার প্রতি প্রবল আকর্ষণে সে ফোন করে। পশ্চিমবঙ্গ থেকে শুক্লার গলায় সে টাঙ্গাইলে দেখা হওয়ার সময়ের চেয়ে বেশি আন্তরিকতা অনুভব করে। দোদুল এর পর থেকে আক্ষরিক অর্থেই শুক্লার জন্য দিওয়ানা। তার আর তর সয় না। দোদুলের পাসপোর্ট নেই, পাসপোর্ট করিয়ে ভিসা প্রসেস করে ভারতে যাওয়ার জন্য যতটা সময় প্রয়োজন তাও সে ব্যয় করতে রাজি নয়। অগত্যা বাসে টাঙ্গাইল থেকে তিনগাড়ি বদলিয়ে চুয়াডাঙ্গা দর্শনার সীমান্ত দিয়ে দালাল ধরে দোদুল পৌঁছে যায় কলকাতা।
অবিভক্ত বাংলার রাজধানী ভারতবর্ষের পুরনো শহর কলকাতায় নবাগত দোদুল একই ভাষার কারণে একটা আত্মীয়তা অনুভব করে। বাংলায় কথা বলা মানুষগুলো আপনই মনে হয়। কলকাতায় পৌঁছে শুক্লাকে এক কবি বন্ধুর মাধ্যমে ফোন দেয়। এই খবর জানায় কাল একটু বিকালে নন্দনে আসবেন। শুক্লা কৌতূহল নিয়ে প্রশ্ন করে কেন? দোদুল আপনার জন্য দুদিন আগে লোক মারফত বাংলাদেশ থেকে আপনার জন্য একটা চিঠি আর বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত কিছু বই-পুস্তক পাঠিয়েছে। শুক্লা পরদিন বিকালে নন্দনের সামনে এসে-হতভম্ব। শুক্লার সামনে স্বয়ং দোদুল দাঁড়িয়ে। এবার শুক্লার ভেতর বাঁধভাঙা জোয়ার আর পূর্ণিমার জ্যোৎস্না একসময়ে আছড়ে পড়ে। কোনো রাখঢাক না করেই বলে- দোদুল আজকের এই আনন্দ আমি সারা জীবনব্যাপী চাই। আমি তোমাকে চাই জীবনব্যাপী- প্রতিটি শ্বাস-প্রশ্বাসে। মেয়েদের মুখে এমন প্রবল ও প্রতাপ প্রেম নিবেদনে দোদুল লজ্জা পায়। সে ভাবে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ মনে হয় একটু বেশি খোলামেলা। তাই শুক্লার এমন করে বলা। বিষয়ের নেপথ্যে যাই থাক শুক্লার মুখে এমন স্বগতোক্তি দোদুলকে পরিপূর্ণ করে তোলে। তার শরীর ও মনে তিনগাড়ি বদলিয়ে বর্ডারে পৌঁছানো, রাতের আঁধারে গরুর দালালদের সঙ্গে অবৈধ পথে বর্ডার পার- অতপর পায়ে হেঁটে ও গাড়িতে কলিকাতা- এতো ঝুঁকি ঝামেলার কোনো রেশ নেই। দোদুল আজ জগৎজয়ী এক বীর। এরপর দোদুল শুক্লার সম্পর্ক ধীরে ধীরে জমে পায়েশ। কিন্তু ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কাঁটাতার পাসপোর্ট, ভিসার জঞ্জাল দোদুল-শুক্লার সম্পর্কে বাধার চীন প্রাচীর হয়ে দাঁড়ায়। দোদুলের যে ছোটখাটো ব্যবসা ছিল তাও লাটে উঠেছে। দোদুলের শুক্লার ঘেরাটোপে আচ্ছন্ন থাকে সকাল-সন্ধ্যা। হাতে ৩-৪ হাজার টাকা সংগ্রহ হলেই সোজা তিনগাড়ি ভেঙে বর্ডার তারপর ৩০০-৪০০ টাকা দিয়ে দালাল মারফত বর্ডার পার। এরপর টেম্পো, বাস ও রেলযোগে কলকাতা।
কলকাতার চাপাগলির অল্প ভাড়ার চিত্রকর হোটেলে থাকা, কলকাতার মুড়ির টিন মার্কা টাউন সার্ভিস বাসে চলাফেরা- একবারে পাংশে। তবুও সব না ভালো লাগাগুলো ভালো লাগায় পূর্ণ হয় শুক্লার দর্শনে। মাঝে মাঝে একাগ্র হয়ে দোদুল ভাবে কত মেয়েই তো আছে বাংলাদেশে কিন্তু আমি শালায় কেন এই মেয়েটার জন্য এত উতলা। খুব সাধারণ একটা মেয়ে শুক্লা। কিন্তু এই মেয়ের সবকিছু এতো টানে কেন? দেখলেই মন ভালোলাগার দুয়ারে প্রবেশ করে। উত্তর পায় না সে। তবে শুক্লার প্রতি টনটনে টান যে তার বড় বাড়ন্ত সেটা অনুভব করে সে।
ইদানীং চোরা পথে ভারত যাওয়া অনেক রিক্স হয়ে গেছে। বিএসএফ বড় বেপরোয়া। অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দেখলেই গুলি। সোজাসাপটা হিসেবে। একেবারে বরাবর হিসেব। এই জানের মায়া, বুক দুরদুর কিন্তু জানপাখি শুক্লার জন্যও জান যায়। প্রতিবার কলকাতা যাব কি যাব না এ নিয়ে দোদুলের দ্ব›দ্ব কাজ করে, কিন্তু সব বাধা সব ভয়কে জয় করে শুক্লার অপেক্ষার প্রহর। দিব্যদৃষ্টি দিয়ে দোদুল দেখতে পায় সীমান্ত পেরুলেই দাঁড়িয়ে আছে দুহাত বাড়িয়ে শুক্লা তার বুকে মাথা গুঁজে দিয়ে সমুদ্রের বেলাভূমির ঢেউ যেমন কূলে ঝাপটা দিয়ে পরিসমাপ্তিতে যায়- দোদুল যেন তাই। শুক্লার প্রতি শরীরের টান আছে। বাড়ন্ত যৌবনের আমিষ খাওয়া শরীরের নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুতে যুবকের যেটুকু থাকে। তার পুরোটাই দোদুলের আছে। কিন্তু মনের টানটাও অনেক বেশি। দোদুল কল্পলোকে ভাবে শুক্লাকে জাপটে ধরে সে বুঝি পরপারের অনন্তকালও দিব্যি পার করে দিতে পারবে। মাঝে মাঝেই দোদুল ভাবে পরপারে যদি শুক্লাকে ধরে একটা অনন্ত ঘুম দেয়া যেত- মন্দ হতো না।
দোদুল কলকাতায় অনেকবার শুক্লাকে বলেছে চলো আমরা পালিয়ে বাংলাদেশ চলে যাই। শুক্লা খুব সাদামাটা করে জবাব দিয়েছে আমাদের চলার পথের গন্তব্য তুমিই ঠিক করবে আমি সব সময় তোমার সাথে সহমত পোষণ করবো। এমন একপেশে ভরসা বিশ্বাস দোদুলের জীবনে পরম পাওয়া। মনে হয় জীবন সায়াহ্নে যদি প্রশ্ন করা হয় তোমার জীবনের অর্জন কী সে বলবে আমি জীবনে একজনের নিরঙ্কুশ ভরসা অর্জন করেছিলাম। এমন ভাবনায় মন ভরে যায় দোদুলের। কিন্তু শুক্লাকে জীবনব্যাপী কাছে পাওয়ার অদম্য ইচ্ছে দোদুলকে কুরে কুরে খায়। শত বাধার ভাবনায় দোদুল কুঁকড়ে যায়।
মাঝে মাঝেই দোদুল ভাবে চোরা পথে আর কলকাতা যাবে না। কিন্তু পাসপোর্টের এতগুলো টাকা ভিসার জন্য দালালের ৩-৪ হাজার টাকা। ভিসা ফি, ভ্রমণকর, বর্ডার পারাপারে ঘাটে ঘাটে টাকা কত ঝামেলা। তারপর বর্ডারের লম্বা লাইন ইমিগ্রেশনের লোকজনের দুর্বিষহ দুব্যবহার- মন সায় দেয় না। বরং বিএসএফের বন্দুকের নলটা একটু এড়িয়ে বর্ডারটা পার হলেই বাঁচা। শুক্লা দুষ্টুমি করে মাঝে মাঝে বলে তুমি এতো ঝুঁকি-ঝামেলা না করে একেবারে কলকাতায় বিয়ে করে সেটেল্ড হয়ে যাও। দোদুল সহজ করে বলে আমার দেশ ছেড়ে আসার একটা পিছুটানতো আছে তারপরও কলকাতায় স্থায়ী হতে ভালো লাগবে না আমার। এ শহরের বেশির ভাগ মানুষ নিজেকে নিয়ে বড় ব্যস্ত, বড় আত্মকেন্দ্রিক। নিজের কাজ, নিজের কথা শেষ হলেই অপরের কথা, কাজে আগ্রহের ভাটা পড়ে। বড় ব্যস্ত কলকাতা। আর হবেই না কেন- এখানে টিকে থাকতে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হয়। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ এখনো ২-৩ ঘণ্টা ট্রেনে চেপে কর্মস্থলে যায়। কিংবা পায়ে হেঁটে বা বাইসাইকেলে অনেকদূরে অফিসে যায়। আমরা এখনো এতটায় অভ্যস্ত হইনি। দোদুল আবার কলকাতার মানুষের সাফাই করে বলে তাদের জীবন প্রণালি তাদের আত্মকেন্দ্রিক করে একক মানুষের বেদিতে দাঁড় করিয়েছে। সামগ্রিকভাবে ভাববার ও বোঝাবার সুযোগ কম। এটা টিকে থাকার একটা প্রণালি মাত্র।
বাংলাদেশ-পশ্চিমবঙ্গ বারবার যাতায়াতে দোদুলের মধ্যে বেশ কিছু পর্যবেক্ষণ চোখে পড়েছে। দোদুল নানাজনের সাথে আলাপচারিতায় বলে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কাজের প্রতি বিশেষত সৃজনশীল কাজের প্রতি একাগ্রতা ও লেগে থাকার বাসনা প্রশংসনীয়। নাগরিক জীবনে তারা যেমন সব সময় অস্থির ও অসহিষ্ণু বিপরীত সৃজন কর্মে বিশেষত লেখালেখির ক্ষেত্রে তাদের অসহিষ্ণু মন প্রতিটি বিষয়ে লেখার ক্ষেত্রে দরদ প্রশংসনীয়। লেখার ক্ষেত্রে ও পড়ার ক্ষেত্রে তারা অনেক সময় দেয়। এক্ষেত্রে তাদের কৃচ্ছ্রতা কার্পণ্য নেই।
দোদুল দেখেছে তিন শার্ট, দুই প্যান্টের মালিক অনেক লোক এক চপ্পল পরে দুই বছর পার করে। দশ টাকা বন্ধু আড্ডায় ব্যয়ে দশদিকে তাকিয়ে দশবার ভাবে। কিন্তু সেই তরুণ ধারদেনা করে লিটল ম্যাগাজিন ছাপায় বিনে পয়সায় লোকেদের মাঝে বিতরণ করে- এমনটা দেখে শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে যায়।
দোদুল-শুক্লা শুধু প্রেমালাপ নয়, বিশ্বজগতের নানা বিষয় নিয়ে কথা বলে কখনো নন্দনে, কখনো গাছের ধারে, কখনো ভিক্টোরিয়ার মাঠে বা অন্য কোথাও। প্রেমিক-প্রেমিকার প্রেমালাপ, রসালাপের উপস্থিতি তাদের আলাপের আঙ্গিকতায় কম প্রবেশ করে।
নানা বিষয়ে বাদানুবাদও হয়। পক্ষ-বিপক্ষ হয়। আলাপ গড়িয়ে তর্কযুদ্ধে পরিণত হয়। আবার আলাপ কখনো মীমাংসিত বা অমীমাংসিত হয়ে আলাপের প্লট থেকে বেরিয়ে বন্ধুসুলভ অন্য গল্পে পথ গড়ায়। অন্য দশজনের মতো তাদেরও মনে হয় জীবনটা যদি গঙ্গার ধারে কিংবা ভিক্টোরিয়ার মাঠে বসে

পার করিয়ে দেয়া যেত। কিন্তু জীবনতো চলে জীবনের রসায়নে, গণিতে। এ চক্রে ভাত আছে, রুটি আছে, মাছ আছে, ডাল আছে, খাট আছে, বালিশ আছে, ছেলেমেয়েসহ বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের নানা রসদ। প্রেমের আগামীদিন নিয়ে খুব বেশি ভাবতে চায় না দোদুল-শুক্লা। কারণ সামনের দিনের ভাবনায় নানা জটিলতা সামনে আসে- বুক কেঁপে ওঠে। চোখের ঈশান কোণে জলকণা জমা হয়। তাই বর্তমানের পাশাপাশি মাঝে মাঝে বসে অন্তর জুড়ানো আগামীদিনের ভাবনার চেয়ে ঢের ভালো। ভালোবেসে একে অপরকে শয্যাসঙ্গী রূপে পাওয়া না হলেও যে জীবন শেষ হয়ে যাবে এখানকার মানুষের জীবন সচরাচর এমন নয়। বরং প্রেমের বিচ্ছেদে জগতের নিয়ম দুজন জগৎ কর্মে জড়িয়ে ভাবনার ক্যানভাসে দুজনের মধ্যে যোজন দূরত্ব তৈরি হয়। হয়তো কখনো পড়ন্ত বিকেলে বা নির্ঘুম রাতে বা বিশেষ কোনো মুহূর্তে প্রেমিক-প্রেমিকা একে অপরকে স্মরণ করে দুঃখ বিলাস করে।
দোদুল আজকাল উপলব্ধি করে শুক্লার প্রতি তার শারীরিক টান কম। মনভাবনায় প্রথম প্রেমে পড়ার মতো কল্পলোকে বিছানায় শুক্লাকে কল্পনায় টানানো প্রেমিক-প্রেমিকার তৃষ্ণা মন-মানস, ভাবনা-চিন্তা শরীর সব জড়িয়ে কিন্তু দোদুল-শুক্লার সম্পর্কে দিন দিন শরীরের কলকব্জার গুরুত্ব কমছে- এ এক আনন্দের বিষয়। দুজনের কথাবার্তায়ও বিষয়গুলো উঠে আসে। বাঙালির জীবন বাস্তবতায় প্রেম সংসারে গড়াবেই এমন ধ্রæব ভাবনা নিয়ে প্রেম এগুনো ঠিক না। বরং বিচ্ছেদ পরবর্তী বিগত দিনের একসময়ের সুখময় স্মৃতিও তো অনেকটা আনন্দের। তবে সেটা উপলব্ধি করার মতো মনের জোর ও ভাবনার জমিন চাই।
এমন সব ভাবনার সময়ে এক ফেব্রুয়ারি মাসে দোদুল কলকাতায় পৌঁছে শুক্লাকে বরাবরের মতো ফোন দেয়। শুক্লা ফোন ধরে ধীর হয়ে বলে দোদুল আমার বিয়ে হয়ে গেছে। আমার খুব একটা কিছু করার ছিল না। আর আমিও ডেসপারেট হতে চাইনি। তাই তোমাকে জানাইনি। তুমি চাইলে আমি তোমার সাথে দেখা করতে পারি আগের মতো আড্ডাও দিতে পারি। শুক্লার আপ্তবাক্য ‘তুমি চাইলে’। দোদুল প্রশ্ন করে, তুমি চাও না। শুক্লা- আমিও আগের মতো চাই তবে কাছে এসে কাছে পাওয়ার বাসনা বাড়িয়ে লাভ কী? দোদুল- আমাদের সম্পর্ক তো লাভ-ক্ষতি, পাওয়া-না পাওয়া, কথা দেয়া, পণ করার এগোয়নি। আমাদের তো পরস্পরের মধ্যে একসাথে জীবন যাপনের কোনো প্রতিজ্ঞা নেই। শুক্লা- সব সত্য। আমি কী নন্দনে আসবো? দোদুল- তোমাকে পরে জানাচ্ছি।
দোদুলের চারপাশে অন্ধকার মনে হয়। সোজা বাংলাদেশে চলে আসে। এখন সে শুক্লার সাগরে এমনভাবে ভাসছে তার কোনো তল নেই, কূল নেই শুধু বিরামহীন ভেসে চলা। নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করে। আমিতো আগে কত ভেবেছি শুক্লাকে হয়তো সারা জীবনের জন্য পাব না। এমন মেনে নিয়েই এগুতে হবে, তবে আজ কেন তার পা চলে না। শরীর চলে না। মুখ কথা বলে না। সবকিছুতেই বিরক্তি। মনে হয় সারা দুনিয়াকে কার্টুনে ভরে স্কচটেপ দিয়ে পেঁচিয়ে সৌরজগতের বাইরে ফেলে দেই। আর দাঁড়িয়ে থাকবো অসীম শূন্যে। এখন শরীরও অদম্য ভাবে শুক্লাকে চায় অন্য কোনো মেয়েও যেন তার আলাপে, গল্পে, শয্যায় চলবে না। শুক্লা যেন বিকল্পহীন। দোদুল ভাবে এই অবস্থা চললে তার জীবনতো ফানাফানা।
যতই দোদুল নিজেকে শুক্লা জ্বর থেকে মুক্ত করতে চায় ততোই শুক্লা জ্বরে নিমজ্জিত হয় সে। দোদুল ভাবে পাওয়ার আনন্দের চেয়ে না পাওয়ার বেদনা কি ঢের বেশি নাকি অন্যকিছু…।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়