গ্রামীণ কল্যাণ : চাকরিচ্যুত শ্রমিকদের লভ্যাংশ দেয়ার রায়ে ৬ মাসের স্থিতাবস্থা

আগের সংবাদ

সংকট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চ্যালেঞ্জ

পরের সংবাদ

হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের মতবিনিময় সভা : অসাম্প্র্রদায়িক বাংলাদেশ থেকে সরে এসেছে দেশ

প্রকাশিত: জুন ১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ থেকে দেশ এখন অনেকটা সরে এসেছে। তাই অসাম্প্রদায়িক ঘটনা বাড়ছে। ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে সরকার, নির্বাচন কমিশন ও মানবাধিকার কমিশন ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করেন নাগরিক সমাজের নেতারা। ‘জাতীয় নির্বাচন-২০২৪ : ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘু জনগণের অধিকার’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় তারা এ মন্তব্য করেন।গতকাল বুধবার বিকালে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের দ্বিতীয় তলার সেমিনার কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ আয়োজিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের অন্যতম সভাপতি অধ্যাপক ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক। লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রানা দাশগুপ্ত। বক্তব্য রাখেন- বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী এডভোকেট সুলতানা কামাল, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, মানবাধিকার কর্মী খুশী কবির, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলী ও মফিদুল হক, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, ঢাবির ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর, আদিবাসী নেতা সঞ্জীব দ্রং, সাংবাদিক সোহরাব হাসান, সুভাষ সিংহ রায় প্রমুখ।
সভায় লিখিত বক্তব্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর সক্রিয় অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টির দাবি জানায় বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। এজন্য একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ইশতেহারে যে অঙ্গীকার করেছিল সেগুলো পূরণের দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো- জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন ও বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন, পার্বত্য শান্তি চুক্তি, পার্বত্য ভূমি কমিশন এবং অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন এবং সমতলের আদিবাসীদের জন্য আলাদা ভূমি কমিশন গঠন।
সুলতানা কামাল বলেন, ’৭৫ থেকে ২০ বছর রাষ্ট্রকে সাম্প্রদায়িক করা হয়েছে। এ সময় যে বিষাক্ত বীজ বপন করা হয়েছে সেটি ডালাপালা মেলেছে। আমাদের প্রত্যাশা ছিল আওয়ামী লীগ সরকারে এলে পরিস্থিতির বদল হবে। কিন্তু তারা সেই বিষবৃক্ষের মূল উৎপাটন না করে তাতে জল সিঞ্জন করেছে। তিনি আরো বলেন, জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের দাবি করা হচ্ছে। কিন্তু আওয়ামী লীগইতো তাদের সব এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে দিচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তি অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে তারা যা করতে চেয়েছে তা করেছে। স্বপক্ষের শক্তি তা করেনি। সমাজ বদলের কাজ তারা করেনি। এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। ইশতেহারে যে প্রতিশ্রæতি আওয়ামী লীগ দিয়েছে তা যে তারা পূরণ করেনি এ নিয়ে তাদের কোনো লজ্জাবোধ ও জবাবদিহিতা নেই।
শাহরিয়ার কবীর বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে আওয়ামী লীগ সরে এসেছে এবং হেফাজত আওয়ামী লীগের বন্ধু। নির্বাচন এলেই ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উদ্বেগ ও শঙ্কার মধ্যে থাকতে হয়। ২০০১ সালের নির্বাচন তেমনি একটি নজির স্থাপন করেছে। মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নজরদারিতে নির্যাতন কমলেও উদ্বেগ কমেনি। সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দিতে সরকার, মানবাধিকার কমিশন ও নির্বাচন কমিশন ব্যর্থ হয়েছে। দ্বাদশ নির্বাচনের সময় চলে এসেছে কিন্তু একাদশ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যে প্রতিশ্রæতি দিয়েছিল তা পূরণ হয়নি। এটা আমাদের দুর্ভাগ্য।
সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন এখনো প্রণয়ন না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, এই আইন না হলে আগামীতেও হয়তো সংখ্যালঘুরা নির্যাতনের শিকার হবেন। আগামী নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন দেশ আমাদের ওপর বিভিন্ন নসিহত দিচ্ছে। অথচ ২০০১ সালে ন্যক্কারজনকভাবে সংখ্যালঘুদের ওপর যখন সহিংসতা হলো তখন আমেরিকা কোথায় ছিল? আমেরিকার সঙ্গে জামায়াতের যে সখ্য তা নতুন নয়।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশ এখন অনেক বেশি সাম্প্রদায়িক হয়েছে। বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যাওয়ার রাজনৈতিক অবস্থা এখন আর নেই। দেশে বিপন্নতা আগের চেয়ে আরো বেশি বেড়েছে। যে রাজনৈতিক দলের ওপর আস্থা রাখতে চাই তারাওতো তাদের প্রতিশ্রæতি পূরণ করল না। রাজনীতি যে দিকে যাচ্ছে তাতে পরিষ্কার- রাজনীতির যে নতুন মেরুকরণ হচ্ছে তাতে সংখ্যালঘু, নারী ও দুর্বল জনগোষ্ঠী আরো বেশি বিপন্ন হবে।
রামেন্দু মজুমদার বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতা ১০ গুণ বেড়েছে। এই সাম্প্রদায়িকতা সবার সামনে নীরবেই হয়েছে- যা আমরা অনুভব করি না। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের কথা আমরা বলি বটে কিন্তু দেশে সাম্প্রদায়িকতা বেড়েছে।

তাই অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে ফিরে যাওয়া নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। আমি জীবদ্দশায় তা দেখতে পাবো বলে মনে করি না। তবে নতুন প্রজন্মের প্রতি আমি আস্থাশীল। তারা যদি সোচ্চার হয় তাহলে হয়তো তা সম্ভব।
খুশী কবির বলেন, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিলের দাবি স্পষ্ট হতে হবে। তা না হলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে এটি ব্যবহৃত হবে।
ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর বলেন, যখন একটি রাজনৈতিক দল নির্বাচনী ইশতেহারে যে সব প্রতিশ্রæতি দিয়ে নির্বাচনে জয়ী হয় তখন সেই প্রতিশ্রæতি সামাজিক চুক্তিতে পরিণত হয়। আওয়ামী লীগ সরকার সেই প্রতিশ্রæতি পূরণে এখনো কোনো উদ্যোগ নেয়নি। তাহলে তারা সামাজিক চুক্তি লঙ্ঘন করেছে।
মফিদুল হক বলেন, সমস্যাটা শুধু সংখ্যালঘুর নয়। আমাদের সবার। জাতি একটি ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে। আন্তঃধর্মীয় সংলাপ এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল বলেন, মুক্তবুদ্ধি মানুষের বিষণ্নতা ও হতাশার জন্ম দিচ্ছে। সংসদে যেসব সংখ্যালঘু সদস্য রয়েছেন তারাও তাদের অধিকার নিয়ে কোনো কথা বলছে না। এটা হতাশাজনক।
সোহরাব হাসান বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে সভা-সমাবেশের জন্য হেফাজতকে অনুমতি দেয়া হয়েছে। নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। দেখা যাবে নির্বাচনে আগে জামায়াতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের লিখিত বা অলিখিত কিছু হবে।
ডা. সারওয়ার আলী বলেন, গত কয়েক দশকে সমাজে অনেক পরিবর্তন এসেছে। এই চ্যালেঞ্জ সরকারের একার পক্ষে মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। মুক্তিযুদ্ধের সব শক্তির ঐক্যর প্রয়োজন।
রাজনীতি থেকে সংস্কৃতি নির্বাসিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন সঞ্জীব দ্রং।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়