প্রকাশিত: জুন ১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
নুর আলম দুলাল, কুষ্টিয়া থেকে : বছরের ৩৬৫ দিনের মধ্যে ১৮০ দিনই বন্ধ থাকছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)। বাকি ১৮৫ দিন চলে বিশ্ববিদ্যালয়টির একাডেমিক কার্যক্রম। ফলে করোনাকালীন সেশনজট কাটিয়ে উঠতে পারছে না ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠটি।
এদিকে সেশনজটের অভিশাপ নিয়ে বছরের অর্ধেক সময় বন্ধ থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, এই ১৮০ দিনের মধ্যে শুক্র ও শনিবারের মোট সাপ্তাহিক ছুটি ১০৫ দিন। এছাড়া ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা, দুর্গাপূজা, গ্রীষ্ম ও শীতকালীনসহ অন্যান্য ছুটি মিলে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকছে ৭৫ দিন। উপাচার্যের হাতে সংরক্ষিত আছে কয়েক দিনের ছুটি।
এদিকে, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে ইবির সব বিভাগে সেমিস্টার পদ্ধতি চালু হয়েছে। এ নিয়মে প্রতি বিভাগকে বছরে দুটি সেমিস্টার সম্পন্ন করতে হয়। দীর্ঘ ছুটি থাকার কারণে অনেক বিভাগের শিক্ষকরা ক্লাস শেষ না করেই পরীক্ষা নিয়ে থাকেন।
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন, ইংরেজি, আল-ফিকহ এন্ড লিগ্যাল স্টাডিজ, ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই), পরিসংখ্যান বিভাগসহ কয়েকটি বিভাগে সেশনজট সৃষ্টি হয়েছে। এই বিভাগগুলো সেশনজট কাটানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছে। এদিকে প্রকৌশল, বিজ্ঞান ও জীববিজ্ঞান অনুষদের অধীনে বিভাগগুলোতে মূল পরীক্ষার পাশাপাশি রয়েছে ব্যবহারিক পরীক্ষাও। এসব বিভাগের তত্ত্বীয় পরীক্ষা শেষ হতে এক মাসেরও বেশি সময় লেগে যায়। এছাড়া ব্যবহারিক পরীক্ষায় সময় লাগে আরো ১৫ দিন। সেমিস্টারের দীর্ঘ সময় পরীক্ষা থাকায় সময়মতো কোর্স সম্পন্ন হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী, প্রতি সেমিস্টারে শিক্ষকরা অন্তত সাড়ে তিন মাস ক্লাস নেবেন। তাহলে দুই সেমিস্টার মিলে ক্লাস নিতে হবে ৭ মাস। আর ক্লাস শেষের ১৫ দিন পর পরীক্ষা হবে। এক সেমিস্টারের পরীক্ষা শেষ করতে সময় লাগে অন্তত এক মাস। সেই হিসাবে কোর্স ও পরীক্ষায় সময় লাগার কথা ৯ মাস, অর্থাৎ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষার জন্য ২৭০ দিনের প্রয়োজন। কিন্তু ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ১৮০ দিনে তাদের ক্লাস ও পরীক্ষা সম্পন্ন করতে হবে। ফলে নির্দিষ্ট সময়ে ক্লাস-পরীক্ষা শেষ করতে পারছে না বিভাগগুলো।
ইইই বিভাগের শিক্ষার্থী আল-আমিন হোসেন বলেন, আমাদের তত্ত্বীয় পরীক্ষার পাশাপাশি ব্যবহারিক পরীক্ষাও হয়। এটি ভালোভাবে সম্পন্ন করতে সময়ের প্রয়োজন। এজন্য ছুটি কমিয়ে ক্লাসের সংখ্যা বাড়ালে শিক্ষার্থীদের উপকার হবে।
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ফেরদৌস বলেন, আমরা ১ থেকে ২ বছরের সেশনজটে পড়েছি। আমরা যে আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলাম সেই মনোবল ভেঙে যাচ্ছে। এদিকে স্নাতক শেষে সরকারি চাকরির বয়সও থাকছে না। অথচ শিক্ষকরা চাইলেই শিক্ষার্থীদের দুশ্চিন্তা দূর করতে পারেন।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমরা এ বিষয়ে একটি মিটিং করেছি। ছুটি কমাতে শিক্ষকদের কেউ কেউ একমত হয়েছেন। আবার অনেকেই বিরোধিতা করেছেন। এজন্য বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, অনেক শিক্ষক-কর্মকর্তা ছুটি নিয়েছেন। হঠাৎ পরিবর্তন করতে গেলে বিশৃঙ্খলা হতে পারে। ছুটির বিষয়টি আগামী বছর থেকে সমাধান হবে। তবে বিভাগগুলো চাইলেই সেশনজট কমিয়ে আনতে পারে।
শেয়ার করুন
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।