গ্রামীণ কল্যাণ : চাকরিচ্যুত শ্রমিকদের লভ্যাংশ দেয়ার রায়ে ৬ মাসের স্থিতাবস্থা

আগের সংবাদ

সংকট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চ্যালেঞ্জ

পরের সংবাদ

অবশেষে জামায়াত শিবির নিয়ন্ত্রিত ‘ইসকপ’ উচ্ছেদ

প্রকাশিত: জুন ১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অফিস : বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাবিরোধী দল জামায়াতে ইসলামী নানা নামে, নানা সংগঠনের ব্যানারে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। বর্তমানে কিছুটা বেকায়দায় থাকলেও তাদের কার্যক্রম চলছে নানা নামে। চট্টগ্রামে সিরাতুন্নবী মাহফিলের নামে জামায়াতে ইসলামী তাদের প্রতিষ্ঠান ‘ইসলামী সমাজকল্যাণ পরিষদ’ বা সংক্ষেপে ‘ইসকপ’ এর মাধ্যমে অত্যন্ত কৌশলে তাদের প্রচারণা চালিয়ে আসছিল। বিতর্কিত ইসলামী বক্তা জামায়াত নেতা যুদ্ধাপরাধী হিসেবে দণ্ডপ্রাপ্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী এই ইসকপ এর মাধ্যমেই জনগণকে ইসলাম সম্পর্কে নানা অপব্যাখ্যা দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন। বিশেষ করে চট্টগ্রামে আশির দশক থেকে নির্বিঘেœ এই ইসকপ এর মাধ্যমেই সহজে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানোর কাজটি তারা বেশ সুকৌশলেই করেছে। তবে শেষ রক্ষা হলো না ইসকপ এর।
চট্টগ্রাম নগরীর চট্টগ্রাম কলেজ রোড এলাকা থেকে ওই ইসলামী সমাজকল্যাণ পরিষদের কার্যালয় উচ্ছেদ করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের একটি ভ্রাম্যমাণ আদালতের টিম। জেলা প্রশাসন, স্থানীয় রাজনীতিবিদসহ চট্টগ্রামের সচেতন রাজনীতিবিদদের সূত্রে জানা গেছে, সরকারি জমি দখলে রেখে সংগঠনটি দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। সামাজিক সংগঠনের আড়ালে জামায়াত-শিবির এ কার্যালয়কে তাদের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছিল। মঙ্গলবার নগরীর চকবাজারে চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ ছাত্রাবাসসংলগ্ন ইসলামী সমাজকল্যাণ পরিষদের কার্যালয় উচ্ছেদে অভিযান চালানো হয়। জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের নির্দেশে এই অভিযানে নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত। উচ্ছেদ অভিযানসহ এই সম্পত্তির ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, পাকিস্তান আমলে ১৯৬৭ সালে ইসলামী সমাজকল্যাণ পরিষদ নামে সংগঠনটি শহরের চকবাজারে কাসিমপুর মৌজায় অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত ৫ দশমিক ৪০ শতক জমি ইজারা পায়। পরবর্তী সময়ে তারা আশপাশের আরো সরকারি জমি দখলে নিয়ে দোতলা ভবন গড়ে তোলে। সেখানে সংগঠনের কার্যক্রমের পাশাপাশি একই ধারার বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকেও ভাড়া দেয়া হয়েছিল। তবে ইতোপূর্বে গত ৫০ বছর ধরে তারা নিয়মিত খাজনা পরিশোধের মাধ্যমে ইজারা দেয়া জমি দখলে রেখেছিল। একই সঙ্গে অবৈধভাবে দখল করা জমিতেও তারা কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। কিন্তু ২০১৮ সালের পর থেকে তারা আর ইজারা নবায়ন করেনি। ফলে তাদের এই দখলদারিত্বটি পুরো অবৈধ হয়ে পড়ে ইজারা না দেয়ার কারণে। কিন্তু তারা অবৈধভাবে পুরো জায়গাটি দখলে রেখে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল বলে জানান এনডিসি। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত বলেন, দোতলা ভবনে ইসলামী সমাজকল্যাণ পরিষদের কার্যালয়ের পাশাপাশি দারুশ শেফা, হজ কাফেলাসহ আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান পাওয়া যায়। তবে সেগুলো তালাবদ্ধ দেখা যায়। সেগুলোকে সিলগালা করা হয়েছে। তিনি জানান, অভিযানে ইসলামী সমাজকল্যাণ পরিষদের কার্যালয় থেকে মতিউর রহমান নিজামীসহ যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে লেখা বিভিন্ন বিতর্কিত বই, জামায়াত-শিবিরের সাংগঠনিক নথিপত্র, প্রকাশনা, সংগঠনের ব্যানার উদ্ধার করা হয়েছে।
আশির দশকের শুরুতেই ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়নের কয়েকজন নেতাকে খুনের মধ্য দিয়ে চকবাজারে চট্টগ্রাম কলেজ ও হাজী মুহাম্মদ মহসীন কলেজ দখলে নিয়েছিল ছাত্রশিবির। তিন দশক পর ২০১৭ সালে ছাত্রলীগ ক্যাম্পাস থেকে শিবিরকে হটিয়ে দুই কলেজে তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। সেদিন ছাত্রলীগের সঙ্গে ছাত্রশিবিরের রক্তক্ষয়ী সংঘাত হয়। ওই সময় বিক্ষুব্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অদূরে ইসলামী সমাজকল্যাণ পরিষদের কার্যালয় ভাঙচুর করেছিল। তখন থেকেই জামায়াতে ইসলামীর অন্যতম বুদ্ধিবৃত্তিক ও কথিত ধর্মভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘ইসকপ’কে বন্ধ ও উচ্ছেদ করার দাবি জানিয়ে আসছিলেন তৎকালীন ছাত্রনেতা নুরুল আজিম রনিসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা। রনি বলেন, ‘সাঈদীর বয়ানের অধিকাংশ জুড়ে থাকত মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিদ্বেষপূর্ণ কথাবার্তা। জাতির পিতা, জননেত্রী শেখ হাসিনা, শহীদ জননী জাহানারা ইমামকে নিয়ে উসকানিমূলক নানা বক্তব্য দিতেন। উগ্র মৌলবাদ ছড়াতেন। আমরা এই সংগঠনের কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবি জানাচ্ছি।’
চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল করিম বলেন, ‘২০১৭ সালের ২১ আগস্ট আমরা দুই কলেজের ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে ইসলামী সমাজকল্যাণ পরিষদের কার্যালয় উচ্ছেদের দাবি জানিয়ে আসছিলাম। তবে এবার সরকারি প্রশাসন কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ায় কিছুটা স্বস্তিবোধ করছি।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়