রাজউক : মুছে যাওয়া সাড়ে ২৬ হাজার নথি উদ্ধার

আগের সংবাদ

বাজারে ফের সিন্ডিকেটের থাবা! : কারসাজি করে বাড়ানো হচ্ছে দাম, নজরদারি জোরদারের তাগিদ বিশ্লেষকদের

পরের সংবাদ

সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণে শুনানি শুরু : কুমিল্লার আবেদনকারীদের হাতাহাতিতে আহত ১

প্রকাশিত: মে ৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মে ৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ৩৮ সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের আবেদনের শুনানি শুরু হলো। সীমানা সংক্রান্ত ১৮৬ দাবি- আপত্তির আবেদন ইসিতে জমা পড়ে, যার মধ্যে শুধু কুমিল্লার ৫টি (১, ২, ৮, ৯ ও ১০) আসনের জন্য আবেদন জমা পড়ে ৮৪টি। গতকাল বুধবার কুমিল্লা অঞ্চলের আবেদনগুলোর শুনানি করে নির্বাচন কমিশন। এ শুনানিতে যেমন কেউ কেউ কুমিল্লা থেকে ১টি আসন বাদ দেয়ার আবেদন জানিয়েছেন, তেমনি ১টি আসন বাড়ানোরও আবেদন জানিয়েছেন অনেকে। আবার অনেকে ২০০৮ সালের সীমানায় ফিরে যাওয়ার আবেদন করেছেন।
তবে শুনানির প্রথম দিনে কুমিল্লা-১ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের পক্ষে বিপক্ষের লোকরা নির্বাচন ভবনের সামনে নিজেদের মধ্যে প্রথমে বাগবিতণ্ডা ও পরে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন। পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করার আগে এক নারী আহতও হন। শুনানি শেষে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে শুনানি শেষে। যতগুলো আবেদন আমাদের কাছে আছে সেগুলো কমিশন শুনবে। এখানে যে তথ্য-উপাত্ত দিয়েছে সেটাকে কমিশন বিশ্লেষণ করবে। এখানে একটি নীতিমালা আছে যেমন প্রশাসনিক অখণ্ডতা, ভৌগোলিক অখণ্ডতা, জনসংখ্যা, ভোটার সংখ্যা, অন্যান্য পারিপার্শ্বিক বিষয় বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন। জুলাই মাসের মধ্যে এটা শেষ করার কথা রয়েছে।
তিনি জানান, শুনানিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনের নবীনগরের একটি অংশ আরেকটি আসনের সঙ্গে বিভক্তি ছিল। তার পক্ষে-বিপক্ষে আবেদন করা হয়েছে। কেউ চাচ্ছেন আগের মতো বহাল রাখার জন্য আবার কেউ চাচ্ছেন কয়েকটি ইউনিয়ন অন্য জায়গা থেকে সংশোধন করে আরেকটি আসনের সঙ্গে সংযুক্ত করার জন্য।
কুমিল্লা-১ আসনের মধ্যে রয়েছে কুমিল্লা, দাউদকান্দি এবং মেঘনা উপজেলা। কুমিল্লা-২ এর মধ্যে রয়েছে হোমনা এবং তিতাস উপজেলা। কুমিল্লার মেঘনাবাসীদের পক্ষ থেকে সেখানকার আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং তার পক্ষে অনেক জনপ্রতিনিধি রয়েছেন। মেঘনা উপজেলাটিতে তারা প্রশাসনিক এবং ভৌগোলিকভাবে দাউদকান্দি এবং হোমনার সঙ্গে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। সুতরাং, সেটা কুমিল্লা-১ থেকে ২ এর সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করে এবং ২ এর সঙ্গে যে বিদ্যমান তিতাস উপজেলা রয়েছে সেটাকে হোমনা থেকে বাদ দিয়ে দাউদকান্দির সঙ্গে সংযুক্ত করা। এটার পক্ষে-বিপক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা, নাগরিক সমাজ ও তাদের বিজ্ঞ আইনজীবী বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, প্রথমে ছিল দাউদকান্দি উপজেলা। সেখান থেকে হোমনা উপজেলা হয়েছে, তারপরে মেঘনা উপজেলা পরে তিতাস উপজেলা হয়েছে। ২০০৮ সালে বিভক্তির মাধ্যমে দাউদকান্দির সঙ্গে মেঘনা উপজেলা সংযুক্ত করে কুমিল্লা-১ আসন করা হয় এবং হোমনা উপজেলার সঙ্গে তিতাস উপজেলা সংযুক্ত করে কুমিল্লা-২ আসন সংযুক্ত করা হয়েছে। মেঘনার রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বক্তব্য হচ্ছে, যেহেতু হোমনা থেকে বেশির ভাগ অংশ নিয়ে মেঘনা উপজেলা গঠিত হয়েছে, এতে দাউদকান্দি উপজেলা দূরবর্তী হওয়ার কারণে তাদের যাতায়াতে অসুবিধা হওয়ায় তারা হোমনার সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার জন্য আবেদন করেছে।
ইসি সচিব বলেন, কুমিল্লাতে এক সময় ১২টি আসন ছিল। ২০০৮ সালে একটি আসনকে সমন্বয় করে ১১টি করা হয়। নাঙ্গলকোটের পক্ষে একজন সাবেক সংসদ সদস্য ও অন্যরা আবেদন করেছেন। এখানে একটি নতুন আসন অন্তর্ভুক্ত করার আবেদন করেছেন। নাঙ্গলকোট যেহেতু এক সময় একটি ইন্ডিভিজুয়াল আসন ছিল সেটাকে পুনর্বহালের আবেদনও জানিয়েছেন।
ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, কুমিল্লা-১ ও কুমিল্লা-২ আসনের সীমানা নিয়ে প্রায় ৬০টি আবেদন এবং ৮, ৯ ও ১০ আসনে ২৪টির মতো আবেদন জমা পড়ে। এগুলোর শুনানি হলো। একটিতে কুমিল্লা-১ (দাউদকান্দি- মেঘনা) ও কুমিল্লা-২ (হোমনা-তিতাস) আসনের সীমানা পরিবর্তন করে হোমনা ও মেঘনা উপজেলার সমন্বয়ে আসন পুনর্নির্ধারণ এবং আরেকটি আবেদনে কুমিল্লা-১ ও ২ আসনের সীমানা পরিবর্তন করে হোমনা ও মেঘনা উপজেলায় সীমানা পুনর্নির্ধারণ চাওয়া হয়েছে। আবার কেউ কেউ ২০০৮-এর সীমানায় ফিরে যেতে আবেদন করেছেন। কেউ কেউ কুমিল্লায় একটি আসন বাড়ানো, আবার কেউ কেউ কুমিল্লায় একটি আসন কমানোর আবেদন করেন। তবে আসন কমানো বাড়ানো সম্ভব নয় বলে জানান এ অতিরিক্ত সচিব।
শুনানিতে এসে হাতাহাতি : এদিকে শুনানিতে এসে নিজেদের মধ্যে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন কুমিল্লা-১ ও ২ আসনের সংক্ষুব্ধরা, যারা দাউদকান্দি ও মেঘনা থেকে এসেছিলেন। তবে বড় কোনো ঘটনার আগেই পুলিশ এসে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এরই মধ্যে এক নারীর আঘাতে অন্য এক নারীর কপাল কেটে যায়। এছাড়া একটি গাড়ির গøাস ভাঙচুর ও কয়েকটি প্রাইভেটকার ধাওয়া করে তারা।
নির্বাচন কমিশনার ও সীমানা পুনর্নির্ধারণ সংক্রান্ত কমিটি প্রধান কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, আমরা প্রশাসনিক অখণ্ডতাকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছি। জনসংখ্যার প্রাধান্য সবচেয়ে কম দিচ্ছি। কেননা, জনসংখ্যাকে প্রাধান্য দিলে ঢাকার মতো শহরে আসন সংখ্যা আরো বেড়ে যাবে। গতকাল কুমিল্লার ৫টি আসনের শুনানি হলো। ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মোট ৩৮টি আসনের সীমানা পরিবর্তনের জন্য আবেদন জমা পড়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়