বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের : গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা বিএনপির কারণেই বারবার হোঁচট খায়

আগের সংবাদ

আত্রাই উপজেলা মিলনায়তনের পাশে জলাবদ্ধতা

পরের সংবাদ

ইফতার বাজারেও দামের উত্তাপ : নিম্নবিত্তের নাগালের বাইরে অনেক খাবার ও ফল

প্রকাশিত: মার্চ ২৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২৯, ২০২৩ , ১:৪১ পূর্বাহ্ণ

রকি আহমেদ : রমজানের শুরুতেই ইফতার বাজারে উত্তাপ ছড়াচ্ছে খাবারের দাম। সব খাবারই এবার গত বছরের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। শুধু তাই নয়, এক মাস আগে খাবার ও ফলের যে দাম ছিল, তার চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে রমজানে। ফলে মানসম্মত ইফতার অনেকটাই নি¤œবিত্তের নাগালের বাইরে চলে গেছে। দাম বেশি হওয়ায় কেনার পরিমাণ কমিয়েছেন মধ্যবিত্তরাও। তবে রমজানে দাম ও খাবারের মান ঠিক রাখতে মাসব্যাপী অভিযান চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ।
পুরান ঢাকার বৃহৎ ও ঐতিহ্যবাহী ইফতার বাজার চকবাজার ঘুরে দেখা যায়, গত বছরের তুলানায় প্রতিটি খাবারের দাম বেড়েছে। এ বছর সুতি কাবাব বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ টাকা কেজি, যা গত বছর ছিল ১ হাজার থেকে ১১০০ টাকা। ‘বড় বাপের পোলা খায়’ গত বছর ছিল ৬০০ টাকা কেজি। এ বছর বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকায়। আস্ত মুরগির গ্রিলের ৪০০ টাকা, যা গত বছর ছিল ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। আস্ত ব্রয়লার মুরগির রোস্ট ৩০০ টাকা, যা গত বছর ছিল ২০০ টাকা। আস্ত ছোট কোয়েল রোস্ট ৮০ টাকা, যা গত বছর ছিল ৫০ টাকা। এছাড়া চিকেন ড্রাম স্টিক ৯০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছর ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা। গত বছর শাহী পরোটা ২০ টাকায় বিক্রি হলেও এ বছর কিনতে হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়। এছাড়া ফালুদা ২০০ টাকা, পেস্তা বাদামের শরবত লিটার ২৪০ টাকা, দই বড়া ৩০০ টাকা, লাবাং লিটার ২০০ টাকা এবং ফিরনি ও জর্দা ২০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিটি খাবারের দাম বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ। অন্যদিকে ৩০০ টাকা বা তার বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি জিলাপি। গত বছর দাম ২০০ টাকার নিচে ছিল। গত বছর ৬০ থেকে ৭০ টাকায় এক কেজি মুড়ি মিললেও এ বছর লাগছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা।
চকবাজারের শাহী মসজিদের সামনে আস্ত কোয়েল-মুরগির রোস্ট ও নানা পদের কাবাব বিক্রেতা মো. মিলন বলেন, খাবারের দাম গত বছরের চেয়ে বেড়েছে। কারণ সব জিনিসের দাম এ বছর বেশি। উপাদানের দাম বেশি হওয়ায় আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এদিকে ৭৩ বছরের পারিবারিক ব্যবসার ধারায় এ বছরও চকবাজারে ‘বড় বাপের পোলায় খায়’ বিক্রি করছেন মোহাম্মদ হোসেন। গত বছর ৬০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে আলোচিত এ খাবার। তবে এ বছর তা বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকায়। মোহাম্মদ হোসেন বলেন, গত বছরের চেয়ে এ বছর কেজিতে ২০০ টাকা বেশি নেয়া হচ্ছে। কারণ এ খাবারের বড় উপাদান মুরগি। মুরগির দামই তো এখন আকাশছোঁয়া।
এছাড়া পুরান ঢাকার ফুটপাতে চিকেন ফ্রাই ৭০ টাকা, চিকেনের এক রান গ্রিল ১৩০, ফিরনি ৪০ টাকা, গরুর কোপ্তা ৪০ টাকা, চিকেন কোপ্তা ৩৫ টাকা, টিকেন টিক্কা ৬০ টাকা, চিকেন ঝালি কাবাব ৫০ টাকা, চিকেন সমুচা ৩০ টাকা, চিকেন রোল প্যাটিস ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আগে এ সব খাবার মধ্যবিত্তদের নাগালের ভেতর ছিল। এ বছর তারা কিনলেও পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন। সাধারণ ক্রেতারা বলছেন, চকবাজারের ইফতারি বাজার এখন শুধুমাত্র বিত্তবান ও খাবার বিলাসীদের জন্য। পছন্দের ঐহিত্যবাহী ইফতারি খাবার কিনতে এখানে ভিড় জমান উত্তরা, বনানীসহ ঢাকার অভিজাত এলাকার ক্রেতারা। চকবাজারে ইফতার কিনতে আসা সোলাইমান হোসেন বলেন, এ বছর তো সব জিনিসের দাম বেশি। তাই ইফতারের দাম একটু বেশি হবেই। তাই বলে তো খাবার না খেয়ে থাকা যায় না। যে খাবারের দাম বেশি, সে খাবার পরিমাণে কম নেয়া লাগবে।
অন্যদিকে মধ্যবিত্ত ও নি¤œবিত্তদের ইফতারের জন্য ভরসা রাজধানীর ফুটপাতের গলির দোকান। তবে এ বছর ফুটপাতের সাধারণ ইফতারেও লেগেছে দামের উত্তাপ। প্রতি পিস আলুর চপ, বেগুনি, পেঁয়াজু ৫ টাকায় বিক্রি হলেও গত বছরের তুলনায় ছোট হয়েছে আকার। জিলাপি বিক্রি হচ্ছে ২০০-৩০০ টাকা কেজি। মুড়ি থেকে শুরু করে ছোলার দামও এ বছর বেশি। হালি প্রতি লেবু ও কলার দাম বেড়েছে দেড় থেকে দ্বিগুণ। তবে রমজানের আগে এসব খাবারের দাম অনেক কম ছিল জানিয়েছেন ক্রেতারা।
এ বছর ইফতারের ফল যুক্ত করার কথা যেন ভাবতেই পারছেন না অনেক সাধারণ ক্রেতা। কারণ রমজানে ফলের দামও বেড়েছে অনেক। রায়সাহেব বাজার মোড়ে মাঝারি আনারস রমজানের আগে ৪০ টাকা বিক্রি হলেও এখন ৭০ টাকা বা তার বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। কলার হালি ৪০ থেকে ৫০ টাকা। ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকার তরমুজ দাম বেড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তেমনই আপেল, কমলা, আঙ্গুরের যোগান এ বছর ফুটপাতে বেশি থাকলেও দাম বেশি। এতে হতাশ হতে হচ্ছে নি¤œবিত্তদের। রায় সাহেব বাজার মোড়ে আনারস কেনার সময় আকবর আলী নামে এক রিকশাচালক বলেন, যে আনারস এখন ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে তা রমজানের আগে ৩০ থেকে ৪০ টাকায় কিনেছি। প্রতি রমজানে এমন দাম বাড়িয়ে দেয় তারা। আমাদের এত টাকা নেই যে আপেল-কমলা কিনব। এসব ফলের দামও যদি বেশি হয়, আমরা খাব কি। এদিকে রমজানে খাবারের মান ও দাম বজায় রাখতে নিয়মিত অভিযান চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। চকবাজারে অভিযান পরিচালনার সময় সংস্থাটির বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সুমন মজুমদার বলেন, রমজানে আমরা মাসব্যাপী অভিযান পরিচালনা করছি। যেন খাবারের দাম ও মান বজায় থাকে। আমাদের নির্দেশনা না মানলে জরিমানা করা হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়