বিশ্বের সর্ববৃহৎ ‘সবুজ মানব প্রাচীর’ তৈরি করল জিএলটিএস

আগের সংবাদ

ভোটের হাওয়ায় জোটের মিশন

পরের সংবাদ

এক পরিবারে খাবার খরচই মাসে ২২ হাজার ৬৬৪ টাকা

প্রকাশিত: মার্চ ২৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ঢাকা শহরে চারজনের এক পরিবারে প্রতি মাসে খাবারের পেছনেই খরচ হয় ২২ হাজার ৬৬৪ টাকা। তবে মাছ-মাংস না খেলে এই খরচ দাঁড়ায় ৭ হাজার ১৩১ টাকায়। এ হিসাব গত ফেব্রুয়ারি মাসের। মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে দেশের খাদ্য মূল্যস্ফীতি। অর্থাৎ মাছ-মাংস বাদ দিয়ে খাদ্যদ্রব্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ দশমিক ১১ শতাংশ, মাছ-মাংস যোগ দিলে মূল্যস্ফীতি ২৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ। একটি সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে মোট আয়ের ৬০ শতাংশ খাবারের পেছনে খরচ করতে হয়। অথচ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যে ফেব্রুয়ারিতে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বাজেট প্রস্তাববিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে গতকাল সোমবার এমন চিত্র তুলে ধরা হয়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনা অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, গবেষক ড. তৌফিকুল ইসলাম খান প্রমুখ।
সিপিডি বলছে, মাছ, মাংস, চাল, ডাল, তেল, মরিচ, হলুদ, আদা, রসুনসহ ১৭টি নিত্যপণ্যের প্রতিদিনের বাজারদর এবং একজন মানুষ গড়ে কী পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করে, এর ওপর ভিত্তি করে এ হিসাব করেছে।
ড. ফাহমিদা বলেন, চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না। অর্থবছরের ৬ মাস শেষে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত আদায় কমেছে ৩ দশমিক ১ শতাংশ। জুন শেষে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭৫ হাজার কোটি টাকা কম আদায় হতে পারে।
গত ডিসেম্বরের অর্থনীতির অবস্থা দেখে সিপিডি জানিয়েছিল, ঘাটতি ৫০ হাজার কোটি টাকা হবে। সেটি আরো বেড়ে যাওয়ার ব্যাখ্যায় ফাহিমদা খাতুন বলেন, রাজস্ব আদায়ে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে ভ্যাট খাত। আর বৈদেশিক মুদ্রার কড়াকড়িতে আমদানি কমে যাওয়ায় এবার খাতটি থেকে কম আদায় হয়েছে। এ ঘাটতি পূরণে সিপিডির পরামর্শ- করের আওতা বাড়াতে জোর দিতে হবে। বড় ব্যবসায়ীদের যে কর ছাড় দেয়া হয় তা বন্ধ করার সময় হয়েছে। রপ্তানি খাতে যেসব পণ্য শক্ত ভিতের উপর দাঁড়িয়েছে, তাদের ছাড় দেয়ার আর প্রয়োজন নেই।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, রপ্তানি বাড়াতে বিভিন্ন হারে প্রণোদনা দিয়ে থাকে বাংলাদেশ, বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে। এ খাতে যে প্রণোদনা দেয়া হয় তাও ভর্তুকি হিসেবেই যাচ্ছে। তিনি বলেন, গরিব ও সীমিত আয়ের মানুষ সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছে। দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি সামাল দিতে বেসরকারি খাতে ৫ শতাংশ বেতন বাড়ানো উচিত। পারলে এই ইদেই বেতন-ভাতা বাড়ানো যেতে পারে। এ ছাড়া জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলছে। তাই সব খাতের ন্যূনতম মজুরি বাড়ানো উচিত। এ ছাড়া এমন অবস্থায় আগামী বাজেটে করদাতাদের কিছুটা স্বস্তি দিতে ন্যূনতম করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৩ লাখ টাকা করার সুপারিশ করেছে সিপিডি।
বাজেটে ৬ খাতে গুরুত্ব দেয়ার পরামর্শ : সিপিডির সংবাদ সম্মেলনে সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, রাজস্ব নীতি কাঠামো সংস্কার, নিত্যপণ্যের দর বৃদ্ধি, ভর্তুকির পুনর্বিন্যাস, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য এবং পরিবেশ ইস্যুতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আগামী অর্থবছরের বাজেট তৈরির সুপারিশ করা হয়। ফাহমিদা বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি বেশ কিছু ঝুঁকির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এসব ঝুঁকি মোকাবিলার নীতিকাঠামো প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে।
৬ মাসে সরকার ব্যাংক খাত থেকে ৫১ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ নেয়ার কারণে ব্যাংকে তারল্য কমে যাচ্ছে বলেও মনে করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক। ব্যাংক খাতের ‘দুর্নীতি ও কেলেঙ্কারি বাড়ছে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমরা ব্যাংকিং খাতের প্রকৃত অবস্থা জানতে কমিশন গঠন করার জন্য বলে আসছি। কমিশন তাদের সুপারিশগুলো সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারবে। সেই অনুযায়ী কাজ করলে ফলাফল ভালো আসবে।
সুদহার এবং বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বাজারের উপর ছেড়ে দেয়ার পরামর্শও দেন ফাহমিদা। পাশাপাশি মূল্যস্ফীতির কারণে ব্যক্তির করমুক্ত আয়সীমা গতবারের মতই সাড়ে ৩ লাখ টাকা রাখার প্রস্তাব করেন।
আমদানি পণ্যে শুল্ক সমন্বয়ের সুপারিশ করে ফাহমিদা বলেন, বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়ার পরও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমেনি বাংলাদেশে, উল্টো বেড়েছে নিয়মিত। এজন্য আমাদের বাজার ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ সংস্থার অনেক দুর্বলতা রয়েছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের ‘দুরাবস্থার’ কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, চিকিৎসা খাতে ১০০ টাকা খরচ হলে তার ৭০ শতাংশেরই যোগান দেয় জনগণ। এ খাতে গুরুত্ব ও বরাদ্দ বাড়াতে হবে।
পরিবেশ ইস্যুতে ডিজেলের বিকল্প হিসেবে নবয়ানযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনে জোর দেয়ার জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) লাভজনক রয়েছে জানিয়ে সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সরকার বিদ্যুৎ খাতে অতিরিক্ত কেন্দ্র বসিয়েছে। বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হচ্ছে এ খাতে দেয়া ক্যাপাসিটি চার্জের কারণে। এখন বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে ভর্তুকির দায় জনগণের উপর চাপাচ্ছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তেলের দাম কমলেও আমাদের বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হচ্ছে। কৃষিতে ভর্তুকি অব্যাহত রেখে সামাজিক সুরক্ষার পরিসর বাড়ানোও সুপারিশ করেন তিনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়