প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বক্তারা : রাখী দাশ পুরকায়স্থ ছিলেন আপাদমস্তক দেশপ্রেমিক

আগের সংবাদ

বধ্যভূমি দেখার দায়িত্ব কার : সারাদেশে ৫ হাজারের বেশি বধ্যভূমি, ২২ বছরে ২০টি বধ্যভূমি সংরক্ষণ হয়েছে

পরের সংবাদ

শেষের মধ্যে অশেষ আছে

প্রকাশিত: মার্চ ২৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

যুগে যুগে পৃথিবীতে মহান মানুষদের আগমনে সমাজ পরিবর্তিত হয়েছে- বদল ঘটেছে আমাদের চারপাশ। যারা চোখে স্বপ্ন বুনেন একটি আদর্শিক সমাজ, যে সমাজের সবাই শিক্ষার আলোয় আলোকিত হবে। এই লক্ষ্যেই সমাজের সেই সব আলোকিত মানুষ দেশ গঠনে রেখে যান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। তেমনি একজন শিক্ষানুরাগী, কবি, প্রাবন্ধিক ও সমাজসংস্কারক মজিদ মাহমুদ। তার গড়া সংস্থা পাবনা জেলার স্বনামধন্য শীর্ষস্থানীয় সমাজ উন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ‘অর্গানাইজেশন ফর সোস্যাল অ্যাডভান্সমেন্ট এন্ড কালচারাল এক্টিভিটিস (ওসাকা)’ প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের অসামান্য সব কাজ করে চলেছে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যেমন বলেছিলেন- পশ্চাতে রেখেছ যারে সে তোমারে পশ্চাতে টানিছে। এই সম্মক বাণী তিনি হৃদয়ে ধারণ করে কাজ করে চলেছেন সমাজের পিছিয়ে পড়ার মানুষের অগ্রগতির জন্য। কবি মজিদ মাহমুদের স্বপ্নের বিকশিতরূপ আজকের এই চরনিকেতন সাহিত্য উৎসব।
বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলীয় জেলা পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী চরগড়গড়িতে গত ৩, ৪, ৫ মার্চ হয়ে গেল ‘চরনিকেতন সাহিত্য উৎসব-২০২৩।’ বিগত এক দশক ধরে এই ঐতিহ্যবাহী চরগড়গড়িতে মঙ্গলসভা, হেমন্তের কবিতা পাঠ, কবি কণ্ঠে শীতের কবিতা, বসন্তের কবিতা পাঠ, লোকউৎসব, বর্ষবরণসহ নানা অনুষ্ঠান পালিত হয়ে আসছে। বৈচিত্র্যময় এই অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সময় উপস্থিত থেকেছেন কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, কবি আসলাম সানী, কবি কাজী রোজী, কবি আসাদ মান্নান, শিশুসাহিত্যিক আমীরুল ইসলাম, কবি মাকিদ হায়দার, কবি জাহিদ হায়দার, কবি ও নাট্যকার ফরিদ আহমেদ দুলাল, কবি মাহমুদ কামাল প্রমুখ।
অন্যান্য বছরের ন্যায় এ বছরও এই অনুষ্ঠানে দুই বাংলার দেড় শতাধিক কবি, ঔপন্যাসিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, প্রকাশক এবং সমাজকর্মী অংশগ্রহণ করেছেন। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন কবি ও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চেয়ারম্যান শ্যামসুন্দর শিকদার। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, আমি এখানে না আসলে অনুভবই করতে পারতাম না এটা রীতিমতো এক চমৎকার ব্যাপার। আমার জানা নেই বাংলাদেশের কোথাও এমন চমৎকার অনুষ্ঠান হয় কিনা? একজন সংগঠক কিংবা কবির পক্ষে এত চমৎকার অনুষ্ঠান করা সম্ভব। এই যে প্রকৃতি সান্নিধ্যে আসার সুযোগ করে দিয়েছে কবি মজিদ মাহমুদ এটা আমাদের জন্য পরম পাওয়া। এই অনুষ্ঠানে আমি এসে বিমোহিত-মুগ্ধ-আপ্লুত। সবার মুখে একটাই কথা কবি মজিদ মাহমুদ এক পরিশীলিত মানুষ; তার পক্ষেই এভাবে কাজ করা সম্ভব। তিনি দিনকে দিন রবীন্দ্রনাথের যোগ্য উত্তরসূরি হয়ে উঠেছেন। যে কারণে এই চরগড়গড়ি জায়গাটার নাম রেখেছেন চরনিকেতন। যা প্রত্যেকের বক্তব্যে এসেছে এটা শান্তিনিকেতনের দিকেই গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে চলেছে। এখানে স্থানগুলোর নামকরণ করা হয়েছে- শকুনতলা, শ্রীশ্রী সন্ন্যাসীতলা, আগরতলা। বিল্ডিংয়ের নাম রাখা হয়েছে বিশ্বকুঠির। যা সৃজনশীল মানুষের আশ্রয় কেন্দ্রে পরিণত হবে বলে কবি-সাহিত্যিকেরা মনে করছেন।
এই পর্বের সভাপতিত্বের বক্তব্যে কবি ও প্রাবন্ধিক মজিদ মাহমুদও সেই দিকে এগিয়ে চলছে বলে তার বক্তব্যে এসব কথা তুলে ধরে জানান তার স্বপ্নের কথা। যে স্বপ্ন তাকে তাড়িত করে- মানবকল্যানের জন্য। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কবি আসলাম সানী, কথাসাহিত্যিক পারভেজ হোসেন, কবি বেনজীন খান, কবি ও আবৃত্তিকার রুবিনা আজাদ প্রমুখ। ভারত থেকে অংশগ্রহণ করেন কবি অধীরকৃষ্ণ মণ্ডল, কবি শ্যামল জানা, কবি সৈয়দ কওসর জামাল, দীপক লাহিড়ী, কবি চিত্রা লাহিড়ী, কবি আবু রাইহান, কবি তাজিমুর রহমান, কবি শুভেন্দু দত্ত, কবি অমৃতেন্দু মণ্ডল ও দেবাঞ্জন চক্রবর্তী। কবিতা আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বর্ণাঢ্য এ উৎসবে বর্তমান বিশ্বের সংস্কৃতি ও রাজনীতির প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো নিয়ে কবি-সাহিত্যিকদের মধ্যে ভাব বিনিময় ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

৩ মার্চ, ২০২৩ সকালে র‌্যালির মধ্য দিয়ে উৎসবের সূচনা এবং উদ্বোধনী সংগীতের পর কলকাতা, ঢাকা, অন্যান্য জেলাসহ পাবনার স্থানীয় কবি-সাহিত্যিকদের ফুল, ব্যাগ ও গামছা দিয়ে বরণ করা হয়। অতিথিদের বরণ করেন ‘বৌটুবানী পাঠাগারে’র ছাত্র-শিক্ষকবৃন্দ।
প্রথম দিনের পরের পর্বে মূল অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন কবি ও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চেয়ারম্যান শ্যামসুন্দর শিকদার। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চিত্রা লাহিড়ী (ভারত), নীলাঞ্জন শাণ্ডিল্য (ভারত), অধীরকৃষ্ণ মণ্ডল (ভারত), দেবাঞ্জন চক্রবর্তী (ভারত), আসলাম সানী ও সৈয়দ কওসর জামাল (ভারত)। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শেষে আবৃত্তি করেন বাচিক শিল্পী ও সংগঠক সাজিদা খানম, আবৃত্তিশিল্পী ও সংগঠক মেহেদি হাসান আকাশ, মাসুম আজিজুল বাশার, মধুসূদন মিহির চক্রবর্তী এবং মতিউর রহমান। বিকালে দুই পর্বে কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠের প্রথম পর্বে সভাপতিত্ব করেন কবি শ্যামসুন্দর শিকদার। এ পর্বে প্রতীক মাহমুদের সঞ্চালনায় কবিতা পড়েন আমিনুল ইসলাম, অদ্বৈত মারুত, শুভেন্দু দত্ত (ভারত), শামসুদ্দিন হীরা, সারওয়ার জাহান, নুসরাত সুলতানা, শব্দনীল, শিবলী মোকতাদির, তাজিমুর রহমান (ভারত), মনিরুল ইসলাম (ভারত), আবু রাইহান (ভারত), মামুন রশীদ, কবি কাজী আনিসুল হক হীরা, অমৃতেন্দু মণ্ডল, এনামুল হক টগর, মো. জাহাঙ্গীর আলম, মানিক মজুমদার, অরবিন্দ চক্রবর্তী, আহমেদ শিপলু, রিপন আহসান ঋতু, কবি ও চিত্রশিল্পী শ্যাম পুলক, অধ্যাপক ও গবেষক সুমন শামস, আবৃত্তিশিল্পী আলমগীর কবীর হৃদয়, রনি রেজা, মাহফুজ মুজাহিদ, গুলজার হোসেন গরিব, দীলতাজ রহমান ও সজল রায়।
কবিতা পাঠের সমাপ্তির পর সন্ধ্যায় ‘মাইকেল মধুসূদন উত্তর বাংলা সাহিত্য’ শীর্ষক সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন দীপক লাহিড়ী (ভারত)। এ পর্বে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. কুদরত-ই-হুদা, ড. তারেক রেজা, ড. জি এম মনিরুজ্জামান, ড. ইসমাইল সাদী। সবশেষে মো. মাজহারুল ইসলাম ও তার সহশিল্পীদের সংগীত পরিবেশন ও সাংস্কৃতি অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে প্রথম দিনের অনুষ্ঠান শেষ হয়।
দ্বিতীয় দিন সকালে ‘রবীন্দ্র-নজরুল সম্পর্কের স্বরূপ’ শীর্ষক সেমিনারে মুক্ত আলোচনা করেন কবি ও প্রাবন্ধিক মজিদ মাহমুদ, বেনজীন খান, পারভেজ হোসেন ও শ্যামল জানা। বেলা এগারোটায় বিশ্বকুঠির ভবনে সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত হয় ‘বাংলা কথা-সাহিত্যের পাঠক ও সমালোচক’ শীর্ষক সেমিনার। এতে অংশ নেন কথাসাহিত্যিক পারভেজ হোসেন, কবি দেবাঞ্জন চক্রবর্তী (ভারত), কবি বেনজীন খান, কথাসাহিত্যিক ওয়াহিদুর রহমান শিপু। দুপুরে কবি রিপন আহসান ঋতুর সঞ্চালনায় কবিতা পাঠে অংশ নেন কবি নীলাঞ্জন শাণ্ডিল্য, কবি দেবাঞ্জন চক্রবর্তী, কবি বোরহান মাসুদ, কবি ওয়াহিদুর রহমান শিপু, সৈয়দা জহুরা আকতার ইরা, কবি লতিফ জোয়ার্দার, কবি মনসুর আজিজ, কবি ইসলাম রফিক, কবি ঋজু রেজওয়ান ও কবি সোহেল মল্লিক। কবিতা পাঠ শেষে ‘উত্তর ঔপনিবেশিক বাংলা কবিতা’ শীর্ষক সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন নীলাঞ্জন শাণ্ডিল্য। এ পর্বের আলোচনা করেন সৈয়দ কওসর জামাল, শ্যামল জানা, অমৃতেন্দু মণ্ডল ও আবু রাইহান। রাতে মনোজ্ঞ সংগীতানুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ৪ মার্চ অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে। পরদিন ৫ মার্চ উপমহাদেশের বিখ্যাত অভিনেত্রী সুচিত্রা সেনের পৈতৃক বাড়ি পরিদর্শনের মধ্য দিয়ে চরনিকেতন সাহিত্য উৎস-২০২৩ মিলনমেলার পরিসমাপ্তি ঘটে। এই পরিসমাপ্তি লগ্নে বলতে হয় রবিঠাকুরের গীতাঞ্জলির সেই কবিতা- শেষের মধ্যে অশেষ আছে,/এই কথাটি মনে/আজকে আমার গানের শেষে/জাগছে ক্ষণে ক্ষণে।/সুর গিয়েছে থেমে তবু/থামতে যেন চায় না কভু,/নীরবতায় বাজছে বীণা/বিনা প্রয়োজনে।… সকল আলাপ গেলে থেমে/শান্ত বীণায় আসে নেমে,/সন্ধ্যা যেমন দিনের শেষে/বাজে গভীর স্বনে। কবি মজিদ মাহমুদ যে কাজটা করে সাহিত্যিকদের মধ্যে সাহিত্যের আদান-প্রদান কিংবা নাগরিকজীবনের বাইরে গিয়ে প্রান্তিক অঞ্চলে করলেন সাহিত্য উৎসব এটাই তো জীবন; এটাই তো বাস্তবতা। এটাই তো প্রকৃত সাহিত্যিকের কাজ। মহান মানুষেরাই তো এই মহান কাজ করতে পারেন এবং নতুনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। সেজন্যই আজ অনুষ্ঠান শেষ হলেও নীরবে-নিভৃতে তাকেই স্বাগত জানাচ্ছি। পড়ছে মনে ক্ষণে ক্ষণে।/সুর গিয়েছে থেমে তবু/থামতে যেন চায় না কভু,/নীরবতায় বাজছে বীণা/বিনা প্রয়োজনে।…

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়