ইন্ডিয়ান হায়ার এডুকেশন মিট উদ্বোধন

আগের সংবাদ

ভোরের কাগজ, এনজিও ফোরাম ও বাউইনের সেমিনারে বক্তারা : এসডিজি ৬ অর্জনে কার্যক্রম বেগবান করার তাগিদ

পরের সংবাদ

ফাঁস

প্রকাশিত: মার্চ ২০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঝন্টুনির মা তার ঘরের বারান্দায় বসে শীতের কাঁথায় নকশা তৈরি করছিল। এমন সময় বোঁচনির মা এসে মোড়াটা নিয়ে বসে বলল, চাই, এক খিলি হান দে। খাইতে খাইতে তোরে এককান গোফন কথা কমু। কিন্তু বইন, ক্যায়রে কইচ্ছা।
ঝন্টুনির মা গোপন কথা শোনার লোভে তার পানের বাটা থেকে একটা খিলিপান বানিয়ে দিয়ে বলল, কন্ চাই, কী কথা?
বোঁচনির মা পান মুখে দিয়ে পানের বটুর মাথা দিয়ে চুনের কৌটা থেকে চুন নিয়ে জিহ্বায় লাগিয়ে ঈশারা করল মাথাটা কাছে আনার জন্য। তারপর বলল, জানস্নি বইন, বোঁচনির বাপ এককান বিরাট আকাম করি হালাইছে। কথা ইয়্যান ক্যায়রে কইতাম হারিয়েন না আবার হেডের ভাতও অজম কইত্তাম হারিয়েন না। ভাবিয়ের, ক্যার কাছে কইতাম হাইল্লে মনখান হাতলা অইতো, হেডের ভাতও অজম অইতো। হেইডার লাই তোর কাছে আইছি। কিন্তু কথা ইয়্যান কইতে আঁর ডর লাগের।
ঝন্টুনির মা অভয় দিয়ে বলল, কন্, আন্নে ডরাইয়েন না। কসম খাইয়ের, ক্যায়রে কইতান ন।
বোঁচনির মা একবার চারদিকে সতর্কতার সঙ্গে চোখ বুলিয়ে নিল। তারপর হঠাৎ ঝন্টুনির মা’র ডান হাতটা টেনে নিয়ে নিজের মাথায় চেপে ধরে বলল, আঁর মাথাত আত দি ক, তুই ক্যায়রে কইতি না।
বিরক্তি প্রকাশ করে ঝন্টুনির মা অভিমানের সুরে জিজ্ঞেস করল, আন্নে কী আঁরে বিশ্বাস করেন না? আন্নের কথা কী আঁই কোনোদিন ক্যায়রে কইছি?
আইচ্ছা আইচ্ছা বইন, রাগ করিচ্ছা। কইয়ের কইয়ের, বলে আর একটু সামনের দিকে মাথাটা ঝুঁকিয়ে খুব নিচুস্বরে বোঁচনির মা বলল, কাইলগা সন্ধ্যার হরে বাড়ির হিছনে গোসলখানার ইয়ানে ধপ ধপ শব্দ হুনি আঁর কইলজাত্ ধুপ ধুপ শুরু অই গ্যাছে। একলা বাড়ি। বোঁচনি ছাড়া বাইত্ আর ক্যাও নাই। মনের ভিতেত্ সাহস লই বেড়ার হাক দি আবছা আবছা আন্ধারে ঠার করি চাইয়ের, বোঁচনির বাপ আর কমলার বাপ দোনজনে গোসলখানার লগে ইগ্যা বড় খাদা কুড়ছে। হিয়ার হরে খাদার ভিতেত্ বস্তা এগ্যা টানি নামাইছে। তার হরে মাডি দি ভরাট করি হেলাইছে। আঁর সন্দেহ লাইগছে। গোসলখানার লগে মাডি ভরাট কইরতে অইবো কিল্লাই? চিল্লাইতাম চাইছিলাম। আবার বোঁচনির বাপের অসিবিধা অইবো দেয় আর চিল্লাই ন। হিয়ার হরে চুপ অই গেছি।
সন্ধ্যার হরে গোসল কইত্তাম দেই জিগ্যাইছি। পথমে কিন্তু বোঁচনির বাপে স্বীকার করে ন, হরে স্বীকার কইচ্ছে। আসল কথা অইল, মদ খানা লই কজিয়া লাগি ফকির হাড়ার এক বেডারে কমলার বাপেসহ মারি হালাইছে। বইন, ক..থা ইয়্যান হু..নি আঁই চুপ অই গেছি।
আঁরে চোখ-মুখ লাল করি কিয়া কয় জানস্নি? আঁরে কইছে, এই কথা যদি আঁই ক্যায়রে কই, তাইলে আঁরেও নাকি বেডা ইগার মতো মারি ল্যাট্রিনের তলায় কবর দিবো। বইনরে, এই কথা হুনার হরে কাইল্যা রাইতকা ধরি আঁর দুই চোখে ঘুম নাই। কথা ইয়্যান তোরে কই আঁর মন ইক্কিনি হাতলা অইল। বইনরে, খবরদার কইয়ের, ক্যায়রে কথা ইয়্যান কইচ্ছা।
ঝন্টুনির মা জিহ্বায় কামড় খেয়ে বলল, আঁই ক্যায়রে কইতান ন। আন্নেও আর ক্যায়রে কইয়েন না। কইলে বোঁচনির বাপের বিরাট বিপদ অইতে হারে।
সম্মতিসূচক মাথা নেড়ে বোঁচনির মা সেখান থেকে গিয়ে একই কায়দায় পান খুঁজে খেয়ে গোপন কথাটা ভুতনির মা, স্বপন্যার মা, বান্টুনির মা, পেটান্যার মা, জামাল্যার মা, ফইরার মাসহ আরো কয়েকজনকে বলে বেড়ালো সারা বিকালবেলা এবং সবাইকে একইভাবে অনুরোধ করল, যেন কথাটা কাউকে না বলে। এককান-দু’কান করতে করতে কথাটা পৌঁছে গেল থানার বড়কর্তার কাছে।
রাতে ভাত খেয়ে সবাইকে নিয়ে শুয়ে পড়ল বোঁচনির মা। এমন সময় দরজায় ঠক ঠক আওয়াজ। বোঁচনির বাপ বাড়ি আছেন? দরজা খুলুন। আমরা থানা থেকে এসেছি।
থানার কথা শুনে বোঁচনির মার গলা শুকিয়ে গেল। হাত-পা নাড়া বন্ধ হয়ে গেল। জোরে দরজা ধাক্কানো শুরু করলে বোঁচনির বাপ নিজেই দরজা খুলে দিল। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করল। আরেক দল পুলিশ কমলার বাপকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে এলো। তারপর জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেল, গোসলখানার পাশে রাখা বস্তাটা কোনো মানুষের লাশ ছিল না, এটা ছিল সুপারি রাখা মাটির কলসি। একটা প্রক্রিয়ায় পানিভরা কলসিতে কাঁচা সুপারি রেখে মাটির নিচে কিছুদিন পুঁতে রাখলে সুপারিগুলো এক ধরনের টেস্টি সুপারিতে পরিণত হয়, যাকে মজাইয়া সুপারি বলে। যা পানখোরদের জন্য সুস্বাদু হয়।
সব শুনে বোঁচনির বাপ থানার বড়কর্তাকে বলল, স্যার, আইজ বুঝতে পারলাম, ঘরের বৌকে বুড়োবুড়িরা কেন গোপন কথা বলতে নিষেধ করেছেন। শুধু বৌয়ের সঙ্গে মজা করতে গিয়ে আজ এই ঘটনাটা ঘটল।

গোপাল নাথ বাবুল : দোহাজারী, চট্টগ্রাম

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়