ছিনতাইকারী থেকে দুবাইয়ের স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরাভ খান

আগের সংবাদ

বিশুদ্ধ পানি ছাড়াই স্বাস্থ্যসেবা! : উপকূলীয় হাসপাতালগুলোতে বিশুদ্ধ পানির সংকট, দেশের ২১ শতাংশ হাসপাতালে নেই বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা

পরের সংবাদ

ভোরের কাগজ, এনজিও ফোরাম ও বাউইনের সেমিনারে বক্তারা : এসডিজি ৬ অর্জনে কার্যক্রম বেগবান করার তাগিদ

প্রকাশিত: মার্চ ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২০, ২০২৩ , ১১:৫৯ অপরাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) ৬ নম্বরেই নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশনের উল্লেখ রয়েছে। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দেশে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে চলছে নানা কার্যক্রম। তবে এর গতি খুব শ্লথ হওয়ায় নির্ধারিত সময়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় রয়েছে। তাই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সমন্বিত প্রচেষ্টা এবং কাজের গতি ৪ গুণ বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশ্ব পানি দিবসকে সামনে রেখে ‘পানি ও স্যানিটেশন সংকট সমাধানে পরিবর্তন ত্বরান্বিতকরণ’ বিষয়ক এক সেমিনারে তারা এই তাগিদ দেন। গতকাল সোমবার যৌথভাবে এই সেমিনারের আয়োজন করে ভোরের কাগজ, এনজিও ফোরাম ফর পাবলিক হেলথ এবং বাংলাদেশ ওয়াটার ইন্টিগ্রিটি নেটওয়ার্ক (বাউইন)। জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন ভোরের কাগজ সম্পাদক ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত। স্বাগত বক্তব্য দেন এনজিও ফোরাম ফর পাবলিক হেলথের নির্বাহী পরিচালক এস এম এ রশীদ। সেমিনারে দুটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের গ্রাউন্ড ওয়াটার হাইড্রোলোজি বিভাগের পরিচালক ড. আনোয়ার জাহিদ ও বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. তানভীর আহমেদ। বক্তব্য রাখেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ডিপিএইচই) প্রধান প্রকৌশলী মো. সারওয়ার হোসেন, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (পরিকল্পনা) তুষার মোহন সাধু খাঁ, চিফ অপারেটিং অফিসার (সোয়াইস-এফএসএম সাপোর্ট সেল) ড. আব্দুল্লাহ আল মূয়ীদ, ইউনিসেফের ওয়াশ বিশেষজ্ঞ শফিকুল আলম, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের জেমস পি গ্রান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথের সহকারী পরিচালক বাশিরা আক্তার প্রমুখ। বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘ মহাসচিবের বাণী পড়ে শোনান বাংলাদেশে জাতিসংঘ তথ্য কেন্দ্রের প্রতিনিধি ফাহমিদা সুলতানা।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জনে প্রতিশ্রæতিবদ্ধ। সরকারেরও একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য রয়েছে। আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ করতে চাই। এই দুই লক্ষ্যের সমন্বয়ে আমরা আমাদের কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করছি এবং সেই অনুযায়ী এগিয়ে যাচ্ছি। শুধু আমাদের দেশে নয়, উন্নত অনেক দেশও এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে হিমশিম খাচ্ছে। তাদের জন্যও অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
পানির সংকট আগের চেয়ে অনেক কমেছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, অতীতে আমরা পানির জন্য রাস্তায় মানুষকে বিক্ষোভ করতে দেখেছি। কলস নিয়ে আন্দোলন করতে দেখেছি। কিন্তু এখন চিত্র বদলেছে। ঢাকা শহরে শতভাগ পানি নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতেও পানি নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রতিটি বিভাগীয় শহরে সারফেস ওয়াটার প্ল্যান করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
দেশের অভিজাত এলাকায় পানির দাম বাড়ানোর পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, অভিজাত এলাকায় পানি-গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে বস্তিসহ যেসব এলাকায় দরিদ্র মানুষ বাস করে সেসব এলাকায় কম মূল্যে তা দেয়া উচিত। হোল্ডিং ট্যাক্স গুলশানে যা হবে যাত্রাবাড়ীতেও কেন তাই হবে? এক্ষেত্রে আমরা কেন ভর্তুকি দেব? ভর্তুকি যে কোনো সমাজের জন্যই ক্ষতিকর।
সারওয়ার হোসেন বলেন, পানি ও স্যানিটেশনের লক্ষ্য অর্জনে যেভাবে কাজ করছি সেটিকে যদি আমরা হেঁটে যাওয়া হিসেবে ধরি, তাহলে এখন আমাদের দৌঁড়াতে হবে। এমডিজিতে (সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) ভালো করলেও এসডিজি অর্জনে আমরা পিছিয়ে আছি। তবে উপকূলীয় এলাকায় বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এখন গ্রাউন্ড ওয়াটার থেকে সারফেস ওয়াটারের দিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি আমরা। পানির গুণগত মানের দিকে নজর দিতে হবে। প্রতিটি জেলায় একটি করে ল্যাবরেটরি স্থাপন করে ফেলেছি। এগুলো চালু হতে আরো প্রায় ৪/৫ মাস লাগবে। সমন্বিত উদ্যোগ নিলে এসডিজি অর্জন করতে পারব।
ড. তানভীর আহমেদ বলেন, আমরা কিভাবে এসডিজির লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারি, সেভাবে আমাদের কাজ করতে হবে। এমডিজি অর্জনে আমরা ভালো করেছি। সে তুলনায় এসডিজি অর্জনে নিরাপদ পানি সরবরাহের ক্ষেত্রে আমাদের অগ্রগতি অত্যন্ত দুর্বল। জলবায়ু পরিবর্তন, খরা, পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়াসহ বেশ কিছু সমস্যার কারণে আমরা আমাদের লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে খুব বেশি অগ্রসর হতে পারিনি। একইভাবে স্যানিটেশনের ক্ষেত্রেও আমরা পিছিয়ে আছি। এসডিজি অর্জনের ক্ষেত্রে বর্তমানে আমরা যেভাবে অগ্রসর হচ্ছি, তাতে সঠিক সময়ে লক্ষ্যে পৌঁছানো খুব মুশকিল হবে। এ অবস্থায় লক্ষ্য অর্জনে আমাদের কাজের গতি আরো বাড়াতে হবে।
এসডিজি অর্জনে বাজেট বাড়ানোর উপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, আমরা প্রতি বছরই দেখছি, ওয়াশ বাজেটে বরাদ্দ বাড়ছে। কিন্তু এই বাজেট এসডিজি অর্জনে যথেষ্ট নয়। আবার এই বাজেটের টাকাটা সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় খরচ হচ্ছে কিনা, সেটিও দেখতে হবে। এজন্য সময়মতো অর্থ ছাড় দেয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। টাকা শুধু বরাদ্দ করলে হবে না, খরচ করতে হবে। আবার টাকাটা সঠিক জায়গায় খরচ হচ্ছে কিনা, সেটিও তদারকি করতে হবে।
ড. আনোয়ার জাহিদ বলেন, পৃথিবীতে যত পানি আছে তার ১ শতাংশেরও কম ব্যবহারযোগ্য। দিন দিন পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। রয়েছে আর্সেনিক ও লবণাক্ততার মতো সমস্যা। গবেষণা ও মনিটরিংয়ের উপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, এসডিজি অর্জন করতে হলে আমাদের গবেষণা ও মনিটরিংয়ের উপর জোর দিতে হবে।
তুষার মোহন সাধু খাঁ বলেন, এমডিজিতে পানি সংক্রান্ত যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল সেখানে আমরা ৯৯ শতাংশ কভারেজে উন্নীত হই। আর স্যানিটেশনের ক্ষেত্রেও আমরা লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করে ফেলি। কিন্তু এসডিজিতে যখন মানসম্মত বিষয়টি যুক্ত করা হলো, তখনই অনেকটা পিছিয়ে গেলাম। সেই হিসাবে আমরা এখন যে কার্যক্রম নিয়েছি তার সবই এসডিজিকে লক্ষ্য করেই। আমি মনে করি, এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সঠিক পথেই আমরা এগুচ্ছি। ২০৩০ সালের মধ্যেই আমরা লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব।
ড. আব্দুল্লাহ আল মূয়ীদ বলেন, আগামী দিনে স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরি হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে নির্দেশনা সেখানে শুধু নম্বর নয়, এর জন্য দক্ষতা প্রয়োজন।
শফিকুল আলম বলেন, এসডিজি অর্জনের ক্ষেত্রে যে সময় পেয়েছি, এখন আমরা তার মাঝামাঝি অবস্থায় আছি। এখন যে গতিতে এগোচ্ছি এর চেয়ে ৪ গুণ বেশি গতিতে আমাদের এগোতে হবে। আমরা যদি আমাদের কাজকে এগিয়ে নিতে চাই তাহলে প্রকৃত তথ্য প্রয়োজন। সেই বিষয়ে আমাদের কাজ করতে হবে।
শ্যামল দত্ত বলেন, দশকের বেশি সময় ধরে সামাজিক ক্ষেত্রে যে অগ্রগতি হয়েছে তা অবিশ্বাস্য। স্বল্পোন্নত দেশে একটি বড় অগ্রগতি নির্দেশক হচ্ছে পানি ও স্যানিটেশনের অগ্রগতির বিষয়টি। ২০২৬ সালের পর আমাদের মতো স্বল্পোন্নত দেশের অগ্রগতির অন্যতম নির্ণায়ক হচ্ছে, পানি ও স্যানিটেশনের সুবিধা আমরা মানুষের জন্য কতটা সহজলভ্য করতে পেরেছি।? পানি দিবসের মতো প্রতিটা দিনই আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় আমরা এই খাতে কতটা অগ্রগতি করেছি। আজকের আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারব আমাদের অগ্রগতি কোথায় এবং কোথায় আরো অগ্রগতি করতে হবে।
এস এম এস রশিদ বলেন, এসডিজি (৬) অর্জনের অগ্রগতির হার দুর্ভাগ্যজনকভাবে নিশ্চয়তা দিচ্ছে না যে, ২০৩০ সালের মধ্যে তা সম্পূর্ণভাবে অর্জন করতে পারব। এটি বাংলাদেশ ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সত্য। এখন থেকে যে সময়টুকু বাকি আছে এই সময়ে চলমান যে পদক্ষেপগুলো রয়েছে তা আরো ৪ গুণ বেশি গতিতে ত্বরান্বিত করতে হবে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সরকারি, বেসরকারি এবং উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা সবাইকে মিলেই চলমান কার্যক্রমকে আরো বেগবান করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ, এলাকাসমূহ, বিভিন্ন প্রান্তিক জনগোষ্ঠী- সবাইকে রক্ষা করবে এমন অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতিমালা ও কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নই পারবে যথাসময়ে এসডিজি অর্জন নিশ্চিত করতে।
বাশিরা আক্তার বলেন, শহরের বস্তি নিয়ে আমরা কাজ করছি। গবেষণা করছি। শহরের বস্তিগুলোতে পানি সরবরাহ হচ্ছে এটি সত্য, কিন্তু কতটুকু নিরাপদ পানি সরবরাহ হচ্ছে তা গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে কাজ করা জরুরি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়