মাদ্রাসা কর্মচারীর কাণ্ড : জাতীয় পরিচয়পত্র ও এমপিওতে ভিন্ন তারিখ!

আগের সংবাদ

যে কারণে দলে নেই মাহমুদউল্লাহ

পরের সংবাদ

রাজশাহী নভোথিয়েটার প্রকল্প : ডোম স্থাপনে ঠিকাদারের শর্ত ভঙ্গের অভিযোগ

প্রকাশিত: মার্চ ১৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : রাজশাহীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটারে ডাবল রিবেট ও সিমলেস নয় এমন জয়েন্ট সিস্টেমের ইনার ডোম বসানোর পাঁয়তারা চলছে। দরপত্রে একক লাইন রিবেট ও সিমলেস জয়েন্ট সিস্টেম ডোম বসানোর বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকলেও সেটা মানা হচ্ছে না। এমনকি দরপত্রে উল্লেখিত আকার পরিবর্তন করে ইনার ডোম স্থাপনের অভিযোগ রয়েছে এই কাজের ঠিকাদারের বিরুদ্ধে।
রাজশাহী নগরীর শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও বোটানিক্যাল গার্ডেনের সামনের অংশে দুই দশমিক তিন শূন্য একর জায়গাজুড়ে গড়ে উঠছে এই নভোথিয়েটার। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষা বিশেষত মহাকাশ সম্পর্কিত জ্ঞান সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করা, বিনোদনের মাধ্যমে শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি এবং বিজ্ঞানসংশ্লিষ্ট কুসংস্কার দূর করতে প্রকল্পটি নেয়া হয়। বিজ্ঞানমনস্ক আধুনিক নাগরিক তৈরিতে বিজ্ঞানের সুযোগ-সুবিধা রাজধানীর বাইরে ছড়িয়ে দেয়াই এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। ২২২ কোটি ৩ লাখ টাকা ব্যয় ঢাকার বাইরে রাজশাহীতেই নির্মাণ হচ্ছে দেশের দ্বিতীয় এই নভোথিয়েটার। নভোথিয়েটারের চারতলা অফিস ব্লক ও ৩৯ হাজার ৮০০ বর্গফুট আয়তনের প্ল্যানেটোরিয়াম ব্লকের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে।
এখন আধুনিক প্রযুক্তির ‘ডোম’ বসানো সম্পন্ন হলেই কাজ অনেকটাই শেষ হবে। দরপত্রের স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার ঢাকার আদলে ইনার (অভ্যন্তরীণ) ডোম নির্মাণের জন্য সিঙ্গেল লাইন রিবেট ও সিমলেস ওভারল্যাপ জয়েন্ট সিস্টেম পদ্ধতি ব্যবহার করার কথা রয়েছে। যা বর্তমান বিশ্বের সর্বাধুনিক ও টেকসই একটি টেকনোলজি। কিন্তু দরপত্রের শর্ত উপেক্ষা করে ঠিকাদারের নিয়োগকৃত ইনার ডোম প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান স্পিটজ এর তৈরি ডাবল রিবেট ও সিমলেস নয় এমন জয়েন্ট সিস্টেমের ইনার ডোম বসানোর পাঁয়তারা চলছে। এছাড়া দরপত্রে উল্লেখিত আকার অনুযায়ী আউটার ডোম সরবরাহ করা হলেও ইনার ডোমের আকার পরিবর্তন করে আমদানি করেছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, নক্ষত্র, সূর্য, পৃথিবী নভোথিয়েটারের ডোমের স্ক্রিনে প্রদর্শন করা হয়। এ কারণে রাজশাহীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটারে অন্যান্য প্রযুক্তির তুলনায় আধুনিক প্রযুক্তির একক লাইন রিবেট ও সিমলেস জয়েন্ট সিস্টেম ডোম বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সিঙ্গেল রিবেট এবং সিমলেস ওভারল্যাপ ব্যবহার না করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান স্পিটজ এর তৈরি ডোম বসানোর উদ্যোগ নিয়েছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমান আধুনিক পদ্ধতির সিমলেস ডোমের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান স্পিটজ এর তৈরি ইনার ডোম তুলনামূলক অগ্রহণযোগ্য একটি পদ্ধতি। দামে সস্তা হওয়ায় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি এ ধরনের ডোম সরবরাহ করার চেষ্টা করছে। এ ধরনের ডোম সরবরাহ করা হলে কোটি কোটি টাকা গচ্চা যাওয়ার পাশাপাশি সরকারের প্রকৃত উদ্দেশ্য বাধাগ্রস্ত হবে। রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগ-১ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর নভোথিয়েটার নির্মাণের কাজ পেয়েছে ‘স্পেকট্রা ইঞ্জিনিয়ারস লিমিটেড ও ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড জেভি’ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
সংশ্লিষ্টরা জানান, মহাকাশসম্পর্কিত জ্ঞান সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করা, বিনোদনের মাধ্যমে শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি এবং বিজ্ঞানসংশ্লিষ্ট কুসংস্কার দূর করা এবং বিজ্ঞানমনস্ক আধুনিক নাগরিক তৈরিতে সুযোগ-সুবিধা সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে আধুনিক প্রযুক্তির পরিষ্কার ভিজুয়্যাল ইমেজ বা ভিডিও দেখানোর জন্য বর্তমান বিশ্বের সর্বাধুনিক এবং টেকসই প্রযুক্তির সিঙ্গেল লাইন রিবেট ও সিমলেস ওভারল্যাপ জয়েন্ট সিস্টেম পদ্ধতি ব্যবহার করার শর্ত উল্লেখ করা হয়েছে দরপত্রে।
এদিকে বরিশাল নভোথিয়েটারের আউটার ও ইনার ডোমের প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান নিয়োগেও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। রাজশাহী নভোথিয়েটারে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি স্পিটজ প্রস্তুতকৃত ইনার ডোম গৃহীত হয়েছে প্রচার করে বরিশালেও একই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান একই ইনার ডোম প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের অথোরাইজেশন দাখিল করে দরপত্রে অংশগ্রহণ করেছে। আর আউটার ডোম প্রস্তুতকারী হিসেবে মার্কিন প্রতিষ্ঠান ট্যাংক কানেকশন এর অথোরাইজেশন দাখিল করে বরিশাল নভোথিয়েটারের দরপত্রে অংশগ্রহণ করেছে তারা। বিভিন্ন ধরনের পানি ও তেলের ট্যাংক নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানটির ইতোপূর্বে কোনো নভোথিয়াটারের ডোম কিংবা এ ধরনের আর্কিটেকচারাল ডোম প্রস্তুতকরণের অভিজ্ঞতা নেই। এমনকি দরপত্রে নির্ধারিত ১৫ বছরের ডোম প্রস্তুতকরণের অভিজ্ঞতাও প্রতিষ্ঠানটির নেই।
প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে নভোথিয়েটারের ডোম কিংবা অন্য কোনো আর্কিটেকচারাল ডোম প্রস্তুতকরণের তথ্য পাওয়া যায়নি। মূলত বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের কোনো দেশে ডোম সরবরাহের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি আর্কিটেকচারাল ডোম বাজারে প্রবেশ করতে চাচ্ছে। যা ব্যবহারকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়