সাভারে সাংবাদিকের গাড়িতে দুর্বৃত্তদের হানা

আগের সংবাদ

তিন কলেজের শিক্ষার্থীর সংঘর্ষ সায়েন্স ল্যাবে : ঢাকা কলেজ বন্ধ ঘোষণা

পরের সংবাদ

মৎস্য অধিদপ্তরের এনএটিপি-২ প্রকল্প : ডুমুরিয়ায় মাছ চাষ ও কর্মসংস্থানে এনেছে যুগান্তকারী পরিবর্তন

প্রকাশিত: মার্চ ৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শেখ মাহতাব হোসেন, ডুমুরিয়া খুলনা থেকে : বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে মৎস্য খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জাতীয় জিডিপিতে ৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ অবদান রাখে খাতটি। দেশের মোট জনসংখ্যার ১২ শতাংশেরও বেশি মানুষ মাছ উৎপাদন ও বিপনন কার্যক্রমের উপর নির্ভরশীল। গত চার দশকে বাংলাদেশের মোট মাছ উৎপাদন ছয় গুণ বেড়েছে। এ সময়ের মধ্যে অ্যাকুয়াকালচারের উৎপাদনও প্রায় ২২ গুণ বেড়েছে। অ্যাকুয়াকালচারে উৎপাদন বৃদ্ধির হার ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বর্তমানে মোট মৎস্য উৎপাদনের প্রায় ৫৭ শতাংশ অবদান রাখে অ্যাকুয়াকালচার।
এফএও-এর রিপোর্ট ‘দ্য স্টেট অব ওয়ার্ল্ড ফিশারিজ এন্ড অ্যাকুয়াকালচার ২০২৩ অনুসারে, অভ্যন্তরীণ উন্মুক্ত জলের ক্যাপচার উৎপাদনে বাংলাদেশ তৃতীয় এবং চাষকৃত মাছ উৎপাদনে পঞ্চম স্থানে রয়েছে। বর্তমানে তেলাপিয়া উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ৪র্থ এবং এশিয়ায় ৩য়।
মৎস্য অধিদপ্তর বাস্তবায়িত ও বিভিন্ন সরকারি উদ্যোগে এমন ধারাবাহিক ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে। এনএটিপি-২ প্রকল্প সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং প্রাতিষ্ঠানিক শক্তিশালীকরণের পাশাপাশি প্রকল্প এলাকায় মাছ চাষের উন্নয়নে বেশ কয়েকটি বিনিয়োগকে সমর্থন করছে। এর মধ্যে রয়েছে বিনিয়োগের জন্য উন্নত নির্দিষ্ট মাছ উৎপাদন মডেলের প্রচার, উন্নতমানের মাছের বীজ উৎপাদন, কম খরচে মাছের খাদ্য প্রবর্তন, উন্নত উৎপাদনশীলতার জন্য খামার যান্ত্রিকীকরণ, উন্নত উন্মুক্ত বিল মৎস্য ব্যবস্থাপনা এবং বাজারগুলোতে আরো ভালোভাবে প্রবেশ এবং মূল্য সংযোজন মৎস্য পণ্যের বিকাশের জন্য উপযুক্ত বাজার সংযোগ তৈরি করা।
এনএটিপি-২ -এর অধীনে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলায় মোট ৫৬০ সদস্য বিশিষ্ট ২৮টি কমন ইন্টারেস্ট গ্রুপ (সিআইজি) গঠিত হয়েছে। ৫৬০ জন সদস্যের মধ্যে ২৮২ জন নারী। সিআইজিগুলো সমবায় অধিদপ্তর, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিবন্ধিত। সিআইজিগুলো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলেছে এবং নিয়মিত সঞ্চয় করছে। প্রতিটি সিআইজি গড়ে ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা সঞ্চয় করে। ২৮টি সিআইজি মোট ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা সংগ্রহ করেছে, যা মাছ চাষের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, বাজারে প্রবেশাধিকার, ভ্যালু চেইন উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে।
বর্তমান সরকারের নেয়া উদ্যোগ অনুযায়ী স্থানীয় চাষিদের পরামর্শ প্রদানের লক্ষ্যে এনএটিপি-২ এর অধীনে ডুমুরিয়ার ১৪টি ইউনিয়নে এ পর্যন্ত মোট ১৩টি কৃষক তথ্য ও পরামর্শ সেবা কেন্দ্র ঠিত হয়েছে। কৃষক তথ্য ও পরামর্শ সেবা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার কারণে মাছ চাষিরা তাদের দোরগোড়ায় স¤প্রসারণ সেবা পাচ্ছেন, যা কৃষকদের আধুনিক প্রযুক্তি গ্রহণের হারকে ত্বরান্বিত করছে।
প্রকল্পের আওতায় নভেম্বর ২০২০ পর্যন্ত মোট ১১৩টি প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে। প্রশিক্ষণের আওতায় ৫৬০ জন সিআইজি ও ১৮৫৫ জন নন সিআইজি মাছ চাষি প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। এদের মধ্যে ১২৩২ জন নারী প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। এতে নারীরা মাছ চাষে সফল হয়েছেন। যা বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার নারীর ক্ষমতায়নে বিশেষ ভূমিকা রাখছে।
এআইএফ-২ ম্যাচিং অনুদানের মাধ্যমে সক্ষম সিআইজিকে তাদের উদ্ভাবনী উদ্যোগের জন্য অর্থায়ন করা হয়েছে, যাতে তারা উৎপাদনশীলতা বাড়াতে, নতুন ব্যবসায়িক মডেলের সঙ্গে মূল্য সংযোজন পণ্যের বিকাশ এবং উন্নত বাজারে প্রবেশাধিকার পায়। এ বিধানের অধীনে, সিআইজি মোট উপপ্রকল্প ব্যয়ের ৩০ শতাংশ প্রদান করে এবং এনএটিপি-২ বাকি ৭০ শতাংশ প্রদান করে। এআইএফ-২-এর অধীনে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য অফিসারের দপ্তর ডুমুরিয়া, খুলনার ১৪টা সিআইজিকে মাছ পরিবহনের জন্য পিকআপ ভ্যান, ফিশ ফিড তৈরির মেশিন, এয়ারেটর ও সেচ পাম্প সহায়তা হিসাবে প্রদান করা হয়েছে।
প্রকল্পটি এআইএফ-৩ ম্যাচিং অনুদান প্রদান করেছে। এআইএফ-৩-এর অধীনে উপপ্রকল্পগুলোর অর্থায়নের সময় মাছ চাষে যান্ত্রিকীকরণ, ফসল-পরবর্তী ব্যবস্থাপনার উন্নতি এবং মৎস্য পণ্যের মূল্য সংযোজনের উপর জোর দেয়া হয়। এআইএফ-৩-এর অধীনে উদ্যোক্তরা মাছের খামার যান্ত্রিকীকরণ, ফিশ ফিড তৈরির মেশিন, মাছ পরিবহনের জন্য পিকআপ ভ্যান, অটোভ্যান, বরফ কারখানা স্থাপন, মিনি ফিশ প্রসেসিং প্ল্যান্ট ইত্যাদি করেছেন।
এ ব্যাপারে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য অফিসার মো. আবুবকর সিদ্দিক বলেন এনএটিপি-২ এর সিআইজি এবং নন-সিআইজি প্রযুক্তি গ্রহণকারী মাছ চাষি প্রায় ৩০০ হেক্টর পুকুর এলাকা কভার করেছে। মাছ চাষ যান্ত্রিকীকরণ প্রযুক্তি গ্রহণ করে এই উৎপাদনশীলতা ১০ টন বাড়ানো যেতে পারে। এজন্য দরকার আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ও সময়োপযোগী প্রকল্প সহায়তা।
জেলা মৎস্য অফিসার জয়দেব পাল বলেন- এনএটিপি-২ প্রকল্প খুলনা জেলায় সফলভাবে তার সমস্ত কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। ইতোমধ্যেই প্রকল্পের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে। পুকুর ও অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মাছের উৎপাদনশীলতা বেড়েছে। তবে আধুনিক মাছচাষ প্রযুক্তি এবং খামার যান্ত্রিকীকরণ গ্রহণের মাধ্যমে মৎস্য চাষের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির আরো সুযোগ রয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়