যৌতুকের জন্য স্ত্রী হত্যার মামলায় স্বামীর মৃত্যুদণ্ড

আগের সংবাদ

বিদেশিদের নজর ঢাকার দিকে : ব্যস্ত সময় পার করলেন ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কোরিয়ার শীর্ষ কূটনীতিকরা

পরের সংবাদ

পরিকল্পিত উন্নয়ন দেশ ও জাতির কল্যাণ

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

পশ্চিম পাকিস্তানের নিপীড়ন নির্যাতনের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতি দীর্ঘ সংগ্রাম করে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম হারিয়ে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। কারো দানে বা দয়ায় পাওয়া দেশ নয়। বাঙালি বীরের জাতি। এই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। জাতির পিতা যুদ্ধ-পরবর্তী বাংলাদেশকে ধ্বংসস্তূপের মাঝ থেকে টেনে তুলতে সুষ্ঠু উন্নয়ন ও দেশের অর্থনীতি মেরামতের কাজ হাতে নেন। মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। অনেকটাই গুছিয়ে এনেছিলেন কিন্তু সেই পরাজিত শক্তি ওত পেতে ছিল। তারা পরাজয় মেনে নিতে পারেনি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে দেশকে পুনরায় পাকিস্তানি ভাবধারায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অগ্রসর হতে থাকে। দীর্ঘ ২১ বছর বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতিকে একটি খয়রাতি জাতি হিসেবে বিশ্ব দরবারে পরিচিত করে তুলে। কিন্তু অপ্রতিরোধ্য ও অকুতোভয় বাঙালি জাতিকে দমিয়ে রাখে সাধ্য কার। আন্দোলন সংগ্রামের মাঝ দিয়ে ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষমতায় ফিরে আসে। হাসিনা সরকারের ঐকান্তিক চেষ্টায় সব জঞ্জাল ও অনিয়ম দূর করে দেশকে এগিয়ে নেয়। কিন্তু সেই অপশক্তি পুনরায় চারদলীয় জোটের ছদ্মবেশে ২০০১ সালে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। তাদের দুঃশাসনের কালো থাবায় জনগণের নাভিশ্বাস উঠে। দুর্নীতির জাল বিছিয়ে দেশের সব কয়টি সেক্টর পঙ্গু করে ফেলে। লাখ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে দেশটাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে। পরপর পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়। ২০০৬ সালে জনগণের রুদ্ররোষে পড়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে বাধ্য হয়। কিন্তু বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে ফখরুদ্দিন আহমেদ ও মঈনউদ্দিন আহমেদের সরকার অসাংবিধানিকভাবে দুই বছর ক্ষমতা দখল করে থাকে। পর্দার অন্তরালে কিছুদিন নানা খেলা চলে। শেষ পর্যন্ত সাধারণ নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়। সাধারণ নির্বাচনে জনগণের ভোটে বিজয় অর্জন করে পুনরায় দেশ পরিচালনা করার অধিকার পায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। পূর্বের চারদলীয় জোট সরকারের সমস্ত গøানি ও জঞ্জাল মুছে ফেলে সুষ্ঠু উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে নিয়ে আসে। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন নীতি সংক্রান্ত কমিটির পক্ষ থেকে (সিডিপি) গত ১৫ মার্চ এলডিসি থেকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জনের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পায়। এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে উত্তরণের জন্য মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ উন্নয়ন সূচক এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা মোকাবিলার দক্ষতাসহ তিনটি সূচকের যে কোনো দুটি অর্জনের শর্ত থাকলেও বাংলাদেশ সব কয়টি সূচকের মানদণ্ডেই উন্নীত হয়েছে। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলের (ইকোসক) মানদণ্ড অনুযায়ী এই ক্ষেত্রে একটি দেশের মাথাপিছু আয় হতে হয় কমপক্ষে ১২৩০ মার্কিন ডলার, সেই ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় অর্জন তার অপেক্ষায় অনেকটা বেশি অর্থাৎ ১৬১০ মার্কিন ডলার। বর্তমানে মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ২৩৪৮ মার্কিন ডলার।
মানবসম্পদ সূচকের উন্নয়ন শতকরা ৬৬ ভাগ প্রয়োজন হলেও বাংলাদেশ অর্জন করেছে শতকরা ৭২ দমমিক ৯ ভাগ। অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক সর্বনিম্ন হতে হবে শতকরা ৩২ ভাগ যেখানে বাংলাদেশ রয়েছে শতকরা ২৪ দশমিক ৮ ভাগে। ‘যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে এই উন্নয়নশীল দেশের পর্যায়ে উঠে আসতে- এখানে রয়েছে এক দীর্ঘ বিপদ সংকুল ও বন্ধুর পথ পাড়ি দেয়ার ইতিহাস’ আওয়ামী লীগ সরকারের রূপকল্প ২০২১ সঠিক বাস্তবায়নে এটি একটি বড় অর্জন। এই অর্জন সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে। বাংলাদেশের সাহসী এবং অগ্রগতিশীল উন্নয়ন কৌশল গ্রহণের ফলে সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কাঠামোগত সঠিক রূপান্তর ও উল্লেখযোগ্য সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির মাধ্যমে বাংলাদেশকে দ্রুত উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে এসেছে। বাংলাদেশ ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে জাতিসংঘের স্বীকৃতি পেয়েছে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্য নির্ধারণ করে বর্তমান সরকার এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ উন্নয়ন অগ্রযাত্রার পথে উঠে আসতে পেরেছে জন্মের ৫০ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে। কীভাবে বাংলাদেশ দ্রুতগতিসম্পন্ন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মতো সফলতা অর্জন করতে পারল এমন প্রশ্ন এখন বিশ্ববাসীর। জাতির পিতা তাঁর সম্মোহনী শক্তি দিয়ে কীভাবে সমগ্র জাতিকে স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য একতাবদ্ধ করেছিলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশ থেকে কীভাবে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত হতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্ব, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, এমডিজি অর্জন, এসডিজি বাস্তবায়নসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, লিঙ্গ সমতা, কৃষি, দারিদ্র্যসীমা হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, যোগাযোগ ব্যবস্থার অভূতপূর্ব সাফল্য, রপ্তানিমুখী শিল্পায়ন, ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা, পোশাক শিল্প, ওষুধ শিল্প, রপ্তানি আয় বৃদ্ধিসহ নানা অর্থনৈতিক সূচকে অগ্রগামী হয়েছে দেশ। পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, ঢাকা মেট্রোরেলসহ দেশের মেগা প্রকল্পগুলো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক বক্তব্যে সবাইকে উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আসুন দলমত নির্বিশেষে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত, সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলি’ আমরা। বাংলাদেশ বিশ্ব মানচিত্রে ক্ষুদ্র আয়তনের একটি উন্নয়নশীল দেশ হওয়া সত্ত্বেও ইতোমধ্যে সারা বিশ্বের কাছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের নিবিড় সমন্বিত সাহসী ব্যবস্থাপনা, ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবহার এবং দারিদ্র্য দূরীকরণে ভূমিকা, জনবহুল দেশে নির্বাচন পরিচালনায় স্বচ্ছ ও সুষ্ঠুতা আনয়ন, বৃক্ষরোপণ, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সূচকের ইতিবাচক পরিবর্তন প্রভৃতি ক্ষেত্রে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এই বাংলাদেশকে আজকের অবস্থানে আসতে অতিক্রম করতে হয়েছে পাহাড়সম প্রতিবন্ধকতা। যুদ্ধবিধ্বস্ত, অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু, প্রায় সর্বক্ষেত্রে অবকাঠামো বিহীন ভঙ্গুর সেদিনের সেই বাংলাদেশকে। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ৮টি লক্ষ্যের মধ্যে শিক্ষা, শিশু মৃত্যুহার কমানো এবং দারিদ্র্য হ্রাসকরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করতে সক্ষম হয়েছে। এই ক্ষেত্রে নোবেল বিজয়ী ভারতীয় অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের করা মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তার মতে, ‘কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিশ্বকে চমকে দেয়ার মতো সাফল্য আছে বাংলাদেশের’। বিশেষত শিক্ষা সুবিধা, নারীর ক্ষমতায়ন, মাতৃ ও শিশু মৃত্যুহার ও জন্মহার কমানো, গরিব মানুষের জন্য স্বাস্থ্যকর শৌচাগার ও স্বাস্থ্য সুবিধা প্রদান এবং শিশুদের টিকাদান কার্যক্রম অন্যতম। শিক্ষা খাতে বিশাল অর্জন শিক্ষাকে সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- শতভাগ শিক্ষার্থীর মাঝে বিনামূল্যে বই বিতরণ কার্যক্রম চালু। নারী শিক্ষাকে পরিবেশবান্ধব করে এগিয়ে নেয়ার জন্য প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত প্রণয়ন করা হয়েছে উপবৃত্তি ব্যবস্থা। ২০০৯-২০২২ পর্যন্ত ২৬ হাজার ১৯৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে নতুন করে জাতীয়করণ করা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষকের চাকরি সরকারিকরণ করা হয়েছে। ১৯৯০ সালে বিদ্যালয় গমনকৃত শিশুর শতকরা হার ছিল ৬১, বর্তমানে তা উন্নীত হয়েছে শতকরা ৯৭.৭ ভাগে। শিক্ষার সুবিধাবঞ্চিত দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট আইন-২০১২’ প্রণয়ন করা হয়েছে এবং সেই প্রেক্ষাপটে গঠন করা হয়েছে ‘শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট’। স্বাস্থ্যসেবায় বহুবিধ সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ। শিশুদের টিকাদান কর্মসূচির সক্ষমতা ও সাফল্যের জন্য এক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বে অন্যতম আদর্শ দেশ হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। স্বাস্থ্য খাতকে যুগোপযোগী করতে প্রণয়ন করা হয়েছে ‘জাতীয় স্বাস্থ্য নীতিমালা-২০১১’। তৃণমূল স্তরে দরিদ্র মানুষদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে গড়ে তোলা হয়েছে ১২ হাজার ৭৭৯টি ইউনিয়ন কমিউনিটি ক্লিনিক। সেখানে শিশু ও নারীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা ও বেশ কিছুসংখ্যক ওষুধ দেয়া হয়।
৩১২টি উপজেলা হাসপাতালকে উন্নীত করা হয়েছে ৫০ শয্যায়। মেডিকেল কলেজ ও জেলা হাসপাতালগুলোতে ২ হাজার শয্যা সংখ্যায় উন্নীত করা হয়েছে। মাতৃ ও শিশু মৃত্যুহার এবং জন্মহার হ্রাস করা সম্ভব হয়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। এই সাফল্য অকল্পনীয়, ১৯৯০ সালে নবজাতক মৃত্যু যেখানে ১৪৯ ছিল সেখান থেকে নেমে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৫৩-তে। স্বাস্থ্যসেবাকে সর্বস্তরের জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যকে সামনে রেখে নির্মাণ করা হয়েছে নতুন ১২টি মেডিকেল কলেজ, এই সব মেডিকেল কলেজে নতুন করে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে ৪৭ হাজারের অধিক জনশক্তি।
নারীর সার্বিক উন্নয়নের জন্য প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়েছে ‘জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা-২০১১’। নারী শিক্ষাকে উৎসাহিত ও উজ্জীবিত করতে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত চালু করা হয়েছে উপবৃত্তি কার্যক্রম। সমাজের প্রতিটি অঙ্গনে নারীর অংশগ্রহণকে নিশ্চিত করতে গৃহীত হয়েছে বহুমুখী পদক্ষেপ। প্রযুক্তি জগতে নারীদের প্রবেশকে সহজ করতে ইউনিয়ন ডিজিটাল কেন্দ্রের মতো ইউনিয়নভিত্তিক তথ্যসেবায় উদ্যোক্তা হিসেবে একজন পুরুষের পাশাপাশি একজন নারী উদ্যোক্তাকেও নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। যেটা নারী সমাজের জন্য সুফল বয়ে আনবে ‘জাতীয় শিশু আইন (নীতি)-২০১১’ প্রণয়নের মাধ্যমে সুরক্ষিত করা হয়েছে শিশুদের সার্বিক অধিকারকে। দেশের ৪০টি জেলায় সদর হাসপাতাল এবং ২০টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্থাপন করা হয়েছে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেল। দুস্থ, এতিম, অসহায় পথশিশুদের সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য স্থাপন করা হয়েছে ১৫টি শিশু বিকাশ কেন্দ্র। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের নারী ও শিশুর উন্নয়নে ভূমিকা রাখার জন্য সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভূষিত করা হয়েছে জাতিসংঘের সাউথ-সাউথ পুরস্কারে।
নারী বঞ্চনার তিক্ত অতীত অভিজ্ঞতা পেরিয়ে বাংলাদেশ নারীর ক্ষমতায়নে ও স্বাধীনতায় অনেক দূর এগিয়েছে। পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। এই শিল্পের সিংহভাগ কর্মী হচ্ছে নারীকর্মী ও কর্মকর্তা। ক্ষুদ্রঋণ বাংলাদেশে গ্রামীণ উন্নয়নে ও নারীর ক্ষমতায়নে বিশাল অবদান রেখে চলেছে। নারী উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে। তাতে গ্রামীণ অর্থনীতির গতিশীলতা ও প্রসার ঘটছে।
আর এই ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতাদের মধ্যে ৮০ শতাংশের ওপর নারী। বাংলাদেশ সরকার নানাভাবে নারী উদ্যোক্তাদের অনুপ্রেরণা জুগিয়ে এসেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন একটি দূরদর্শী চিন্তার ফসল।
ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নকে বাস্তবতায় রূপ দিতে বাংলাদেশ সরকার নিয়েছে যুগান্তকারী বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ। দেশের তৃণমূল পর্যায়ে প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে সরকারি সেবা পৌঁছে দেয়ার অভিপ্রায়ে দেশের ৪৫৫০টি ইউনিয়নকে অপটিক্যাল ফাইবারের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে স্থাপন করা হয়েছে ডিজিটাল সেন্টার। তৈরি করা হয়েছে বিশ্বের অন্যতম বিশাল ন্যাশনাল ওয়েব পোর্টাল। কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত এ পোর্টালের সংখ্যা প্রায় পঁচিশ হাজার। দেশের সবক’টি উপজেলাকে যুক্ত করা হয়েছে ইন্টারনেটের সঙ্গে। টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে বর্তমানে বাংলাদেশে মোবাইল গ্রাহকের সংখ্যা ১২ কোটি ৩৭ লাখ এবং ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় ৪ কোটি ৪৬ লাখ। প্রযুক্তি সেবা প্রদান প্রক্রিয়া সহজ ও স্বচ্ছ করতে চালু করা হয়েছে, ই-টেন্ডার, ই-পেমেন্ট ও মোবাইল ব্যাংকিং। সরকারি সেবা প্রক্রিয়া অনলাইনে সম্পাদন করার বিষয়টিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া হয়েছে ই-টেন্ডারের মাধ্যমে। ৫-জি প্রযুক্তির মোবাইল নেটওয়ার্কের বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং কৃষি খাতে অভূতপূর্ব কিছু সাফল্যের জন্য বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের নাম বারবার আলোচিত হয়েছে। প্রায় ১৬ কোটি জনগোষ্ঠীর বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশে ধানের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৬০ লাখ মেট্রিক টন। প্রধানমন্ত্রী ও কৃষিমন্ত্রীর সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের বিজ্ঞানী ড. মাকসুদুল আলম আবিষ্কার করেছেন পাটের জিনোম সিকুয়েন্সিং। সারাবিশ্বে আজ পর্যন্ত মাত্র ১৭টি উদ্ভিদের জিনোম সিকুয়েন্সিং রহস্য উন্মোচিত হয়েছে, তার মধ্যে বাংলাদেশের বাঙালি বৈজ্ঞানিক ড. মাকসুদ একাই করেছেন ৩টি। তার এই অনন্য অর্জন বাংলাদেশের মানুষকে করেছে গর্বিত ও সম্মানিত।
প্রবাসী শ্রমিকদের উন্নয়নে অনেক সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করেছে সরকার। যেমন প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে শ্রমিকদের স্বল্প সুদের মাধ্যমে ঋণের ব্যবস্থা করেছে। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বিপুল জনগোষ্ঠীকে জনসম্পদে পরিণত করতে সরকার নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানে বিশ্বের ১৫৭টি দেশে, বাংলাদেশের এক কোটিরও অধিক সংখ্যক শ্রমিক কর্মরত আছে। স্বল্পসুদে অভিবাসন ঋণ প্রদানের লক্ষ্যে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক স্থাপন করে দেশের ৭টি বিভাগীয় শহরে এর শাখা স্থাপন করা হয়েছে। এই পর্যন্ত প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে ৫৩ হাজার ৩১৬ জনকে প্রায় ৭৬০ কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে সারাদেশে তৃণমূল পর্যায় থেকে বিদেশ গমনেচ্ছুক মানুষদের রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে, ফলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগণকেও এ সেবা গ্রহণের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের মাধ্যমে হয়রানির মাত্রা অনেকটা কমে এসেছে। দালালের দৌরাত্ম্য ছাড়াই স্বল্প ব্যয়ে মালয়েশিয়াসহ অন্যান্য দেশগুলোতে শ্রমিকরা যেতে পেরেছেন। ১৯৮৮ সাল থেকে জাতিসংঘ শান্তি মিশনে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
বাংলাদেশ জাতিসংঘ শান্তি মিশনে যোগদানের পর এ পর্যন্ত বিশ্বের ৩৯টি দেশের ৬৪টি শান্তি মিশনে খ্যাতি ও সফলতার সঙ্গে কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। এ যাবৎকালে জাতিসংঘ শান্তি মিশনে বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী ১১৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সর্বাগ্রে। বাংলাদেশের শান্তি রক্ষাবাহিনী বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর করে চলেছে। এই চৌকস বাহিনী বিভিন্ন শান্তি মিশনে দক্ষতার পরিচয় দিয়ে সারা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে মর্যাদার আসনে আসীন করেছে। দিনে দিনে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের বিভিন্ন শান্তি মিশনে সংযুক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
যোগাযোগ খাতে বাংলাদেশে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। দেশের যে কোনো স্থানে সরাসরি ভ্রমণ সহজ ও সাবলীল হয়েছে। সময় ও অর্থের অপচয় দুই-ই বেঁচেছে।
দেশের প্রতিটি মহাসড়ক কে নির্বিঘœ, নিরাপদ ও নিরবচ্ছিন্ন চলাচলের উপযোগী করে গড়ে তুলতে নির্মাণ অবকাঠামোর কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলেছে। প্রতিটি মহাসড়ক চারলেনে উন্নীত করার কাজ জোরেশোরে চলছে এবং কিছু কাজ ইতোমধ্যে শেষ করা হয়েছে। যেমন গাজীপুর থেকে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পর্যন্ত গাড়ি চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অনেক আগেই চলাচল শুরু হয়েছে।
যোগাযোগ ক্ষেত্রে উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় এই সরকারের রাজটিকা, বাংলাদেশের বিস্ময়, বাঙালি জাতির সামর্থ্যরে প্রতীক, স্বপ্নের পদ্মা সেতু। যা দ্বারা দক্ষিণের ২১টি জেলাকে রাজধানীর সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত করেছে। দেশীয় ও বিদেশি কুচক্রী মহলের বাধা অতিক্রম করে, বিশ্বব্যাংকের অসহযোগিতাকে আমলে না নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাহসী পদক্ষেপে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ বাঙালি জাতির সামর্থ্যরে ও অহংকারের প্রতীক। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ও বিশ্বের ১২২তম দীর্ঘ বহুমুখী এই পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কি.মি.। পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। এই সেতু নির্মাণের কারণে জিডিপি ১.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।
যোগাযোগ ব্যবস্থার আরেক মাইলফলক দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বপ্রথম নদীর তলদেশ দিয়ে তৈরি বঙ্গবন্ধু টানেল। যোগাযোগের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্য এনে দিয়েছে। সাংহাই সিটির আদলে ওয়ান সিটি টু টাউন ধারণা থেকে এটা নির্মাণ করা হয়েছে। চট্টগ্রাম প্রান্তে পতেঙ্গা ও অপর প্রান্তে আনোয়ারা উপজেলাকে সংযুক্ত করেছে এই বঙ্গবন্ধু টানেল। ঢাকা থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব প্রায় ৪০ কিলোমিটার কমিয়ে দিয়েছে। এটা নির্মাণের কারণে চট্টগ্রাম শহরের যানজট অনেকটা সহনীয় পর্যায়ে যাবে। আনোয়ারা উপজেলায় ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে এই টানেলের কল্যাণে। দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে। দেশি-বিদেশি শিল্প কারখানা গড়ে ওঠার কারণে বিপুল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। যা দেশ ও সমাজকে এগিয়ে নিতে সহযোগিতা করবে। ৩.১৫ কি.মি. দৈর্ঘ্যরে বঙ্গবন্ধু টানেলটি নির্মাণ করতে ব্যয় হয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকার অধিক। এই টানেল দেশের উন্নয়নের মহীসোপানের একটি অংশ। বাংলাদেশ মেট্রোরেল যুগে প্রবেশ করেছে। শহর জীবনের স্থবিরতা কাটাতে মেট্রোরেল ইতোমধ্যে অবদান রাখতে শুরু করেছে। উত্তরার দিয়া বাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ভ্রমণ করতে মাত্র ১০ থেকে ১২ মিনিট সময় লাগছে। অন্য মাধ্যমে যেখানে সময় লাগে প্রায় দেড় থেকে দুই ঘণ্টার মতো। নগর জীবনকে স্বাচ্ছন্দ্য ও গতিময় করেছে। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে মানুষের কর্মঘণ্টা নষ্ট হবে না। কর্মে গতি সঞ্চারিত হবে। মেট্রোরেল উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ধাপে ধাপে চালু হবে। পুরোদমে চালু হতে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। কাজ শেষ করতে মেট্রোরেল প্রকল্পের মোট খরচ দাঁড়াবে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। ২০০৬ সালের চারদলীয় সরকারের রেখে যাওয়া ৩৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সম্বল ছিল বাংলাদেশের। বর্তমানে ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা অর্জন করেছে দেশ।
অন্যান্য খাতে সফলতার মতো বিদ্যুৎ খাতেও অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে দেশ। বিদ্যুৎ খাতে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অর্জনের মধ্যে রয়েছে জাতীয় গ্রিডে অতিরিক্ত ৬ হাজার ৩২৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সংযোজন, যার ফলে বিদ্যুতের সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৪৭ শতাংশ থেকে ৮২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। একই সঙ্গে মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ২২০ কিলোওয়াট ঘণ্টা থেকে বেড়ে ৫৪৮ কিলোওয়াট ঘণ্টায় দাঁড়িয়েছে। নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করা হয়েছে ১ কোটি গ্রাহককে। নির্মাণ করা হয়েছে নতুন ৬৫টি বিদ্যুৎকেন্দ্র। পারমাণবিক বিদ্যুৎ যুগে সহসায় পদার্পণ করবে দেশ। এ বছরের মধ্যেই ১২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করবে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার অঙ্গীকার নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগ। শিল্প বিপ্লবের জন্য প্রয়োজন বিদ্যুৎ। আগামী ৪১ সাল পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার মেগাওয়াট।
কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে শিল্পের উন্নয়ন চোখে পড়ার মতো।
বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের পাশাপাশি প্রসার ঘটেছে আবাসন শিল্প, জাহাজ নির্মাণ শিল্প, ওষুধ শিল্প ও প্রক্রিয়াজাতকরণ খাদ্য শিল্পের। বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের তালিকায় যোগ হয়েছে নতুন নতুন পণ্য যেমন, জাহাজ, ওষুধ এবং বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত খাদ্যসামগ্রী। বাংলাদেশের আইটি শিল্প বহির্বিশ্বে অভূতপূর্ব সুনাম কুড়িয়েছে। এই সেক্টরে অনেক শিক্ষিত যুবকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের আইটি শিল্প ১০ কোটি মার্কিন ডলার রপ্তানি আয় করেছে। বর্তমানে তা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আগামী দিনে আইটি বাজার বাংলাদেশের আয়ত্তে থাকবে বলে আশা করেন এই সেক্টরের বিশেষজ্ঞ মহল।
সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বাংলাদেশের অর্জন বর্তমানে উল্লেখ্যযোগ্য পর্যায়ে পৌঁছেছে। দেশের হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি বিস্তৃত করতে বয়স্ক, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্ত ও দুস্থ মহিলা ভাতা, অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতাসহ ভাতার হার ও আওতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করা হয়েছে। ২০০৮-২০০৯ সালে এই খাতে মোট বরাদ্দ ছিল ১৩ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা, তা বেড়ে বর্তমানে এই কার্যক্রমে বরাদ্দের পরিমাণ ২৫ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা। খানা আয়-ব্যয় জরিপ, ২০১০-এর সমীক্ষা পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৪.৫% সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির আওতাভুক্ত হয়েছে। এটা সামাজিক নিরাপত্তার উল্লেখযোগ্য সাফল্য। সমাজে নারী ও অবহেলিত মানুষের জন্য এক অনন্য উপহার সরকারের পক্ষ থেকে।
ভূমি ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন সাধিত হয়েছে।
ভূমি ব্যবস্থাপনাকে আধুনিকায়ন করতে ৫৫টি জেলায় বিদ্যমান মৌজা ম্যাপ ও খতিয়ান কম্পিউটারাইজেশনের কাজ সম্পন্ন করার কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। ভূমির পরিকল্পিত ও সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে মোট ২১টি জেলার ১৫২টি উপজেলায় ডিজিটাল ল্যান্ড জোনিং ম্যাপ সংবলিত প্রতিবেদন প্রণয়ন করা হয়েছে। প্রণীত হয়েছে ‘কৃষি জমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইন, ২০১২ এর খসড়া’। ‘দলিল যার জমি তার’। জমিজমা বিভিন্ন কাজ এখন অনলাইনে সম্পন্ন করা হচ্ছে। যেমন ভূমি কর, নামজারি, জমিজমা বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র উত্তোলন ইত্যাদি।
মন্দা মোকাবিলায় বাংলাদেশের সাফল্য অভূতপূর্ব।
মন্দার প্রকোপে বৈশ্বিক অর্থনীতি যখন বিপর্যস্ত ছিল বাংলাদেশ তখন বিভিন্ন উপয্ক্তু প্রণোদনা প্যাকেজ ও নীতি সহায়তার মাধ্যমে মন্দা মোকাবিলায় সক্ষমই শুধু হয়নি, জাতীয় প্রবৃদ্ধির হার গড়ে ৬ শতাংশের বেশি বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। বিশ্ব^ অর্থনীতির শ্লথ ধারার বিপরীতে আমদানি-রপ্তানি খাতে প্রবৃদ্ধি বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে রেমিট্যান্সের পরিমাণ। ঋণ পরিশোধে সক্ষমতার মানদণ্ডে ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামের সমক্ষতা অর্জিত হয়েছে।
দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা যায় বৈশ্বিক মন্দা, কোভিড-১৯, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতি সঠিক পথেই এগোচ্ছে। প্রতিটি সেক্টরে উন্নয়নের ছোঁয়া লক্ষণীয়।
বর্তমানে বাংলাদেশে যেসব মেগা প্রকল্প চলমান আছে সেগুলোর কাজ শেষ হলে দেশের অর্থনীতি আরো বেগবান হবে। সেই সঙ্গে দেশের অধিকাংশ জনগণের জন্য উন্নয়ন প্রকল্পগুলো সুফল বয়ে আনবে। সঠিক উন্নয়ন দেশ ও জনগণের জীবন মানের উন্নতি ঘটাবে এবং দেশ উন্নত হবে। বর্তমানে বাংলাদেশের আর্থিক সক্ষমতা শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে আছে এমনটি পুরোপুরিভাবে জোর দিয়ে বলা মুশকিল। কারণ ২০২৩ সাল বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি ভয়ানক মন্দার সময় হিসেবে অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করছেন। তবে বাংলাদেশের এই মন্দা কাটিয়ে ওঠার সক্ষমতা আছে। সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে পারলে মন্দা মোকাবিলা করে উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সমর্থ হবে বাংলাদেশ। বর্তমান সরকারের সময় উপযোগী পদক্ষেপের কারণে দেশ উন্নয়ন অগ্রযাত্রার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে।

রবি রায়হান
কবি ও কলাম লেখক

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়