যৌতুকের জন্য স্ত্রী হত্যার মামলায় স্বামীর মৃত্যুদণ্ড

আগের সংবাদ

বিদেশিদের নজর ঢাকার দিকে : ব্যস্ত সময় পার করলেন ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কোরিয়ার শীর্ষ কূটনীতিকরা

পরের সংবাদ

স্মার্ট বাঙালি বঙ্গবন্ধু, রবীন্দ্রনাথ নজরুল এবং শেখ হাসিনা

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বর্তমানে ‘স্মার্ট’ শব্দটি বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি আলোচিত শব্দ। এটি একটি গুণবাচক শব্দ। ইংরেজি ঝসধৎঃ শব্দটির বাংলা ভাবগত উপাদান হচ্ছে চৌকস, বুদ্ধিমান, সুনির্দিষ্টতা, পরিমীতিবোধ, সক্রিয়তা, প্রাসঙ্গিকতা, সময়ানুবর্তিতা ইত্যাদি। অর্থাৎ একজন মানুষের মধ্যে যদি এ গুণগুলো উপস্থিত থাকে তবে ওই মানুষকে একজন স্মার্ট মানুষ বলা যাবে। সময়ের আবর্তে বাংলা ভাষায়ও শব্দটি অতিথি শব্দ হিসেবে অঙ্গীভূত হয়ে গেছে বলা যায়। প্রায় সব অঞ্চলেই স্মার্ট বলতে পেশা উপযোগী পোশাক পরিহিত চৌকস সুদর্শন পুরুষ অথবা মহিলাকে বোঝানো হয়।
কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ রূপে তৈরি করার ঘোষণা দিয়েছেন, সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগের আগামী নির্বাচনী ইশতেহারে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার বিষয়টি যুক্ত করেছেন। বিষয়টি ইতোমধ্যেই জনগণের মধ্যে এবং বোদ্ধামহলে ইতিবাচকভাবে আলোচনা হচ্ছে। এখানে ‘স্মার্ট’ শব্দটি অর্থনৈতিক উন্নয়নের নির্দেশক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশ বলতে আগামী দিনের উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশের নাগরিকগণকে স্মার্ট করে গড়ে তোলা বোঝানো হয়েছে। আর স্মার্ট নাগরিক হচ্ছে সুনাগরিক যারা প্রযুক্তিতে দক্ষ, জ্ঞানে বিজ্ঞানে আধুনিক এবং সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হবে। আমাদেরকে মনে রাখতে হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের নির্বাচনে রূপকল্প-২০২১ এ বাংলাদেশকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন। তা আজকে সফলতার সঙ্গে বাস্তবে রূপ লাভ করেছে। এর ফলে প্রধানমন্ত্রী নিজেকে একজন লক্ষ্যনির্ধারণী নেত্রী হিসেবে প্রমাণ করেছেন। এ রকম লক্ষ্য স্থির করে উন্নয়নের রূপকল্প অঁাঁকতে বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক নেতৃত্বকে আগে দেখা যায়নি। ডিজিটাল বাংলাদেশ সফল বিনির্মাণের ধারাবাহিকতায় তিনি আজ আবার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার। স্মার্ট বাংলাদেশের চারটি স্তম্ভের কথা বলা হচ্ছে, স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট গভর্নমেন্ট, স্মার্ট ইকোনমি এবং স্মার্ট সোসাইটি। বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তরের সাফল্য জনগণের মধ্যে প্রযুক্তিনির্ভর যেকোনো কর্মসূচি গ্রহণের ব্যাপারে সরকারের প্রতি আস্থা তৈরি করেছে। টানা তিন মেয়াদে রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত শীর্ষ নেতৃত্বের দূরদর্শিতা এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক উন্নয়ন সম্পর্কে স্পষ্ট বৈশ্বিক ধারণা এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লব আর ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণার সঙ্গে সমন্বিত নিপুণ পরিকল্পনা গ্রহণ করায় ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ ধারণাটিও জনগণের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলবে নিশ্চিত। তাই বলা যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই যোগ্যতম স্মার্ট নেত্রী যিনি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে নেতৃত্ব দিতে পারেন।
উপরোক্ত আলোচনায় ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের কেবল মাত্র অর্থনৈতিক উপাদানগুলোই নির্দেশ করা হয়েছে। হতে পারে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ ধারণাটিই একটি অর্থনৈতিক রূপকল্প। মনে রাখতে হবে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভিত্তি মজবুত না হলে অভ্যন্তরীণ কিংবা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রাজনৈতিক পরিবর্তন, আঞ্চলিক কিংবা আন্তর্জাতিক যুদ্ধ বিগ্রহের কারণে শক্তিশালী অর্থনীতিও ভেঙে পড়তে পারে। বৈশ্বিক অর্থনীতিতে এরকম বহু উদাহরণ রয়েছে। একটি জাতির উন্নয়ন শুধু অর্থনৈতিক মানদণ্ডে নির্ধারণ হতে পারে না। বাংলাদেশ একটি জাতি রাষ্ট্র। আমরা বাঙালি জাতি। বাঙালির রয়েছে হাজার বছরের ইতিহাস ঐতিহ্য, রয়েছে নিজস্ব ভাষা, শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি। ভুলে গেলে চলবে না, আমার ভাইদের রক্তের বিনিময়ে বাংলা ভাষাকে ভিত্তি করে অর্জিত আমাদের বাঙালিত্ব। তেমনি মনে রাখতে হবে সাতই মার্চের বজ্র কণ্ঠের ভাষণ, মুক্তিযুদ্ধের কথা, ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগের কথা, প্রায় চার লক্ষ সম্ভ্রম হারানো মা বোনদের কথা। মৃত্যুর মিছিলে বুক পেতে দেয়া মুক্তিযোদ্ধারাই এদেশের প্রকৃত স্মার্ট নাগরিকের উদাহরণ। বাংলাদেশের উন্নয়নের মূল ভিত্তি হতে হবে বাঙালিত্বকে ধারণ করা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শ। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন আর একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মধ্য দিয়ে যে বাঙালি জাতীয়তাবাদের জাগরণ এবং একটি ভৌগোলিক দেশ প্রাপ্তি, স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে তা আমাদের অবশ্যই ধরে রাখতে হবে।
বাঙালি জাতির সবচেয়ে স্মার্ট মানুষটি হচ্ছে বঙ্গবন্ধু। আবার বাঙালি জাতির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ মানুষটিও হচ্ছে বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধু মানে বাংলার বন্ধু। যিনি বাংলাদেশিদের এনে দিয়েছেন স্বাধীনতার লাল সূর্য। তিনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহানায়ক। তিনিই তর্জনী উঠিয়ে দিয়েছিলেন স্বাধীনতার ডাক। তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের অর্জনে ভূষিত হয়েছেন বাংলাদেশের জাতির পিতায়। যদি বঙ্গবন্ধুর শরীরি গঠন আর চেহারার সৌন্দর্যের কথাও বলা হয় দীর্ঘদেহী মুজিব ছিলেন সুদর্শন, পোশাকে আশাকে ছিলেন প্রকৃত বাঙালির প্রতিচ্ছবি। ‘বাংলাদেশ’ নামটি পর্যন্ত তার দেয়া। তিনি নিজেই বলে গেছেন তিনি বাঙালি। তার চলনে বলনে সবসময় বাঙালিত্বের ঢং ছিল, ছিল বাঙালি হিসেবে গর্ব। তাইতো সর্বক্ষণ শুধু বাঙালির মঙ্গল কামনায় কাজ করে গেছেন, বিলিয়ে দিয়েছেন নিজের প্রাণটুকুও। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতার মোহনায় নিয়ে আসার যে সময়োপযোগী দৃঢ় নেতৃত্ব দেয়ার যে কর্মটি তিনি করে গেছেন সেটাই ছিল বাঙালির ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ কর্ম। তাইতো তিনিই শ্রেষ্ঠ স্মার্ট বাঙালি। ফলে স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণে আমাদের অবশ্যই যেতে হবে অনুপ্রেরণার জাদুঘর বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কাছে। বঙ্গবন্ধুর আজীবন স্বপ্ন ছিল সুখী সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশ হবে ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়কি সম্প্রীতির একটি দেশ, যেখানে সব নাগরিক যার যার নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে আনন্দ নিয়ে। যেখানে থাকবে না ধনী-গরিবে কোনো বৈষম্য, থাকবে না কোনো দুর্নীতি। দেশের রাজনীতিবিদ, ঐতিহাসিক, শিক্ষাবিদ, গবেষক ও সাংবাদিকদের দায়িত্ব হচ্ছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কর্ম, চিন্তা আদর্শ ও দর্শন বাংলাদেশসহ বিশ্বের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া। স্মার্ট রাষ্ট্র, স্মার্ট দেশ আর স্মার্ট জীবন গড়তে বঙ্গবন্ধুর জীবন, কর্ম ও আদর্শ নতুন প্রজন্মের জন্য বড় অনুপ্রেরণা হবে নিশ্চিত। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর জাতির পিতার আদর্শকে ধারণ করে শিক্ষা সংস্কৃতি বিজ্ঞানে বাঙালি হবে বিশ্বমানের উন্নত নাগরিক, গড়ে উঠবে স্মার্ট বাংলাদেশ।
বাঙালির আরেক অনুপ্রেরণার শেকড় তথা চেতনার ভাণ্ডার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তাকে বিশ্বকবি বলা হয়। তিনি স্মার্ট এবং বাঙালির আত্ম-পরিচয়ের শ্রেষ্ঠ উপাদানও বটে। আগে বাঙালি তারপর স্মার্ট। এ কথা অকপটে বলা যায়। বাঙালিকে স্মার্ট হতে শিখিয়েছে রবীন্দ্রনাথ তথা রবীন্দ্রনাথের সমাজ ভাবনা, শিক্ষা নীতি, রবীন্দ্র সাহিত্য, রবীন্দ্র কবিতা আর রবীন্দ্রনাথের গান। তার সোনার বাংলাকেই হৃদয়ে গেঁথে নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। তাই রবীন্দ্রনাথকে বাদ দিয়ে কেউ সম্পূর্ণরূপে বাঙালি হয়ে উঠতে পারে না, স্মার্ট হতে পারে না। একবার ভাবুনতো, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নিয়ে কোনো এক সন্ধ্যায় সুরম্য ডুপ্লেক্সের বারান্দায় এসে ইজি চেয়ারে বসেছেন, সামনে বসে সুন্দরী প্রেয়সী স্ত্রী গরম ধোয়া ওঠা চা ঢালছে স্বচ্ছ কাপে। ঠিক সেই মুহূর্তে আপনি কী ধরনের গান শুনতে চাইবেন, পাশ্চাত্যের কোনো রক গান নাকি রবীন্দ্রনাথের ‘তুমি সন্ধ্যার মেঘমালা তুমি আমারো সাধের সাধনা….’? ঠিক তেমনি রবীন্দ্রনাথ বাঙালির চেতনা জুড়ে, অস্তিত্বজুড়ে অবস্থান করছেন। তিনি জীবনব্যাপী সাধনার মধ্য দিয়ে বাঙালি সংস্কৃতি ও সাহিত্যের যে নতুন মাত্রা দান করেছেন, তা তুলনাহীন। তাকে ঘিরেই বাংলা সাহিত্য, শিল্প ও সংস্কৃতির ভুবনে আধুনিকতার সূচনা হয়েছে। তার কাছে আমাদের অনেক ঋণ। তিনি ছিলেন দেশ কাল জাতি বর্ণ নির্বিশেষে এক মহাবৃক্ষের মতো আশ্রয়দাতা। তার শিক্ষা ভাবনা, সমাজ ভাবনা আমাদের মানবিক রুচিকে ভিনদেশি সংস্কৃতি থেকে রক্ষা করবে নিশ্চিত। তাই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে আমাদের সাংস্কৃতিক পরিচয়ের উন্নয়নে অনুপ্রেরণার বাতিঘর রবীন্দ্রনাথকে স্মরণ করতে হবে প্রতিটি ক্ষেত্রে।
বাঙালির আত্ম-পরিচয়ের আরেক স্মার্ট পুরুষ মহাবীর উন্নত যার শির, মহা বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো এমন মহান স্মার্ট বাঙালি আর কে আছে। চিরদুখি এ মানুষটি ঊর্ধ্ব গগনে মাদল বাজিয়ে হয়ে ওঠেন বাংলা সাহিত্যের অমর ব্যক্তিত্ব। প্রতিবাদ আর বিদ্রোহ নজরুলের চিরাচরিত বৈশিষ্ট্য। অন্যায়ের প্রতিবাদ, কুসংস্কার ধ্বংস এবং নতুন সৃষ্টি এই ত্রিমাত্রিক সত্তাই নজরুল প্রতিভাকে তুলে এনেছে এক অনন্য উচ্চতায়। বলা যায় বাঙালি প্রতিবাদ করতে শিখেছে, বিদ্রোহ করতে শিখেছে এ বিদ্রোহীর কাছ থেকে। নজরুলের রচনার পরতে পরতে রয়েছে প্রেম আর মানব ধর্মের জয়গান। বাঙালিকে শুনিয়েছে সাম্যের গান, শিখিয়েছেন মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান। বাঙালিকে শিখিয়েছেন অসাম্প্রদায়িক হতে, ধর্মনিরপেক্ষ হতে। তাই নজরুলের আদর্শ মাথা পেতে নিয়েই নতুন স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার কথা ভাবতে হবে। নতুন প্রজন্মকে হতে হবে নজরুলের মতন সাহসী, মানবতাবাদী। এ পথ ধরেই তৈরি হবে আধুনিক স্মার্ট নাগরিক, আর স্মার্ট নাগরিকের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তৈরি হবে স্মার্ট বাংলাদেশ।
সোজা কথা, বাঙালিত্বকে ধারণ করে এবং লালন করেই স্মার্ট হতে হবে। বঙ্গবন্ধু, রবীন্দ্রনাথ, নজরুলসহ আরও যারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে সফল এবং অনুকরণীয় বাঙালি তাদের সবার ভাবনা আর আদর্শকে বিবেচনায় নিয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক, ন্যায়ভিত্তিক, আধুনিক, উন্নত, সমৃদ্ধ একটি নতুন স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার পথে এগিয়ে যেতে হবে। আর এই গড়ে তোলার বর্তমান দায়িত্ব অবশ্যই বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার মতো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বহনকারী চলনে বলনে যিনি পরিপূর্ণ বাঙালি এমন একজন আধুনিক স্মার্ট নেতৃত্বের হাতেই মানানসই।

আশফাক রহমান
কবি ও লেখক

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়