চট্টগ্রামে ফয়েস লেক বেসক্যাম্প উদ্বোধন

আগের সংবাদ

কাটবে যেসব সংকট : আইএমএফের ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ

পরের সংবাদ

এরশাদকে নিয়ে বক্তব্যে সংসদে ব্যাপক হট্টগোল

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৩১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : জাতীয় পার্টির প্রয়াত চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছিল উল্লেখ করে সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্যে সংসদে ব্যাপক হট্টগোল হয়েছে। এ সময় জাতীয় পার্টির দুই সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ এবং মশিউর রহমান রাঙ্গা তার বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে দাঁড়িয়ে যান। এরপর সংসদে হৈ চৈ, চিৎকার চেচামেচি শুরু হয়। যার সূত্র ধরে সংসদ অধিবেশনে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়।
এ সময় সংসদে সভাপতির দায়িত্বে থাকা ডেপুটি স্পিকার সামসুল হক টুকু কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন। পরে তাৎক্ষণিক সভাপতির চেয়ারে এসে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ পর্যায়ে তিনি উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে তথ্যগত কোনো ত্রæটি থাকলে তা পর্যবেক্ষণ করে এক্সপাঞ্জ করার রুলিং দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। চলতি একাদশ ও দশম সংসদে এ ধরনের পরিস্থিতি এর আগে দেখা যায়নি।
গতকাল সোমবার জাতীয় সংসদের অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেন বলেন, আমার জনপ্রিয়তা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানেন। আমার বিরুদ্ধে যারা নির্বাচনে দাঁড়ায় তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। এমনকি ১৪ সালের নির্বাচনে আমার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে এরশাদ সাহেবেরও জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছিল।
তার বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে জাতীয় পার্টির সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, এরশাদ সাহেব ১৪ সালে নির্বাচনে দাঁড়াননি, এসব মিথ্যা কথা। এ সব মিথ্যা কথা। এ বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করতে হবে, তা না হলে রংপুরে খবর আছে।
এরপর জাতীয় পার্টির চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা দাঁড়িয়ে যান এবং প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। তিনি বলেন, এ বক্তব্যের পর আমাদের কথা বলতে না দিলে প্রয়োজনে আমরা বেরিয়ে যাব। এ সময় আওয়ামী লীগের সদস্যরাও জাতীয় পার্টির সদস্যদের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানাতে থাকেন এবং দুই দলের সদস্যরা হৈ চৈ করতে থাকেন। তখনও মোতাহার হোসেনের বক্তব্যের নির্ধারিত সময় শেষ হয়নি, তিনি দাঁড়িয়েই থাকেন।
এ অবস্থায় ডেপুটি স্পিকার পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকেন এবং জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশিদ ও মশিউর রহমান রাঙ্গাকে বার বার বসতে বলেন। এর মধ্যেই স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশন কক্ষে এসে আসন গ্রহণ করেন। স্পিকার বলেন, একটা ডেকোরাম আছে, রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনা চলছে। যদি কোনো বক্তব্যে কারো কোনো আপত্তি থাকে সেটা তাকে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে বলার জন্য হাত তুলতে হবে। যদি আমরা মনে করি বক্তব্য দেয়ার সুযোগ আছে তাহলে দেয়া হবে। আগে এজেন্ডা অনুযায়ী চলতে হবে। কী বিষয়ে আপত্তি আছে পরে দেখতে হবে। এর পর স্পিকার মোতাহার হোসেনকে তার বক্তব্যের বাকি অংশ বলার সুযোগ দেন।
মোতাহার হোসেন তার বক্তব্যে আরো বলেন, আমি ১৯৮৫ সালে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত করে বিজয়ী হয়েছি। এরপর ১৯৯০ সালের উপজেলা নির্বাচনে আমার সঙ্গে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। আগের দিন আমি ২৭০০ ভোটে বিজয়ী হই, পরের দিন আমাকে ২২০০ ভোটে পরাজিত করা হয়। তিনি আরো বলেন, বিমানে একদিন যাওয়ার সময় ঢাকা এয়ারপোর্টে এরশাদ সাহেব আমাকে বলেছিলেন, আপনি আমার জামানত বাজেয়াপ্ত করলেন। আপনার জনপ্রিয়তা আছে বটে।
মোতাহার হোসেনের বক্তব্যের পর জাতীয় পার্টির মশিউর রহমান রাঙ্গাকে স্পিকার পয়েন্ট অব অর্ডারে বক্তব্যের সুযোগ দেন। তিনি বলেন, এরশাদ সাহেব আমাকে লালমনিরহাট-১ আসনে তার মনোনয়ন জমা দিতে বলেছিলেন, আমি জমা দিয়েছিলাম। এরশাদ সাহেব ২০১৪ সালে নির্বাচন করতে চাননি। তাকে নিয়ে এইভাবে টানাহেঁচড়া করা আমাদের কাছে দুঃখজনক।
এর পর জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশিদকে স্পিকার কথা বলার সুযোগ দিলে তিনি বলেন, এরশাদ সাহেব এই সংসদের বিরোধী দলের নেতা ছিলেন। তিনি প্রয়াত হয়েছেন, এখানে বসতেন। মোতাহার সাহেবের এভাবে তাকে নিয়ে কথা বলা উচিত হয়নি। তিনি জেলে থেকে রংপুরে ৫টি আসনে নির্বাচন করে সব কয়টিতে জয়লাভ করেছেন, যদি ২২টি আসন দিত ২২টিতেই জয় লাভ করতেন।
একবার নয়, দুই দুই বার কারাগার থেকে ৫টি আসনে জয় লাভ করেছেন। তিনি (মোতাহার হোসেন) এত বড় বীরবিক্রম হয়ে গেলেন যে, এরশাদ সাহেবের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়ে গেল! এরশাদ সাহেব দাঁড়ায় নাই। আমাকে দিয়ে প্রত্যাহার করিয়ে নিয়েছিল, আবার আমি দাঁড়াইছি। আর দাঁড়াইনি ১৪ সালের নির্বাচনে। আমরা না দাঁড়ালে এই সংসদ থাকে না। এরশাদ সাহেব নির্বাচন করেননি, জোর করে একটা জায়গায় দাঁড়াইয়া, ভোট চাইতে যান নাই, তিনি তখন সিএমএইচে ভর্তি। রংপুরে এমন কোনো সন্তান জন্ম হয় নাই যে, এরশাদ সাহেবকে হারায়। এই বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করতে হবে, তা না হলে রংপুরে অসুবিধা হবে।
এরপর স্পিকার বলেন, যদি তথ্যগত কোনো ভুল থাকে তবে তা বিশ্লেষণ করে প্রত্যাহার করা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়