মাদকবিরোধী অভিযান : রাজধানীতে গ্রেপ্তার ৭০

আগের সংবাদ

রাজশাহীর জনসভায় শেখ হাসিনা : আ.লীগ কখনো পালায় না

পরের সংবাদ

ভেদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স : স্বাস্থ্য কর্মকর্তার স্বেচ্ছাচারিতায় ভোগান্তি বেড়েছে রোগীদের

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শরীয়তপুর প্রতিনিধি : জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হাসান ইবনে আমিনের স্বেচ্ছাচারিতায় চরম দুর্ভোগের শিকার সাধারণ রোগীরা। নানা অনিয়ম, দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনায় বেহাল অবস্থা তৈরি হয়েছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে।
ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। সরকার জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে নানা পদক্ষেপ নিলেও এ উপজেলার চিত্র উল্টো।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ১২ আগস্ট ভেদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন ডা. হাসান ইবনে আমিন। এরপর থেকেই বিভিন্ন ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে ডাক্তারদের ডেপুটেশনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন তিনি। এতে বিভিন্ন ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ চিকিৎসাসেবা পেতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন। অথচ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পদায়নকৃত অনেক ডাক্তার অদৃশ্য কারণে মাসের অধিকাংশ সময় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা না দিয়ে অন্যত্র সময় কাটান। দীর্ঘদিন পর ভেদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিজারিয়ান অপারেশন চালু হলেও অবৈধ আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ প্রকট আকার ধারণ করেছে। বখশিশ, মিষ্টিমুখসহ নানা নামে প্রতি রোগীর কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে ৩-৪ হাজার টাকা।
সাধারণ রোগীদের ভোগান্তি তো নিত্যদিনের ঘটনা। সকাল ৮টায় আউটডোর কার্যক্রম শুরু হওয়ার বিধান থাকলেও সাড়ে ৯টা/১০টা বাজলেও ডাক্তারের দেখা পান না রোগীরা। আবার মিটিংয়ের নামে ইউএইচএফপিওর রুমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা খোশগল্পে সময় কাটে ডাক্তারদের। অথচ রোগীরা সেবা না পেয়ে হতাশায় বাড়ি ফিরে যান।
নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে হাসপাতালের ভেতরেই একটি পুকুর খনন করে হইচই ফেলেছেন এই কর্মকর্তা। ইতোমধ্যে গণমাধ্যমেও এ নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। কী কারণে হঠাৎ করে হাসপাতালের কমপাউন্ডে পুকুর খনন করা হয়েছে তা নিয়ে চলছে নানা মুখরোচক গল্প। পুকুর খনন নিয়ে নানা প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে সাধারণের মনে। বিষয়টি তদন্ত করে রহস্য উদঘাটনের দাবি স্থানীয়দের। ওষুধ কোম্পানির কাছ থেকে মোটা অঙ্কের উৎকোচ নিয়ে প্রমোদ ভ্রমণসহ নানা আনন্দ আড্ডার আযোজন করার অভিযোগও উঠেছে ডা. হাসান ইবনে আমিনের বিরুদ্ধে।
তারাবুনিয়া ২০ শয্যা হাসপাতালে প্রায় শত কোটি টাকার স্থাপনা তৈরি হলেও সাধারণ মানুষের কাজে আসছে না হাসপাতালটি। একজনমাত্র চিকিৎসক রয়েছেন হাসপাতালটিতে। ৪২ বিসিএস থেকে ডা. খাদিজা আক্তার সালমা ও ডা. তাসমিয়া কবির প্রমি নামে দুই ডাক্তারকে সংযুক্তি দেয়া হয়েছিল ওই হাসপাতালে। কিন্তু এরপর তাদেরও ভেদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি করা হয়েছে। ৬ জন নার্সের পরিবর্তে মাত্র ৩ জন নার্স কাজ করেন ওই হাসপাতালে। এতে চরাঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে। সামান্য সমস্যার জন্যও তাদের ভেদরগঞ্জ অথবা চাঁদপুরে যেতে হচ্ছে।
ইউএইচএফপিও হাসান ইবনে আমিন এ উপজেলায় যোগদানের পর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমাতে তিনি কোনো পদক্ষেপ নেননি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
এছাড়া সার্টিফিকেট বাণিজ্য, কোভিড-১৯ এর টিকা প্রদান, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্ন ভাতাদি প্রদানে পার্সেন্টেজ আদায়ের অভিযোগ থাকলেও তার প্রভাবের কারণে মুখ খুলতে সাহস পায় না ভুক্তভোগীরা। তার সিদ্ধান্তের বিষয়ে কেউ কোনো কথা বললে তাকে দূর-দূরান্তে বদলি করার হুমকি দেয়া হয় প্রতিনিয়ত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মচারী বলেন, স্যার এসে কিছু ভালো উদ্যোগ নিয়েছেন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সৌন্দর্য বেড়েছে। কিন্তু আমাদের বিভিন্ন আর্থিক বিষয় আগের অবস্থাতেই থেকে গেছে। পারসেন্টেজ সব জায়গাতেই থাকে, আমাদেরও আছে। এসব প্রশ্ন করে বিব্রত করা ছাড়া লাভ কী?
গৈড্যা গ্রামের নূর জাহান বলেন, আমি সকাল ৭টায় রোগী নিয়ে এসেছি। এক ঘণ্টারও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। এখনো কোনো ডাক্তার আসেন নাই। সাড়ে ৯টা থেকে ১০টার দিকে নাকি ডাক্তার আসে। এখন আর কী করার।
চরকুমারিয়ার আসাদ হাওলাদার বলেন, বিদেশে যাওয়ার জন্য ফাইজার টিকা দিতে এসেছিলাম। কিন্তু টাকা দিতে পারি নাই বলে আমাকে টিকা দেয়া হয়নি।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হাসান ইবনে আমিন বলেন, এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমি এসে হাসপাতালের অনেক উন্নয়ন করেছি। পরিকল্পিতভাবে একটি মহল আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নেমেছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়