মাদকবিরোধী অভিযান : রাজধানীতে গ্রেপ্তার ৭০

আগের সংবাদ

রাজশাহীর জনসভায় শেখ হাসিনা : আ.লীগ কখনো পালায় না

পরের সংবাদ

এই ডিসেম্বরের মধ্যেই ঢাকা-কক্সবাজার ট্রেন

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : চলতি ২০২৩ সালের ডিসেম্বর নাগাদ ঢাকা থেকে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে ট্রেন চলাচল করবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এরই মধ্যে এই মেগা প্রকল্পের কাজ ৭৮ শতাংশ শেষ হয়েছে। বাকি আছে মাত্র ২২ শতাংশ। ১০০ কিলোমিটার রেললাইনের মধ্যে ৬০ কিলোমিটার এখন দৃশ্যমান। প্রকল্পের অধীনে থাকা অন্যান্য কাজও চলছে সমানতালে। কাজের অগ্রগতি বিবেচনা করে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে রেলে করে কক্সবাজার যাওয়া যাবে বলে মনে করছে তারা।
এদিকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে নির্মাণ করা হচ্ছে ঝিনুক আকৃতির দৃষ্টিনন্দন রেলওয়ে স্টেশন। এটি দেশের একমাত্র আইকনিক রেলওয়ে স্টেশন। কক্সবাজার ঝিলংজা ইউনিয়নের হাজিপাড়া এলাকায় ২৯ একর জমির ওপর এই রেলস্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে। স্টেশন ভবনের আয়তন ১ লাখ ৮২ হাজার বর্গফুট। ছয়তলা ভবনটির বিভিন্ন অংশে অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলছে। নির্মাণাধীন ভবন ঘেঁষে ৬৫০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১২ মিটার প্রস্থের তিনটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি হচ্ছে।
স্টেশনের পাশেই রেলওয়ের আবাসিক এলাকা গড়ে তোলা হয়েছে। সেখানে ৮টি ভবনের নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে। স্টেশনটিতে আবাসিক হোটেলের পাশাপাশি ক্যান্টিন, লকার, গাড়ি পার্কিং ইত্যাদির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পর্যটকরা স্টেশনের লকারে লাগেজ রেখে সারাদিন সমুদ্র সৈকতে বা দর্শনীয় স্থানে ঘুরতে পারবেন। এই স্টেশন দিয়ে দিনে ৪৬ হাজার মানুষ আসা-যাওয়া করতে পারবেন।
দৃষ্টিনন্দন এই রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণের কাজ প্রায় ৮৫ শতাংশ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান। তিনি বলেন, চলতি বছরই কক্সবাজার রেললাইনে আমরা ট্রেন চালাতে চাই। এ লক্ষ্যে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। ১০০ কিলোমিটার রেললাইনের মধ্যে ৬০ কিলোমিটারের বেশি এখন দৃশ্যমান। বর্তমানে প্রকল্পের অগ্রগতি ৭৮ শতাংশ। ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ আছে। আমরা চেষ্টা করছি প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই এই পথে ট্রেন চালু করার।
প্রকল্প পরিচালক জানান, ১০০ কিলোমিটার রেলপথে কক্সবাজার আইকনিক স্টেশনসহ মোট স্টেশন থাকছে ৯টি। বাকি ৮ স্টেশন হলো- সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকরিয়া, ডুলাহাজারা, ঈদগাঁও, রামু, কক্সবাজার সদর ও উখিয়া।
মুফিজুর রহমান জানান, সব রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণের কাজও শেষ পর্যায়ে। কোনোটির ৮০ শতাংশ, কোনোটির ৬০ শতাংশ কাজ এগিয়েছে। এ রেললাইনে সাঙ্গু, মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদীর ওপর নির্মাণ করা হয়েছে ৩টি বড় রেল সেতু। এ ছাড়া এই রেলপথে নির্মাণ করা হচ্ছে ৪৩টি ছোট সেতু, ২০১টি কালভার্ট এবং ১৪৪টি লেভেল ক্রসিং। সাতকানিয়ার কেঁওচিয়া এলাকায় তৈরি হচ্ছে একটি ফ্লাইওভার, রামু ও কক্সবাজার এলাকায় দুটি হাইওয়ে ক্রসিং। হাতি ও অন্যান্য বন্যপ্রাণীর চলাচলে ৫০ মিটারের একটি ওভারপাস ও তিনটি আন্ডারপাস নির্মাণ করা হচ্ছে। কাজের অগ্রগতি বিবেচনা করে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে রেলে করে কক্সবাজার যাওয়া যাবে বলে জানান তিনি।
রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, এ প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রীর একটি অগ্রাধিকার ভিত্তিক প্রকল্প। আমরা আশা করছি চলতি বছরের মধ্যে ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন চালানো সম্ভব হবে। কাজের অগ্রগতি আশানুরূপ। এটি শেষ হলে ভ্রমনপিপাসুদের জন্য একটা মাইলফলক হবে। তাছাড়া রাজধানীর সঙ্গে কক্সবাজার সংযুক্ত হলে অনেক কম সময়ে ঢাকা থেকে সমুদ্র নগরী কক্সবাজারে পর্যটকরা যেতে পারবেন।
রেলমন্ত্রী বলেন, কক্সবাজারে রেল যোগাযোগ চালু হলে শুধু পর্যটন খাতে সম্ভাবনা বাড়বে তা নয়, লবণ, মৎস্য, কৃষি, যোগাযোগসহ অন্যান্য খাতেও বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার ও রামু-ঘুমধুম পর্যন্ত মিটারগেজ রেলপথ নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত ৮৮ কিলোমিটার এবং রামু থেকে কক্সবাজার ১২ কিলোমিটার। প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের প্রায় সাত বছর পর ২০১৮ সালে ডুয়েল গেজ এবং সিঙ্গেল ট্র্যাক রেললাইন প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয়। দোহাজারী থেকে কক্সবাজার রামু পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণে প্রথমে ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা।
২০১৬ সালে প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন করে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। অর্থায়ন করেছে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও বাংলাদেশ সরকার।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়