‘৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান স্মরণে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের আয়োজন

আগের সংবাদ

মূল্যস্ফীতির চাপে সাধারণ মানুষ : জীবনযাত্রার ব্যয় অস্বাভাবিক বেড়েছে, কর্মসংস্থান ও আয় বাড়ানোর তাগিদ বিশেষজ্ঞদের

পরের সংবাদ

উপহারের কবুতর থেকে মাসে অর্ধলাখ টাকা আয় রুবেলের

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি : গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের পানজোরা গ্রামের আব্দুল কাদির সিকদারের ছেলে রুবেল সিকদার (৩৪)। আজ থেকে প্রায় বছর দুই আগে মোটামুটি বেকারও ছিলেন। মাঝে মধ্যে কিছু কাঁচা শাক-সবজি ঢাকায় নিয়ে যেতেন। আর তা দিয়ে যা ব্যবসা হতো তাতেই স্ত্রী, সন্তান ও বাবা-মাকে নিয়ে কোনো মতে দিন পার করতেন। একদিন এক বন্ধুর দাওয়াতে তার বাড়িতে বেড়াতে যান রুবেল সিকদার। সেখান থেকে বন্ধুর উপহার হিসেবে ৫ জোড়া কবুতর উপহার হিসেবে পান। উপহার হিসেবে পাওয়া কবুতর দিয়ে শখের বসে শুরু হয় কবুতরের খামার। আর সেই ৫ জোড়া দিয়ে শুরু করা খামারে এখন বিভিন্ন জাতের ১০০ জোড়া কবুতর। সেখানে কাজ সব সময় দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছেন ২ জন প্রশিক্ষিত যুবক। এর সবই সম্ভব হয়েছে রুবেলের শ্রম ও মেধার কারণে।
শীতের সকালে রুবেল সিকদারের বাড়ির ৩ তলার ছাদে প্লাস্টিকের বেড়ায় বেষ্টিত কবুতরের খামারের এক কোনে দাঁড়িয়ে কথা হয় তার শখের কবুতর পালন নিয়ে। রুবেল সিকদার জানান, দেড় বছর আগে বন্ধুর দেয়া ৫ জোড়া দিয়ে শুরু করেন কবুতরের খামার। সেখান থেকে এখন ১০০ জোড়া। তবে এই দেড় বছরে সময়ের মধ্যে মাঝখানে বড় ধরনের ননর একটি ধাক্কা তার জীবনে তিনি পার করছেন। যা কাটিয়ে উঠতে তাকে ভাল বেগ পেতে হয়েছে। তার শখের খামারে বেশ কিছু কবুতর মারা যায়। সেখান থেকে তিনি তার পরিশ্রম ও মেধা দিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। তবে শখের বসে কবুতর পালন করতে গিয়ে তিনি মনে করছেন এটা বাণিজ্যিকভাবে পালন করা জরুরি। আর সেই চিন্তা মাথায় রেখে তিনি সামনে আগাচ্ছেন। তার খামারে কবুতরের পাশাপাশি দেশি জাতের মুরগি, ছাগল ও বিদেশি জাতের গাভীও রয়েছে।
তিনি জানান, শখের কবুতর খামার দেখে তার বাড়ির আশপাশের প্রতিবেশি ও বন্ধু-বান্ধব তার কাছ থেকে কবুতর নিয়ে অন্যরা কবুতর পালনে উদ্ধুদ্ধ হচ্ছেন। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকেও শখের খামারিরা তার খামার থেকে কবুতর কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। আবার তিনিও বিভিন্ন জেলা থেকে তার পছন্দ মতো কবুতর কিনে নিয়ে আসেন। রুবেলের খামারে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার ও সর্বোনি¤œ ১ হাজার টাকা দামের বিভিন্ন জাতের কবুতর মিলছে। খামারে সিরাজী, চিলা, রেস, বুম্বাই, মিশরীয় বুম্বাই, পাকিস্তানী কিং, মিশরীয় মেগপাই, ডায়মন্ড কিং, বিউটি কিং, দেশীসহ বেশ কিছু জাতের কবুতর রয়েছে। সব সময় কবুতরের খামার পরিচর্চার জন্য দুই জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যারা এই খামার দেখভাল করেন।
এছাড়াও তার গরু, ছাগল ও মুরগীর খামারে আরো ৬ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে। আর তারা সবাই প্রশিক্ষিত। এছাড়াও উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের লোকজন সব সময় খোঁজখবর নিচ্ছেন। এমনকি কোনো সমস্যায় তাদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করলেও তারা ছুটে আসেন। তাদের পরামর্শে কবুতরকে নিয়মিত টিকা দেয়া হয়। তবে কবুতরের খাবারের তালিকায় গম, ভূট্টা, রেজা ও সরিষা উল্লেখ্যযোগ্য। রুবেল আরো বলেন, ৫ জোড়া উপহারের কবুতরের জন্য প্রথমে ৩টি ছোট খাঁচা দিয়ে শুরু করি। এরপর যখন কবুতরের বংশ বৃদ্ধি হতে থাকে, তখন প্রায় লাখ টাকা খরচ করে কবুতরের জন্য সেট তৈরি করি। সেখানে দেড় থেকে ২০০ কবুতর পালন করা সম্ভব। এখন খামারে প্রায় সাড়ে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকার কবুতর রয়েছে। প্রতি মাসে কবুতরের খাবার ক্রয় করতে ১০/১২ হাজার টাকা লাগে। এছাড়া দুইজন নিয়োগপ্রাপ্ত লোক তো আছেই। কবুতরের খাবার ও শ্রমিকের মজুরি বাদ দিয়ে প্রতি মাসে কবুতরের এই খামার থেকে প্রায় ৫০/৬০ হাজার টাকা আয় হয়। বেকার যুব সমাজের উদ্দেশ্যে রুবেল সিকদার বলেন, বেকার বা অলস থাকা একদমই ঠিক নয়। কারো ইচ্ছাশক্তি থাকলে ছোট থেকেই শুরু করা যায়।

আপনারা ২ জোড়া দিয়ে শুরু করেন, দেখবেন এক বছরের মধ্যে আপনি আপনার পরিশ্রম দিয়ে এর ভালো সুফল পাবেন। আমি এক সময় বেকার ছিলাম। কিন্তু মাত্র ৫ জোড়া দিয়ে শুরু করে আজকে আমি লাভবান এবং এটা লাভজনকও বটে। বর্তমান সরকার বেকার যুবকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রশিক্ষিত করছেন এবং সহজ সুদে ঋণ দিচ্ছেন।
প্রতিবেশী শাহ আলম সিকদার (৩৯) বলেন, আমারই প্রতিবেশী ছোট ভাই রুবেল সিকদার কবুতরের খামার করেছে। সেখানে এক মাসের প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রায় ৬ মাস ধরে কাজ করছি। এখানে বেশ ভালো বেতনও পাচ্ছি। আলহামদুলিল্লাহ এই খামারের বেতন দিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে ভালোই চলছে।
রুবেল সিকদারের কবুতরের খামারের কর্মচারী আরেক যুবক নাসির উদ্দিন পিন্টু (৪০) বলেন, আমার বাড়ি নেত্রকোনা জেলায়। প্রায় বছরখানেক ধরে রুবেল ভাইয়ের কবুতরের খামারে কাজ করছি। কবুতরের পাশাপাশি গরুর খামারও দেখাশোনা করছি। বেতনও পাচ্ছি ভালো। স্ত্রী, সন্তান ও বাবা-মা নিয়ে ভালোভাবেই সংসার চলছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ ইউসুফ হাবিব বলেন, রুবেল সিকদার একজন সফল উদ্যোক্তা। কেননা তিনি ৫ জোড়া কবুতর নিয়ে শুরু করে তার খামারে এখন ১০০ জোড়ার উপরে কবুতর। তাকে দেখে আশপাশের অনেক বেকার যুবকরাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়