‘৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান স্মরণে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের আয়োজন

আগের সংবাদ

মূল্যস্ফীতির চাপে সাধারণ মানুষ : জীবনযাত্রার ব্যয় অস্বাভাবিক বেড়েছে, কর্মসংস্থান ও আয় বাড়ানোর তাগিদ বিশেষজ্ঞদের

পরের সংবাদ

আইন প্রয়োগেও মিলছে না প্রতিকার : সৈয়দপুরে ফসলি জমির মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

জিকরুল হক, সৈয়দপুর (নীলফামারী) থেকে : সৈয়দপুরে তিন ফসলি জমির উর্বর মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়। আইন প্রয়োগেও মিলছে না প্রতিকার। ইটভাটা মালিকরা তাদের নিযুক্ত দালাল দিয়ে জমির মালিকের প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে ফসলি জমির উর্বর মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এতে করে খাদ্যে উদ্বৃত্ত উপজেলা সৈয়দপুরে খাদ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেও ফসলি জমির মাটি কাটা বন্ধ করতে পারছে না। সৈয়দপুরের পাঁচ ইউনিয়নে ২৮টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে ২৬টি ইটভাটার বৈধ কোন কাগজপত্র নেই। নীতিমালার বাইরে গড়ে ওঠা ইটভাটাগুলোতে অবৈধ উপায়ে ফসলি জমির মাটি মজুদের মহোৎসব শুরু হয়েছে। ভাটা মালিকদের এ অপকর্ম রুখতে গত ২৩ জানুয়ারি কামারপুকুর ইউনিয়নের এ এন বি ভাটা মালিক নাজমুল ইসলাম সুপারিওয়ালার ফসলি জমির মাটি কাটার দায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এ আদালত পরিচালনা করেন সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফয়সাল রায়হান। জরিমানার টাকা পরিশোধের পরেও ওই ভাটা মালিক ফসলি জমির মাটি কাটা বন্ধ করেননি। এর ফলে আইন প্রয়োগ করেও মিলছে না প্রতিকার।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কামারপুকুর ইউপির বাগডোকরা খাল সংলগ্ন এলাকায় গড়ে ওঠা নাজমুল ইসলাম সুপারিওয়ালার এ এন বি ইটভাটায় অর্ধশত ট্রলিযোগে ফসলি জমির মাটি কেটে এনে ভাটায় স্তূপ করা হচ্ছে। এসব মাটি আনা হচ্ছে ওই ভাটার পাশের তিন ফসলি জমি থেকে। আর ভাটা মালিকরা তাদের নিযুক্ত দালাল দিয়ে ভূমি মালিকদের আর্থিক প্রলোভন দিয়ে জমির টপ সয়েল (উপরি অংশ) কেটে আনছে। কথা হয় এলাকার বাসিন্দা মোর্শেদা বানু, রহিম উদ্দিন, জালাল, আমিনুল, আনোয়ারের সঙ্গে। তারা জানান, ইটভাটা মালিকরা প্রথমে অভাবি ভূমি মালিককে প্রলোভনের জালে ফেলে সুবিধামত জমির টপ সয়েল কিনে নেন। নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে করে চুক্তি। আর এই চুক্তি মোতাবেক জমির তিন থেকে চার ফুট মাটি কেটে নেয়। এরপর বোরো ও আমন মওসুমে মাটি কেটে নেয়া জমির আশপাশের ভূমি মালিকরা জমির পানি আটকিয়ে রাখতে পারে না। অনেক সময় পানির তোড়ে উঁচু জমির আলও ভেঙে যায়। ফলে ফসল আবাদ করা কঠিন হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় ভাটা মালিকদের দালালরা সহজ সরল ভূমি মালিকদের নানা ধরনের কথার মার প্যাচে ফেলে এবং নগদ অর্থের লোভ দেখিয়ে জমির টপ সয়েল বিক্রি করার চুক্তি করে। আর চুক্তি হয়ে গেলেই মাটি কাটা শুরু করে। এমন করেই প্রতি বছর শত শত বিঘা জমির টপ সয়েল কাটা হচ্ছে। জমির উর্বর অংশ কেটে নেয়ার ফলে তিন থেকে পাঁচ বছর ওই জমিতে আশানুরূপ ফসল চাষ করা সম্ভব হয় না। এভাবেই উদ্বৃত্ত খাদ্যের উপজেলা সৈয়দপুরে খাদ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছে। তিন ফসলি জমির মাটি কাটা বিষয়ে জানতে কথা হয় এ এন বি ইটভাটা মালিক নাজমুল ইসলাম সুপারিওয়ালার সঙ্গে। তিনি মাটি কাটার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, জমি ছাড়া মাটি পাওয়া তো যাবে না। ফসলি জমির মাটি কাটার দায়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দেয়ার পরেও মাটি কাটছেন কেন এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি এড়িয়ে গিয়ে বলেন প্রতি বছর প্রশাসনকে মোটা অংকের ডোনেশন দেই।
এ প্রসঙ্গে মন্তব্য জানতে মুঠোফোনে কথা হয় নীলফামারী জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হারুন-অর-রশিদের সঙ্গে। তিনি জানান, উঁচু জমির মাটি কাটা যাবে। তবে টপ সয়েল সরিয়ে রাখতে হবে। অবশ্য অনেক ভাটা মালিক তা মানছেন না।
সৈয়দপুর উপজেলার বৈধ ভাটার সংখ্যা নিয়ে কথা হলে হারুন বলেন, ২৮টি ইটভাটার মধ্যে ২৬টির পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন কাগজপত্র নেই।
সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল রায়হান মুঠোফোনে বলেন, আইন প্রয়োগে আরো বেশি কার্যকর ভূমিকা কিভাবে রাখা যায় সেই বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়