হাইকোর্টে বিএনপি নেতা খোকন ও মিলনের জামিন

আগের সংবাদ

ভোটের আগাম প্রচারে আ.লীগ : সভা-সমাবেশে উন্নয়ন তুলে ধরে নৌকায় ভোট চাওয়া হচ্ছে

পরের সংবাদ

হত্যাকারীদের শাস্তি চান ছেলে, আপত্তি মেয়ের : নানাকে খুনে নাতি-নাতনিসহ ৫ জনের দোষ স্বীকার > বাদী মামলা তুললেও রাষ্ট্র দেখবে : রাষ্ট্রপক্ষ > মেডিকেল রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা : তদন্ত কর্মকর্তা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রকি আহমেদ : ট্যুরের শখ মেটাতে টাকার দরকার ছিল নাতি-নাতনিদের। সত্তোরোর্ধ্ব বৃদ্ধ নানা হাজী মুনসুর আহম্মেদের কাছে ছিল নগদ টাকা। তাই নানাকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ওই টাকা ডাকাতির পরিকল্পনা করে নাতিরা। তবে ইনজেকশন দেয়ার সময় বাধা দেয়ায় মারধরে নানার মৃত্যু ঘটে বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে। রাজধানীর চকবাজারে গত বছরের ১৭ নভেম্বর এই চাঞ্চল্যকর খুনের ঘটনায় মুনসুর আহম্মেদের বড় ছেলে আসগার আহম্মেদ জুয়েল দস্যুতাসহ হত্যার অভিযোগে অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলা করেন। পরে ভাগনে শাহাদাত মুবিন আলভী, ভাগনি আনিকা তাবাসসুম ও আনিকার বয়ফ্রেন্ডসহ ৫ জনের সংশ্লিষ্টতা বের হয়ে আসে। আসগার আহম্মেদ চান তার বাবার হত্যাকারীদের শাস্তি হোক। তবে নিজের ছেলে-মেয়ের মুক্তির জন্য আইনি লড়াই করছেন মুনসুর আহম্মেদের মেয়ে শাহানা আক্তার ওজমা।
ভাগনে-ভাগনিদের বিরুদ্ধে মামলা চলমান রাখবেন কিনা, প্রশ্নে বাদী আসগার আহম্মেদ জুয়েল ভোরের কাগজকে বলেন, আমি আমার বাবার হত্যার বিচার চাই। না হলে তো মামলার বিষয়ে আপত্তি জানাতাম। এছাড়া মামলা তুলে নেয়ার বিষয়টি আমাদের হাতেও নেই। রাষ্ট্রপক্ষই মামলা দেখছে।
এদিকে আসামি আলভি-আনিকার বাবা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মাকসুদুর রহমান ও মা আজিমপুর গার্লস স্কুলের সিনিয়র শিক্ষিকা শাহানা আক্তার সন্তানদের বাঁচানোর জন্য আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। আদালতে এক শুনানি শেষে তাদের মা শাহানা আক্তার কেঁদে ভোরের কাগজকে বলেন, বাবাকে হারালাম, আর এখন আমার দুই ছেলে-মেয়েকেও হারাতে বসেছি। কোনো মা চাইবে না তার ছেলে-মেয়ের শাস্তি হোক। সন্তানদের কখনো অভাবে রাখিনি। টাকার জন্য তারা এ কাজ করতে পারে না।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চকবাজার থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম বলেন, মামলার তদন্ত চলছে। ট্যুরের টাকার জন্য আসামিরা তাদের নানাকে হত্যা করেছে বলে এখন পর্যন্ত জানতে পেরেছি। আসামিদের কাছ থেকে ডাকাতি করা টাকা জব্দ করা হয়েছে। তবে মেডিকেল রিপোর্ট এখনো হাতে পাইনি। রিপোর্ট এলে আরো বিস্তারিত জানা যাবে। মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন পিছিয়ে আগামী ২৯ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য রয়েছে।
এদিকে ‘বাদী মামলা তুলতে চাইলে সম্ভব কিনা’ প্রশ্নে ঢাকা মহানগর অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল বলেন, ‘থানায় হত্যা মামলা হলে বাদী তুলে নিতে চাইলেও রাষ্ট্রপক্ষ মামলা দেখবেন। তবে এ মামলায় কাউকে গ্রেপ্তার করা হলে তাদের বিরুদ্ধে কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ না পেলে খালাস পেতে পারেন।’
এদিকে নানার খুনে নাতি-নাতনি বাদেও তাদের ৩ বন্ধুকে এ হত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন- আনিকার বয়ফ্রেন্ড আবু সুফিয়ান রাজু, রাজুর ভাই সায়ীদ রহমান রায়হান ও তাদের ফুফাতো ভাই সাহিদ হোসেন। ৫ আসামিই আদালতে ১৬৪ ধারায় হত্যার বিষয়ে নিজেদের দোষ স্বীকার করেছেন।
আসামি রাজু ও রায়হানের বাবা বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির মহাসচিব আব্দুর রহমান বলেন, আমার ছেলেরা ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত না। আনিকার সঙ্গে আমার ছেলের সম্পর্ক রয়েছে বলে পুলিশ সন্দেহভাজন হিসেবে তাকে গ্রেপ্তার করেছে। সুষ্ঠু তদন্তে সব বের হয়ে আসবে। আমার ছেলেরা দোষী হলে তাদের বিচার হোক- শিক্ষক হিসেবে আমিও চাই। তিনি বলেন, আনিকার সঙ্গে আমার ছেলে রাজুর ৭ম শ্রেণি থেকে সম্পর্ক। ইন্টারমিডিয়েট পড়ার পর আমার ছেলে আর পড়ালেখা করেনি। আনিকাকে নিয়ে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে যাওয়া-আসা রাজুই করত। আমরা দুই পরিবারই সম্ভ্রান্ত। সম্পর্কের বিষয়ে সব জানি। কিছু টাকার জন্য আমাদের ছেলেরা এমন কিছু করবে তা বিশ্বাস হয় না।
এদিকে হত্যার বিষয়ে পুলিশ জানায়, গত বছরের ১৭ নভেম্বর রাতে মুনসুর আহম্মেদকে বাসায় রেখে পরিবারের সদস্যরা একটি বিয়ের দাওয়াতে যান। আনিকাও সেখানে যান। বিয়ে বাড়ি থেকে ডাকাতির পরিকল্পনার তদারকি করেন আনিকা। আর বাড়ির আশপাশে থেকে আনিকার বয়ফ্রেন্ড রাজু দেখভাল হিসেবে কাজ করেন। ডাকাতি করতে বাসায় প্রবেশ করেন আনিকার ভাই আলভী, রাজুর ভাই রায়হান এবং সাঈদ। এরপর তারা মুনসুর আহম্মেদকে অচেতন করার জন্য ইনজেকশন দিতে গেলে তিনি বাধা দেন। এরপর মারধরের একপর্যায়ে মুনসুর আহম্মেদ মারা যান। বাসা থেকে ৯২ হাজার টাকা নিয়ে যান আসামিরা। বাসায় ফিরে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় মুনসুর আহম্মেদকে উপুড় হয়ে মৃত পড়ে থাকতে দেখেন তার স্বজনরা। পরে ১৯ নভেম্বর অজ্ঞাত আসামি করে চকবাজার থানায় দস্যুতাসহ হত্যা মামলা করেন নিহতের ছেলে আসগার আহম্মেদ। পরে তদন্তে ঘটনাস্থলে একটি সিরিঞ্জ পাওয়া যায়। এই সিরিঞ্জকে কেন্দ্র করে তদন্তে মোড় নেয়। বেরিয়ে আসে মুনসুর আহম্মেদ হত্যায় তার নাতি-নাতনিরা জড়িত। ২২ নভেম্বর রাতে গ্রেপ্তার করা হয় দুই নাতি ও নাতনির বয়ফ্রেন্ডসহ ৫ জনকে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়