হাইকোর্টে বিএনপি নেতা খোকন ও মিলনের জামিন

আগের সংবাদ

ভোটের আগাম প্রচারে আ.লীগ : সভা-সমাবেশে উন্নয়ন তুলে ধরে নৌকায় ভোট চাওয়া হচ্ছে

পরের সংবাদ

প্রশাসনের নীরব ভূমিকায় হতাশ উপজেলাবাসী : বিদ্যালয়ের পাশেসহ ২৫ ফসলি জমিতে ইটভাটা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

পাটোয়ারী হোসেন শরীফ, রামগঞ্জ (ল²ীপুর) থেকে : রামগঞ্জে কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনেসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ফসলি জমিতে ২৫টি ইটভাটায় সরকারি বিধি লঙ্ঘন করে ইট পোড়ানোর ধূম পড়েছে। সরজমিন দেখা গেছে, রামগঞ্জ উপজেলার নাগ রাজারামপুর গ্রামে কেথুড়ী বাজার এলাকায় পানিয়ালা সড়কের পাশে ফসলি জমিতে ইটভাটার সভাপতি ছানা উল্যা পাটোয়ারীর মেসার্স সানাউল্যা ম্যানুফ্যাকচার ব্রিকসসহ কয়েকটি ইটভাটা দীর্ঘদিন ধরে বীরদর্পে ইট পোড়ানো মহোৎসব চালিয়ে যাচ্ছে। এ ইট ভাটাগুলো ফসলি জমিতে ও সড়কের পাশে থাকায় শিক্ষক শিক্ষার্থীসহ জনসাধারণের চলাচলের মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটছে। এছাড়া বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন ওই এলাকার সাধারণ মানুষ। ভাটার কালো ধোঁয়া ও উত্তাপ বাসা-বাড়িতে ছড়িয়ে পড়েছে।
এ ব্যাপারে বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় একাধিক বার সংবাদ প্রকাশের পরও পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় জেলা-উপজেলা প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করে আসছে।
ইটভাটার মালিকরা সরকারি বিধি অমান্য করে ভাটায় কয়লার পরিবর্তে কাঠ, টায়ার, তেলের গাদ, বোতামের গুড়া, রাসায়নিক বর্জ্য ও ফ্যালাস্টিক দিয়ে ইট পোড়াচ্ছে। প্রতিটি ইটভাটা লাখ লাখ ঘনফুট টপ সয়েলের স্তূব দেখা গেছে। যা বিভিন্ন আবাদি জমিন থেকে বড় চাকার ট্রলি দিয়ে মাটি সংগ্রহ করে। বড় চাকার ট্রলি দিয়ে মাটি বহন করায় কাঁচা-পাকা রাস্তাগুলো অনেক স্থানে বিশাল গর্ত হয়ে চলাচলের প্রতিবন্ধাকতার সৃষ্টি করছে।
ইটভাটার পাশে বসবাসকারীরা জানান, ইট পোড়ানোর সময় দুর্গন্ধ ও বাতাসে ধুলো কণা ছড়ানোর ফলে বিভিন্ন রোগে লোকজন আক্রান্ত হচ্ছে। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ অনুযায়ী বছরে একাধিক কৃষিপণ্য উৎপাদন হয় এমন জমি, বন বিভাগের ২ কিলোমিটার দূরত্বের ভেতরে, গ্রামীণ সড়কের অর্ধ কি.মি. দূরত্বের ভেতরে ও আবাসিক এলাকায় ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না বলে আইন থাকলেও এ উপজেলায় আইনের তোয়াক্কা না করে বীরর্দপে ইট ভাটার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
উপজেলার দেহলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৫০ গজের মধ্যে জেবিএম ব্রিকস, মদিনা ব্রিকস-১, মদিনা ব্রিকস-২, দেহলা বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২শ গজের মধেয়্য মক্কা ব্রিকস, কাঞ্চনপুর ইউনিয়নে ব্রহ্মপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১শ গজের মধ্যে, এইচটিসি ব্রিকস, হাজির পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২শ গজের মধ্যে তালুকদার, উত্তর শৈরশৈই গ্রামের মেসার্স মোরশেদ বিকস, মেঘনা ব্রিকস এন্ড ম্যানুফ্যাকচারিং, সুধারাম এবিএম ব্রিকস, আকারতমা ফাহাদ ব্রিকস ম্যানুফ্যাকচার, এসবিএম ব্রিকর্স, এফবিএম ব্রিকর্স, কাটাখালী এইচটিসি ব্রিকর্স, ভাটরা রামসিং পুর এমএসবি ব্রিকস, লক্ষীধর পাড়া মোতালেব ব্রিকস, হাজীরপাড়া এমডিএ ব্রিকস, দেহলা মদিনা ব্রিকস, জে বি এম ব্রিকস, আজিমপুর পাটওয়ারী ব্রিকসসহ উপজেলায় ২৫টি ইটভাটা রয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, এসব ইটভাটার মালিক সেন্ডিকেটের মাধ্যমে ক্রেতাদের কাছে উচ্চ মূল্যে ইট বিক্রি করছেন। আগের বছরের চেয়ে চলতি বছর প্রতি হাজার ইটের দাম ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা বাড়ানো হয়েছে। গত বছর ইটভাটাগুলো প্রতি হাজার ইটের দাম ৮ হাজার টাকা এবার বছরের শুরুতে প্রতি হাজার ইটের দাম নেয়া হচ্ছে ১২ হাজার থেকে ১৩ হাজার টাকা।
এ অতিরিক্ত অর্থ আদায় ছাড়াও ভাটার মালিকরা বছরের পর বছর ছোট আকারের ইট তৈরি করে ক্রেতাদের ঠকাচ্ছেন। নির্মাণ সামগ্রী হিসেবে ইট তৈরির জন্য বিএসটিআই নির্ধারিত নিয়মে প্রতিটি ইটের দৈর্ঘ্য ২৪ সেন্টিমিটার, প্রস্থ ১১.৫০ সেন্টিমিটার ও উচ্চতা ৭ সেন্টিমিটার থাকার কথা। অথচ রামগঞ্জের বিভিন্ন ইট ভাটায় ইটের সাইজ বিভিন্নরকমের। এ ইট বাড়ানো ও সাইজে ছোট ইট তৈরির ব্যাপারে প্রশাসনের কোনো পদক্ষেপ নেই।
এ কারণে দুই দিক দিয়ে প্রতারিত হচ্ছে ক্রেতারা। এত অনিয়মের পরও রামগঞ্জে ইট ভাটাগুলোতে নেই কোনো মনিটরিং সেল। ভোক্তাদের অধিকার সংরক্ষণে প্রশাসনের তৎপরতা না থাকায় উপজেলাবাসী হতাশ হয়ে পড়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়