প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
এআর সোহেব চৌধুরী, চরফ্যাশন (ভোলা) থেকে : সবুজ ঘাসে ভরপুর ভোলার চরফ্যাশনের বিস্তীর্র্ণ চরাঞ্চলে মহিষ পালনে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি মহিষের দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য বিক্রি করে নগদ লাভের সম্ভাবনাও ব্যাপক।
মূলত চরফ্যাশন উপজেলাধীন ছোট বড় প্রায় ২০টি চর রয়েছে। যার আয়তন প্রায় ২০ হাজার একরের অধিক। বনায়নকৃত বিস্তৃত জঙ্গলে ঘেরা এসব চরের সবুজ ঘাসের বুকে দেখা মেলে শত শত মহিষ বাথানের। এসব চর সংলগ্ন আশপাশের এলাকা থেকে মহিষ বর্গা নেয়া চাষিরা ভাটার সময় চারণভূমিতে মহিষের বাথান ছেড়ে দেয়। মহিষের বাথান সারাদিন পেট ভরে ঘাস খায়। এ সময় কোনো কোনো রাখাল খাল ও নদীর স্রোতে জাল পেতে মাছ ধরে সময় কাটান। সারাদিন ঘাস লতাপাতা খাওয়া শেষে বিকালে রাখালের হাঁকডাকে নদী ও খাল সাঁতরে মহিষের বাথান গিয়ে আশ্রয় নেয় খোলা মাঠ অথবা মহিষ কিল্লায়। এ বিষয়ে চর কচ্ছপীয়ার মহিষের রাখাল আবদুল বারেক (৪৫) জানান, গত বছর তিনি ১৬টি মহিষ বর্গা নিয়েছিলেন। এর মধ্যে প্রায় ৮টি মহিষ বাচ্চা দিয়েছে। যেগুলোর বয়স বর্তমানে ৬-৮ মাস। তার সব মিলিয়ে এখন ২৪টি মহিষ।
তিনি জানান, সকালে নদীতে মহিষ নামিয়ে দিলে ভেসে ভেসে বড় মহিষের পিছু মাঝারি ও ছোট মহিষগুলো চরে গিয়ে ওঠে। চর হাসিনা জোয়ায়ারের সময় জলমগ্ন থাকে। ভাটার সময় কাদামাখা কচকচে ঘাস খেয়ে মহিষগুলোর পেট ভরে যায়। বেলা ডোবার আগেই আবদুল বারেক নৌকা নিয়ে চরে চলে যান। এরপর মহিষের বাথান স্রোতে গা ভাসিয়ে সাঁতরে ফিরে আসে চর কচ্ছপীয়ার দক্ষিণে দৌলতপুরের বেড়িবাঁধ এলাকায়।
স্থানীয় বারেক, হালিম, কামালসহ একাধিক মহিষ বাথানের রাখাল জানান, চর ছাড়া বড় পরিসরে মহিষ পালন করা সম্ভব না। গ্রামে ঘাসের সংকট রয়েছে। তাই ভাটার সময় তেঁতুলিয়া নদীর মধ্যে জেগে ওঠা চরে ঘাস খাওয়ানোর জন্য মহিষগুলোকে ছেড়ে দেয়া হয়। তারা আরো জানান, একেকটি মহিষের পেছনে বছরে ৩২-৩৩ হাজার টাকা খরচ হয়। বছর শেষে বাচ্চা ও দুধ বিক্রি করে টাকা আয় করেন তারা। এসব চরের গবাদিপশুর মালিক, বর্গাদারসহ খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চরফ্যাশনের উপকূলবর্তী চরাঞ্চলে মহিষ পালনে ব্যাপক সম্ভাবনা থাকলেও কয়েকটি সমস্যা রয়েছে। এখানে প্রচুর চর থাকলেও গো চারণভূমি ও কাঁচা ঘাসের সংকট রয়েছে। কারণ চরগুলোর হাজার হাজার হেক্টর জমি প্রভাবশালী মহল ও বন বিভাগের দখলে রয়েছে। এসব চরে গবাদিপশু চরালে অনেককেই টাকা দিতে হয়। এছাড়া অপরিকল্পিত গ্রাম ও হাটবাজার নির্মিত হওয়ায় চারণভূমি ও ফসলি জমি নষ্ট হচ্ছে। পাশাপাশি নোনাপানির সমস্যা। শীতের শেষে নদীর পানি লবণাক্ত হয়ে যায়। যা চার-পাঁচ মাস থাকে। এই পানি খেয়ে গরু-মহিষের পাতলা পায়খানা, গায়ের পশম ঝরে যাওয়া, উকুনসহ নানারকম রোগ হয়। অনেক সময় মহিষ রোগাক্রান্ত ও মরা বাছুরও প্রসব করে। পাশাপাশি চরগুলোর মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া খালগুলোতে বাঁধ দিয়ে অবৈধভাবে বিষাক্ত কেমিক্যাল ব্যবহার করে মাছ শিকার করছে অসাধু জেলেরা। বিষ প্রয়োগের ফলে এসব পানি খেয়ে অনেক মহিষ মারাও যাচ্ছে। এই সমস্যাগুলোর সমাধান করলে মহিষ পালনকে কেন্দ্র করে বিপুল বাণিজ্যিক সম্ভাবনা রয়েছে।
উপজেলা ভেটেনারি সার্জন রহমত উল্লাহ বলেন, চরফ্যাশনে গবাদিপশু পালনে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এর জন্য বেশি মাংস ও দুধ উৎপাদনে সক্ষম উন্নত মুরাহ ও নীলি জাতের মহিষ সংগ্রহ করে তা লালনপালন করতে হবে। এসব প্রজাতির মহিষ মাংস ও দুধ উৎপাদন খুবই ভালো। একটি মুরাহ মহিষ ২০-২২ লিটার পর্যন্ত দুধ দেয়। বর্তমানে উপজেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের মাধ্যমে মুরাহ ও নীলি জাতের মহিষের সিমেন দেয়া হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, উপজেলার প্রত্যেক এলাকাতেই চারণভূমি করা প্রয়োজন। চরাঞ্চলের পুকুরের পাড়গুলো উঁচু করা প্রয়োজন। যাতে নোনাপানি প্রবেশ করতে না পারে।
শেয়ার করুন
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।