সমাজকল্যাণমন্ত্রী : ভিক্ষুক নিয়ন্ত্রণে অভিযান চালাচ্ছে মোবাইল কোর্ট

আগের সংবাদ

বৈশ্বিক সংকটে চাপা প্রত্যাবাসন : রোহিঙ্গা শরণার্থী

পরের সংবাদ

ওটিটিতে সালমান শাহর রহস্যময় মৃত্যু

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

নব্বই দশকের জনপ্রিয় নায়ক। একটি অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা থমকে দেয় সারা দেশের চলচ্চিত্রপ্রেমীদের। তার মৃত্যু হত্যা নাকি আত্মহত্যা, সে রহস্য এখনো অমীমাংসিত। আমি ডিবি অফিসার গোলাম মামুন আসছি সেই রহস্য নিয়ে। এই নায়ক কে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না; তিনি সালমান শাহ, ৪ বছরে মাত্র ২৭টি সিনেমা করে যিনি অক্ষয় হয়ে আছেন বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে। মাত্র ২৪ বছর বয়সে অস্বাভাবিক এক মৃত্যুতে থেমে যায় যার পথচলা; তবে সেটা কি হত্যা নাকি আত্মহত্যা, সেই জট খোলেনি ২৭ বছরেও। দৃশ্যত সেই রহস্যের ওপর আলোকপাত করতেই ওটিটি প্ল্যাটফর্ম হইচই আনছে ওয়েব সিরিজ ‘বুকের মধ্যে আগুন’। কার মৃত্যুরহস্য এই সিরিজের উপজীব্য, তার নাম তারা নেয়নি, তবে ঘটনাক্রমেই তা স্পষ্ট করে দেয়, আর ওয়েব সিরিজের নামটিও সালমান শাহর শেষ সিনেমার নাম থেকে নেওয়া। বুধবার ‘হইচই মিট’ আয়োজন করে বছরব্যাপী বিশেষ আয়োজনের কথা জানায় হইচই বাংলাদেশ। সেই আয়োজনেই ঘোষণা দেয়া হয় ‘বুকের মধ্যে আগুন’র। সেই সঙ্গে অপূর্বের বয়ানে দেখানো হয় সিরিজের এক ঝলক, যেখানে বলা হয় রহস্যময় সেই মৃত্যুর কথা। হইচই বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর সাকিব আর খান জানান, ‘বুকের মধ্যে আগুন’ নির্মাণ করছেন ন’ডরাই-খ্যাত নির্মাতা তানিম রহমান অংশু। আলফা-আইয়ের প্রযোজনায় নির্মিত সিরিজটি আগামী ফেব্রুয়ারিতে হইচই বাংলাদেশে মুক্তি পাবে। সিরিজের কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করছেন জিয়াউল ফারুক অপূর্ব। তাকে দেখা যাবে গোয়েন্দা কর্মকর্তার চরিত্রে। এ জন্য তিনি নিজেকে সময় দিয়ে নতুনভাবে প্রস্তুত করেছেন। পারিবারিক কারণে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করায় হইচই মিটে উপস্থিত হতে পারেননি অপূর্ব। তবে এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘বুকের মধ্যে আগুন নিয়ে দূরে থাকতে হচ্ছে। খুব ভালো একটা কাজ হয়েছে। আপনারা দেখবেন আশা করি।’ ওয়েব সিরিজ সংশ্লিষ্টরা জানান, চিত্রনায়ক সালমান শাহর চরিত্রে অভিনয় করছেন বড় পর্দার নায়ক জিয়াউল রোশান। এছাড়া এ সিরিজে তৌকীর আহমেদ, তমা মির্জাসহ এক ঝাঁক শিল্পীকে দেখা যাবে। নির্মাতা তানিম রহমান অংশু বলেন, ‘গত বছরের জানুয়ারি থেকে এই প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছি। গত ডিসেম্বরে শুটিং শেষ হয়েছে। সদরঘাট, এফডিসিসহ ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় এর শুটিং হয়েছে।’ অপূর্বকে নতুনভাবে দেখা যাবে এই সিরিজে।
এছাড়া এক ঝাঁক তারকাকে দেখা যাবে এই সিরিজে। সিরিজটি প্রযোজনা করেছেন শাহরিয়ার শাকিল। ঢাকাই সিনেমার তুমুল জনপ্রিয় নায়ক সালমান শাহ ১৯৯৩ সালে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ চলচ্চিত্র দিয়ে রুপালি পর্দায় পা রাখেন। মৃত্যুর আগে মাত্র তিন বছরে ২৭টি ছবিতে অভিনয় করেন। যার বেশিরভাগই তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা অবস্থায় ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ইস্কাটনে নিজের ফ্ল্যাটে রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয় এই নায়কের। তিন দফা তদন্তের পর এ চিত্রনায়কের মৃত্যুকে ‘আত্মহত্যা’ বলা হলেও তা মানতে রাজি নয় তার পরিবার। তার মায়ের দাবি এটি ‘হত্যাকাণ্ড’। সালমানের অনেক ভক্ত তেমনই বিশ্বাস করেন। সালমান শাহর মৃত্যুর ‘আসল রহস্য’ উদঘাটনের দাবি জানিয়ে আসছেন তারা। তবে সর্বশেষ তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই তাদের তদন্ত প্রতিবেদনে বলেছে, চিত্রনায়িকা শাবনূরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে পারিবারিক কলহ আর স্ত্রী সামিরা হকের কারণে নীলা চৌধুরীকে ছেড়ে থাকার মানসিক যন্ত্রণায় ভুগেই অভিমানী সালমান শাহ আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন। ছেলের মৃত্যুর পর প্রথমে একটি অপমৃত্যু মামলা করেন সালমান শাহর বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী। কিন্তু পরে ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে- এমন অভিযোগে ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই অভিযোগটিকে হত্যা মামলায় রূপান্তর করার আবেদন জানান তিনি। তখন অপমৃত্যু মামলার সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করতে সিআইডিকে নির্দেশ দেন আদালত। ১৯৯৭ সালের ৩ নভেম্বর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে সিআইডি জানায়, সালমান শাহ ‘আত্মহত্যা’ করেন। সিআইডির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে কমরউদ্দিন চৌধুরী রিভিশন মামলা দায়ের করেন। পরে ২০০৩ সালের ১৯ মে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠান আদালত। দীর্ঘ ১১ বছর পর ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট সেই প্রতিবেদন দাখিল করেন মহানগর হাকিম ইমদাদুল হক। তাতেও হত্যার অভিযোগ নাকচ করা হয়। সালমান শাহের বাবার মৃত্যুর পর তার মা নীলা চৌধুরী মামলটি চালিয়ে যান। ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি নীলা চৌধুরী বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনে ‘নারাজি’ দেন। তিনি ১১ জনের নাম উল্লেখ করে দাবি করেন, এরা তার ছেলেকে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। মামলাটি এরপর তদন্ত করে র‌্যাব। তখন রাষ্ট্রপক্ষ আপত্তি তুললে ২০১৬ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বিশেষ জজ র‌্যাবকে মামলাটি আর তদন্ত না করার আদেশ দেন। তখন তদন্তের দায়িত্বে আসে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন। চার বছর তদন্তের পর ২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি তারা চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেন। সেখানেও বলা হয়, ঘটনার সময় উপস্থিত ও ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ৫৪ জন সাক্ষীর জবানবন্দি বিশ্লেষণ করে, জব্দ করা আলামত পর্যালোচনা করে হত্যার অভিযোগের কোনো প্রমাণ মেলেনি। ওই প্রতিবেদনেও সন্তুষ্ট নন সালমানের মা নীলা চৌধুরী। ছেলের মৃত্যু কীভাবে হয়েছিল, তা জানতে তিনি আরো তদন্ত চান।

:: মেলা প্রতিবেদক

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়