কাগজ প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে বিগত ১৪ বছরে সারাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন হয়েছে। রাষ্ট্রপতি তার ভাষণে দেশের উন্নয়ন অগ্রগতির একটি প্রামাণ্য দলিল জাতির সামনে উপস্থাপন করেছেন। গতকাল বুধবার সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণ সম্পর্কে আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা একথা বলেন। এ সময় অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমীন চৌধুরী।
সরকারি দলের এমপিরা বলেন, করোনা মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি পর্যুদস্থ হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শিতা ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের কারণে দেশের অর্থনীতি ঠিক আছে, মুদ্রাস্ফিতিও নিয়ন্ত্রণে।
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী তার নৌপরিবহন সেক্টরের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ৯৫টি বিদেশগামী জাহাজ চলাচল করছে, কিছুদিনের মধ্যে ১০০টি জাহাজ চলাচল করবে। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন ১০ হাজার নৌপথ খনন করা হবে, ইতোমধ্যে ৬ হাজার ৫০০ কিলোমিটার খনন করা শেষ। দেশে ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে, কিন্তু দেশে অনেকে এ উন্নয়ন চোখে দেখেন না, বলেন উন্নয়ন হচ্ছে কই? তারা দেশ সংস্কারের কথাও বলেন। আমরা এগুলো খুনি জিয়ার দলের কাছ থেকে শুনছি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা খুনি জিয়ার দুঃশাসন দেখেছি। তারই ধারাবাহিকতায় এরশাদ, খালেদা জিয়াও দুঃশাসন অব্যাহত রেখেছিল। এদেশের উন্নয়ন ব্যাহত করার জন্য ষড়যন্ত্র হচ্ছে। কিন্তু সরকারের স্থিতিশিলতা আছে বলেই এত ষড়যন্ত্রের মধ্যে আমরা উন্নয়ন করতে পারছি।
এমপি আবুল কালাম মো. আহসানুল হক বলেন, দেশের মানুষকে ভাবতে হবে উন্নয়নের মহাসড়ক মানে শেখ হাসিনা, যার ফলশ্রæতি পদ্মা সেতু, মেট্রো রেলসহ শত শত উন্নয়ন প্রকল্প। আর মির্জা ফখরুলদের দেখানো পথ মানে গুম খুনের পথ, এতিমের টাকা আত্মসাতের পথ হাওয়া ভবন বানিয়ে কমিশনের পথ। মানুষ তাই আর মির্জা ফখরুলদের পথে হাঁটবে না। তারা শেখ হাসিনার উন্নয়নের পথে আছে।
এমপি অপরাজিতা হক বলেন, শেখ হাসিনার দূরদর্শী সিদ্ধান্তের কারণে আমরা কোভিড মোকাবিলা করেছি। আর বর্তমানে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্বব্যাপী যে মুদ্রাস্ফীতির ঢেউ তাও প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শিতায় তিনি নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন। তবে মির্জা ফখরুলরা তা চোখে দেখেন না। তিনি পাকিস্তানে ভালো ছিলেন, তাকে বিমানে করে পাকিস্তান পাঠিয়ে দেয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
জাতীয় পার্টির এমপি সালমা ইসলাম শেখ হাসিনার দূরদর্শিতার প্রশংসা করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আছেন বলে দেশে আজ উন্নয়ন হচ্ছে। কিন্তু বিএনপি-জামাত তা চোখে দেখে না। তারা উল্টো পথে হাঁটেন।
বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা নির্বাচনকে সামনে রেখে কিছু দূতাবাসের কর্মকর্তা আর প্রতিনিধিরা দেশে ‘ছুটাছুটি শুরু’ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, কোনো দেশের আদেশ মেনে বাংলাদেশের নির্বাচন হতে পারে না। আগামী বছরের শুরুতেই আমাদের জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। নির্বাচনকে সামনে রেখে কিছু দূতাবাসের কর্মকর্তা আর তথাকথিত কয়েকটি ‘মোড়ল’ দেশের প্রতিনিধিরা আমাদের দেশে ছুটাছুটি করা শুরু করে দিয়েছেন। তারা আমাদের গণতন্ত্র, মানবাধিকার, ভোটাধিকার শিখানোর বুলি ছুড়ছেন। কোনো দেশের পরামর্শ বা আদেশ মেনে বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যাবস্থা পরিচালিত হতে পারে না। আমরা চাই, সাংবিধানিক পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে। আর সে নির্বাচনে সব দল অংশ নিক। জনগণ যে দলকে ভোট দেবে সে দল রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাবে।
তিনি বলেন, আবারো বিদ্যুতের দাম বাড়ার কারণে অসাধু ব্যাবসায়ীরা পণ্যের দাম আরেক দফা বাড়াবে। এতে কোনো সন্দেহ নেই। বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে সরকারের উচিত ছিল বিদ্যুৎ খাতের দুর্নীতি, সিস্টেম লস, অনিয়ম বন্ধ করা। কিন্তু তা না করে বরাবরের মতো সরকার আবারো উল্টো পথে হাঁটল। বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ফলে জনগণের কষ্ট আরো বেড়ে গেল। এমনিতেই নানা অজুহাতে পণ্যমূল্যের দাম প্রতিনিয়ত বাড়ছে। বিদ্যুতের দাম বাড়ার কারণে উৎপাদন খরচসহ সর্বত্র এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
আবু হোসেন বাবলা আরো বলেন, দুর্ভাগ্যজনক হলেও এখনো জাতি হিসেবে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে আমরা এক হতে পারি না। সরকারি দল বলে বেড়ায় দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, আর কথিপয় বিরোধী পক্ষ চিৎকার করে বলে, দেশে গণতন্ত্রের বদলে স্বৈরতন্ত্র চলছে। সরকারি দল বলে, দেশের উন্নয়নের জোয়ার বইয়ে চলেছে, আর কথিপয় বিরোধী পক্ষ বলে, উন্নয়নের নামে দেশে হরিলুট চলছে। যারা সরকারে থাকে তাদের চোখে বিরোধী দলের সব কর্মসূচি হয় ধ্বংসাত্মক। আর বিরোধী দলের চোখে সরকারি দলের সব কর্মকাণ্ড হয় জনস্বার্থ বিরোধী।
রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আরো বক্তব্য রাখেন এমপি এনামুল হক, মো. আব্দুল মজিদ খান, এ কে এম ফজলুল হক, কানিজ ফাতেমা আহমেদ, মোজাফফর হোসেন, নাদিরা ইয়াসমিন জলি প্রমুখ।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।