আরো এক মামলায় রফিকুল মাদানীর বিচার শুরু

আগের সংবাদ

নাশকতার শঙ্কায় সতর্ক আ.লীগ : ষড়যন্ত্র ঠেকাতে নেতাকর্মীদের মাঠে থাকার নির্দেশ ক্ষমতাসীন দলের, ‘পাল্টা কর্মসূচি’তে অস্বস্তি বিএনপির

পরের সংবাদ

মেহেরপুরের বাঁধাকপি রপ্তানিতে আসছে বৈদেশিক মুদ্রা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মর্তুজা ফারুক রুপক, মেহেরপুর থেকে : এবারো দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশের মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে মেহেরপুরের বাঁধাকপি। সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়াতে বেশ চাহিদা রয়েছে বাঁধাকপির। চাহিদার কথা মাথায় রেখে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান এগ্রো ফ্রেশ কোম্পানির মাধ্যমে এসব বাঁধাকপি রপ্তানি হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি দুই বছর ধরে মেহেরপুর থেকে বাঁধাকপি নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে জলপথে নিয়ে যাচ্ছে বিদেশে।
কৃষিনির্ভর জেলা হিসেবে মেহেরপুরের সবজি উৎপাদনে সুনাম রয়েছে। দেশের চাহিদার ১৫ শতাংশ মেটায় এই জেলার সবজি। একসময় সবজি চাষিরা ভরা মৌসুমে ন্যায্যমূল্য না পেয়ে হতাশ হতেন। কখনো সখনো চাষের খরচও তুলতে পারতেন না। কষ্টের সবজি গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে বিক্রি করতে হতো। এখন মেহেরপুরের বাঁধাকপি যাচ্ছে দেশের বাইরে।
প্রতিটি বাঁধাকপি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান কিনছে ১৪-১৬ টাকায়। বিভিন্ন দেশের বাজারে প্রতিটি কপি বিক্রি হচ্ছে ৬০-১০০ টাকায়। জেলার উৎপাদিত সবজির মধ্যে বাঁধাকপি তাইওয়ান, সিঙ্গাপুরে, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়াতে রপ্তানি হচ্ছে। সেখান থকে আরো ৮-১০টি দেশে বাঁধাকপি যাচ্ছে বলে জানান রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান। এ ব্যাপারে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় প্রতিনিধি সাইদুর রহমান ভোরের কাগজকে জানান, প্রাথমিক পর্যায়ে আমরা সিঙ্গাপুর ও তাইওয়ানে পাঠিয়েছি। নতুন করে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়াতেও পাঠানো শুরু হয়েছে। সেখান থেকে এশিয়ার আরো কিছু দেশে পাঠানোর পরিকল্পনা আছে। তবে চাহিদার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ১৫শ টন বাঁধাকপি রপ্তানি করার পরিকল্পনা আছে। এটা বাড়তেও পারে।
মেহেরপুরের বিভিন্ন গ্রামে কীটনাশকমুক্ত বাঁধাকপি রপ্তানি পণ্যের তালিকায় যুক্ত হওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের নতুন সম্ভাবনাময় খাত তৈরি হয়েছে। অল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় বিদেশে রপ্তানিযোগ্য বাঁধাকপি চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের।
মেহেরপুরের রাজনগর, যুগিন্দা, বন্দর, মোনাখালী, সোনাপুর, কাথুলিসহ বিভিন্ন গ্রামে এই কপির আবাদ হচ্ছে। সবজি উৎপাদনে আগ্রহী হচ্ছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। প্রতিদিন মেহেরপুর থেকে বিশেষ প্যাকেট করে ট্রাকে করে নেয়া হচ্ছে চট্টগ্রামে। পরে চট্টগ্রাম থেকে সমুদ্র পথে সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়াতে রপ্তানি হচ্ছে। দেশের বাজারে এক ট্রাক বাঁধাকপি বেচে চাষি পেত ৪০-৪৫ হাজার টাকা। কিন্তু বর্তমানে দেশের বাইরে বিক্রি করে চাষি পাচ্ছে ৭০-৮০ হাজার টাকা। কোনো কোনো জমিতে এই অঙ্কটা আরো বেশি।
সদর উপজেলার বন্দর গ্রামের চাষি বাবর আলী বলেন, আমার দেড় বিঘা জমিতে বাঁধাকপির চাষ করেছি। জমি থেকেই এক ব্যবসায়ী কিনে নিয়েছেন। তারা সাদা প্যাকেটে মুড়িয়ে বস্তাবন্দি করে ট্রাকে নিয়ে যান চট্টগ্রাম বন্দরে। আমি দেড় বিঘা জমির বাঁধাকপি বিক্রি দিয়েছি ৯০ হাজার টাকায়। আমার খরচ হয়েছিল ৩০ হাজার টাকা।
মোনাখালী গ্রামের ব্যবসায়ী আব্দুল খালেক বলেন, আমার নিজের লরি আছে। কৃষকের কাছে থেকে কিনে আমিন ট্রেডার্স নামের দিনাজপুরের একটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে দিই। আবার অনেক সময় রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের কর্মীরাও এসে সরাসরি কৃষকের কাছে থেকে কিনে লরি ভরে নিয়ে যায়। প্রতি লরি ৭০-৭৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। দেশের বাইরে এগুলো যাচ্ছে তাই চাষিরা এমন দাম পাচ্ছে। তা না হলে ৪০-৪৫ হাজার টাকা দাম হতো।
জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ১২শ হেক্টর জমিতে বাঁধাকপি চাষ করেছেন কৃষকরা। সাধারণত শীতের মধ্যেই বাঁধাকপি চাষ ও হারভেস্টিং শেষ হয়ে যায়। চলতি মৌসুমে ৪টি দেশ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানকে ১ হাজার ৫০০ টন বাঁধাকপির নেয়ার চাহিদা দিয়েছে। রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের কোয়ালিটি কন্ট্রোল শাখা থেকে জানা গেছে- চারা রোপণের পর থেকে কপি সংগ্রহ করা পর্যন্ত নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে রপ্তানি উপযোগী করে তোলা হয়।
এ ব্যাপারে সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাসরিন পারভিন জানান, বিঘা প্রতি ৬০-৭০ হাজার টাকায় বাঁধাকপি কৃষক বিক্রি করছে আমদানিকারকদের কাছে। তারাই জমি থেকে নিয়ে যাচ্ছে। কৃষকের আর কোনো খরচ নেই। দাম পেয়ে কৃষক খুশি। এটা না হলে জমিতে পড়ে থাকত। আবাদ খরচই আসত না।
মেহেরপুর কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শঙ্কর কুমার মজুমদার ভোরের কাগজকে বলেন, আমাদের নিরাপদ সবজির বাজার তৈরি করতে পারলে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। এ বছর সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়াতে নিরাপদ সবজি হিসেবে বাঁধাকপি বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হচ্ছে। অন্যান্য দেশেও বাড়ছে নিরাপদ এই সবজির চাহিদা। কোনোভাবেই যেন এ সুযোগ হাতছাড়া না হয় সে বিষয়ে সবাইকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। এ ব্যাপারে আমরা সার্বিক সহযোগিতা করব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়