নিউমার্কেটে সংঘর্ষ : তিন মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল পেছাল

আগের সংবাদ

নামমাত্র প্রস্তুতিতে পাঠদান : বই পায়নি অনেক শিক্ষার্থী > বই, সহায়িকা ছাড়াই শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ > নোট-গাইড ছাপার তোড়জোড়

পরের সংবাদ

২০০ মিটার দীর্ঘ ও ১০ মিটার ড্রাফটের বড় জাহাজের বার্থিং : স্মরণীয় যুগে প্রবেশ করল চট্টগ্রাম বন্দর

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অফিস : দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরের মূল জেটিতে সফলভাবে ২০০ মিটার দীর্ঘ ও ১০ মিটার ড্রাফটের বড় জাহাজ ‘কমন অ্যাটলাস’ ভিড়তে সক্ষম হয়েছে। ১৩৫ বছর পর বড় জাহাজ ভেড়ানোর সক্ষমতা অর্জন করেছে চট্টগ্রাম বন্দর। মার্শাল আইল্যান্ডের পতাকাবাহী জাহাজটি চট্টগ্রাম কন্টেইনার টার্মিনালে (সিসিটি) ভিড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে দিয়ে ‘চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য স্মরণীয় এক যুগ’ শুরু হলো বলে মন্তব্য করেছেন বন্দর সংশ্লিষ্টরা।
বন্দরের জেটিতে বড় জাহাজ ভিড়ানোর ফলে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারকারীরা কম খরচে পণ্য পরিবহনের সুযোগ পাবেন। পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। দেশের ভাবমূর্তি বাড়বে মেরিটাইম ওয়ার্ল্ডে। গতকাল সোমবার দুপুরে বেলুন উড়িয়ে বড় জাহাজ বার্থিং কার্যক্রম উদ্বোধন করেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
এর আগে তিনি চট্টগ্রাম বন্দরের ভাণ্ডার ভবন এলাকায় নবনির্মিত ভবন ‘চট্টগ্রাম বন্দর কেন্দ্রীয় ভাণ্ডার’ উদ্বোধন করেন। ৭১ কাঠা জমির ওপর নির্মিত ভাণ্ডারের মোট প্রজেক্ট এরিয়া ৫১,০০০ বর্গফুট।
বড় জাহাজ বার্থিং কার্যক্রম উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর দেশের অর্থনীতির হৃৎপিণ্ড। এটি স্লোগান নয়, বাস্তবতা। চট্টগ্রাম বন্দর যখন থেমে যায় তখন বাংলাদেশ থেমে যায়। গত ১৪ বছরে চট্টগ্রাম বন্দর একদিনের জন্য বন্ধ হয়নি। বন্ধ হয়নি বলে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। পদ্মা সেতু নির্মাণ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মেট্রোরেল নির্মাণের সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের ভূমিকা রয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৫তম। ২০০৮ সালে ছিল ৬০তম স্থানে। ১৪ বছরে ৩৫তম স্থানে উন্নয়নে অধিকাংশ কৃতিত্বের অধিকারী চট্টগ্রাম বন্দর। গত ১৪ বছরে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা অনেক বেড়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনালের ৯৭ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটি চালু করা হবে। ২০২৪ সালে বে-টার্মিনাল চালু করার কথা থাকলেও করোনা মহামারি এবং বৈশ্বিক দুর্যোগ ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ পরিস্থিতিতে বহুবিধ সমস্যায় আছি। বে-টার্মিনালের বৃহৎ অংশ মাল্টিপারপাস টার্মিনাল করবে চট্টগ্রাম বন্দর। এর ডিটেইল প্ল্যান তৈরি হচ্ছে। ২০২৫ সালের শেষে বা ২০২৬ সালের শুরুতে সেটি চালু করতে সক্ষম হব। মাতারবাড়ী বন্দর ২০২৬ সালের মাঝামাঝি অথবা শেষের দিকে চালু করতে পারব।
তিনি বলেন, দেশরতœ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এদেশের মাটি ও মানুষকে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণ করেছি। বাংলাদেশ শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, আঞ্চলিক দেশগুলোর জন্য তৈরি হচ্ছে। বৈদেশিক বিনিয়োগ অপেক্ষা করছে। সমগ্র পৃথিবীর বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে আসবে। এজন্য দরকার স্থিতিশীলতা। গত ১৪ বছরে স্থিতিশীলতা আছে বলেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। অনেকেই স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে চায়। সেটি সম্ভব নয়। শেখ হাসিনা যে উন্নয়ন করেছেন; দেশের মানুষকে যে সম্মান দিয়েছেন; সেখানে দেশের মানুষ শেখ হাসিনার বিকল্প অন্য কিছু ভাবছে না। আগামী নির্বাচনে আরো বেশি সমর্থন নিয়ে শেখ হাসিনা সরকার গঠন করবে। কোনো বিদেশি চাপে পিছিয়ে যাবে না। দেশের মানুষকে নিয়ে এগিয়ে যাবে।
চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তফা কামাল, চট্টগ্রাম চেম্বারের প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম, বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. আরিফ হোসেন, বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং কর্ণফুলী রিভার স্টাডি কনসালটেন্ট এইচ আর ওয়ালিংফোর্ড এর বাংলাদেশের পার্টনার ইন্টারপোর্টের পরিচালক ড. মঞ্জুরুল হক।
বক্তারা বলেন, ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যরে বড় জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়লে জাহাজে কন্টেইনারের পরিমাণ বাড়বে ও পণ্য পরিবহন খরচ কমবে। ভোক্তা পর্যায়ে পণ্যের দাম কমে সুফল পাবে সাধারণ মানুষ। ২০২২ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে ৬ হাজার ৬৫০টি জাহাজ ভিড়েছে। গেস্ট অব অনার ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন বলেন, এটি চট্টগ্রাম বন্দর ও বাংলাদেশের জন্য ঐতিহাসিক দিন। ২০০ মিটার লম্বা বড় জাহাজ ভিড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে। এর ফলে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানিতে আরো গতি আসবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তফা কামাল বলেন, করোনাকালে ৫৪ জন লোক মারা গেছে কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দর বন্ধ হয়নি। দেশের জন্য তারা প্রাণ দিয়েছেন। সরকারের শেষ বছর। তখন বিভিন্ন দাবি, উসকানি শুরু হয়। সাপ্লাই চেইন সবার জন্য। বে-টার্মিনাল করতে যাচ্ছি। আমরা একদিনের জন্যও কাজ থামাইনি। ২০৪১ সালের বাংলাদেশ হবে স্মার্ট। পোর্টও হবে স্মার্ট। এর জন্য স্মার্ট টিম চাই। মাতারবাড়ী, বে-টার্মিনাল, চট্টগ্রাম বন্দর একসঙ্গে অপারেশন করলে জাতীয় আয় বাড়বে।
সভাপতির বক্তব্যে বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, আজ বন্দরের জন্য ঐতিহাসিক মুহূর্ত। ২০০ মিটার লম্বা ও ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ‘কমন অ্যাটলাস’ ভিড়েছে। বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধু বন্দরকে মাইনমুক্ত করে চালু করেছিলেন। জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী সমুদ্রসীমা জয় করেছেন। বে-টার্মিনাল জাতির চাহিদা। ডিপিপি প্রণয়নের কাজ চলছে। করোনার মধ্যেও প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি।
চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, কর্ণফুলী নদী বন্দরের প্রাণ। এ বন্দর সচল রাখতে কর্ণফুলী ড্রেজিং চালু রাখতে হবে। মামলাও থাকবে-হামলাও থাকবে, ড্রেজিং বন্ধ করা যাবে না। বে-টার্মিনাল হলে বাংলাদেশকে ৫০ বছর বন্দর নিয়ে ভাবতে হবে না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়