নিউমার্কেটে সংঘর্ষ : তিন মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল পেছাল

আগের সংবাদ

নামমাত্র প্রস্তুতিতে পাঠদান : বই পায়নি অনেক শিক্ষার্থী > বই, সহায়িকা ছাড়াই শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ > নোট-গাইড ছাপার তোড়জোড়

পরের সংবাদ

সোনারগাঁওয়ে সওজ’র জায়গা দখলের চেষ্টা : আবাসিক এলাকায় স্টিল মিল ধোঁয়া ও বর্জ্যে পরিবেশ দূষণ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আবদুস ছাত্তার, সোনারগাঁও (নারায়ণগঞ্জ) থেকে : সড়ক ও জনপথের জায়গা জোরপূর্বক দখল করে কাঁটাতার ও টিনের বেড়া দিয়ে আটকে দিয়েছে সোনারগাঁওয়ের কাঁচপুর এলাকায় অবস্থিত রড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রহিম স্টিলস্ ইন্ডাস্ট্রিজ লি.। এতে ওই স্থানে অবস্থিত হক সিএনজি এন্ড ফিলিং স্টেশন এবং চলাচলের রাস্তা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। এভাবে হক সিএনজি এন্ড ফিলিং স্টেশনটি দখলের চেষ্টা করছে রহিম স্টিলস্ ইন্ডাষ্ট্রিজ লি.।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কাঁচপুর এলাকায় অবস্থিত রড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রহিম স্টিলস্ ইন্ডাষ্ট্রিজ লি. সম্প্রতি (৬ অক্টোবর ২০২১) হক সিএনজি স্টেশন নামের প্রতিষ্ঠানটির মালিকের মেয়ের জামাই একেএম আহসানুল হক তার নামে থাকা হক সিএনজি এন্ড ফিলিং স্টেশনটি ব্যবসায়ী মো. মোস্তফা কামালের কাছে বিক্রি করে দেন। গত ৬ অক্টোবর ২০২১ এ সংক্রান্ত চুক্তি সম্পাদন করা হয়। এর পর থেকে হক সিএনজি এন্ড ফিলিং স্টেশনের আগের মালিক একেএম আহসানুল হক ও রহিম স্টিলস কর্তৃপক্ষ হক সিএনজি এন্ড ফিলিং স্টেশনটি বুঝিয়ে না দিয়েই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে একে একে ফিলিং স্টেশনটি অকার্যকর করে ফেলে এবং এক পর্যায়ে ফিলিং স্টেশনের তিনদিকে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে আটকে দেয়।
এ নিয়ে হক সিএনজি এন্ড ফিলিং স্টেশনের বর্তমান মালিক মো. মোস্তফা কামাল ফিলিং স্টেশনটি বুঝিয়ে দিতে একেএম আহসানুল হক ও রহিম স্টিলস কর্তৃপক্ষকে বার বার তাগাদা দেয়া সত্ত্বেও তারা বুঝিয়ে না দিয়ে জোরপূর্বক দখলের চেষ্টা করে আসছে। একেএম আহসানুল হক কোর্টে মিথ্যা মামলা দায়ের করে ফিলিং স্টেশনটি দখল করার চেষ্টা করে। 
গত শনিবার বিকালে একেএম আহসানুল হক ও রহিম স্টিলস কর্তৃপক্ষ হক সিএনজি এন্ড ফিলিং স্টেশনের তিনদিকে ভারি উঁচু টিনের বেড়া দিয়ে জায়গাটি দখলে নেয়ার চেষ্টা করে। 
এ ব্যাপারে গতকাল সোমবার রহিম স্টিল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মহসিনের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, আমি এখন একটি মিটিংয়ে আছি। আপনার সঙ্গে আমাদের কোম্পানির ম্যানেজার পরে মোবাইলে কল করে কথা বলবে। এরপর তিনি সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন। তবে ৬ ঘণ্টা অতিবাহিত হওয়ার পরও কেউ যোগাযোগ করেননি। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত সোয়া ৮টা পর্যন্ত রহিম স্টিল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মহসিনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নাম্বারে কয়েক দফা কল করলেও তিনি কলটি রিসিভ করেননি।
তবে রহিম স্টিলস মিলের কর্মচারিরা বলেন, রহিম স্টিলস মিলের মালিক আব্দুর রহিম মারা যাওয়ার পর তার সন্তান ও মেয়ের জামাইয়ের মধ্যে বিরোধের কারণে মেয়ের জামাই একেএম আহসানুল হক ও রহিম স্টিলস কর্তৃপক্ষ ফিলিং স্টেশনটি জোরপূর্বক দখলের চেষ্টা করে আসছে।
অন্যদিকে মোস্তফা কামালের পক্ষে তার প্রধান ব্যবস্থাপক তোফাজ্জল হোসেন সেলিম বলেন, আমরা এই হক সিএনজি এন্ড ফিলিং স্টেশনটি কেনার পর তারা আমাদের নাম বদলীর কোনো কাগজপত্র সহযোগিতা না করেই প্রথমে কাঁটাতারের বেড়া এবং পরে টিন দিয়ে ঘেরাও করে বেড়া দখলে নেয়।
জানা গেছে, ফিলিং স্টেশনের জায়গাটি সড়ক ও জনপথ কর্তৃপক্ষের। এটি লিজ নিয়ে ফিলিং স্টেশন গড়ে তোলা হয়েছে। সড়ক ও জনপথ কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা সাহানা ফেরদৌস বলেন,সড়ক ও জনপথের জায়গা উন্মুক্তভাবে ব্যবহার করতে হয়। যদি কেউ কোনো ধরনের বেড়া বা দেয়াল নির্মাণ বা কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে জায়গাটি আটকে দেয়ার চেষ্টা করে তাহলে তা ভেঙে দেয়া হবে। আমরা খোঁজ নিচ্ছি। অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। রহিম স্টিলসের মেয়ের জামাই একেএম আহসানুল হক ও রহিম স্টিলস কর্তৃপক্ষের মাস্তান ও সন্ত্রাসীদের দখল চেষ্টার কারণে ফিলিং স্টেশনটি গত কয়েক মাস ধরে লাখ লাখ টাকা লোকসান দিয়ে আসছে।
দেশের অন্যতম পরিবেশ দূষণকারী একটি প্রতিষ্ঠান হলো রহিম স্টিলস গ্রুপ। এটি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে কাঁচপুর নয়াবাড়ি এলাকায় অবস্থিত। এই রহিম গ্রুপের কয়েকটি মিল-কারখানার বিষাক্ত কালো ধোঁয়া ও দূষিত বর্জ্যে এলাকার পরিবেশ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে এলাকায় শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়ছে। সরজমিন কাঁচপুর নয়াবাড়ি এলাকায় গিয়ে এমনই দৃশ্য চোখে পড়ে।
সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, রহিম গ্রুপের রহিম স্টিলসহ বিভিন্ন মিলের বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় দীর্ঘদিন ধরে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। রহিম স্টিল মিলের কালো ধোঁয়া কয়েক কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। স্টিল মিল কর্তৃপক্ষ প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না এলাকাবাসীর। কাঁচপুর শিল্পাঞ্চল পুরোটাই রহিম স্টিলের ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন থাকে। 
বাংলাদেশের অর্থনীতির লাইফলাইন হিসেবে খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন ১৭টি জেলার হাজার হাজার গণপরিবহন, ট্্রাকসহ নানা ধরনের যানবাহন চলাচল করে থাকে। মাঝে মাঝে কালো ধোঁয়ায় এ মহাসড়কেও যান-চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এ ছাড়া মিলটি আবাসিক এলাকাতে হওয়ায় এখানে হাজারো মানুষের বসবাস। রহিম স্টিল মিল ইন্ডাষ্টিজ লিমিটেডের কালো ধোঁয়া ও তরল বর্জ্য যেখানে-সেখানে ছড়িয়ে পড়ায় এলাকার হাজার হাজার মানুষ শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে ভোগছে। অনেকেই এখান থেকে সরে গিয়ে অন্যত্র বাসা নিচ্ছে। দ্রুত এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ চান এলাকাবাসী।
সম্পূর্ণ আবাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এ স্টিল মিলটি হলেও প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর ভয়াবহ পরিবেশ দূষণের বিষয়টি অজ্ঞাত কারণে গুরুত্ব দিচ্ছে না। কোনো ব্যবস্থাও নিচ্ছে না। 
এলাকাবাসীর অভিযোগ, মহাসড়কের পাশে কালো ধোঁয়া ছড়ায় এবং বিষাক্ত তরল বর্জ্য যেখানে-সেখানে ফেলা হয়। হাফিজ নামে কাঁচপুর নয়াবাড়ি এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, কালো ধোঁয়ার কারণে দিন দিন আমাদের এলাকা বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে। রহিম স্টিল মিলকে কয়েকবার বিষয়টি জানালেও তারা বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছে না। উল্টো তারা তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে মিলটি নিয়ন্ত্রণ করায়। যাতে আমরা মিলটির বিরুদ্ধে কোনো আন্দোলন করতে না পারি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়