পদ্মা সেতু : মোটরসাইকেল চলাচল চেয়ে হাইকোর্টে রিট

আগের সংবাদ

আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ : বিশ্বকাপে অপ্রতিরোধ্য টাইগ্রেসরা

পরের সংবাদ

চৌগাছায় ঐতিহ্যবাহী খেজুর গুড়ের মেলা আজ ও কাল

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

যশোর প্রতিনিধি : জেলার চৌগাছায় খেজুর রসের ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে এক ব্যতিক্রমী ‘ঐহিত্যবাহী খেজুর গুড়ের মেলা’র আয়োজন করেছে চৌগাছা উপজেলা প্রশাসন। মেলায় খেজুরের গুড়, পাটালিসহ খেজুররস ও গুড় দিয়ে তৈরি নানা ধরনের পিঠা-পায়েসের স্টল দেয়া হবে। উপজেলার দুই শতাধিক গাছি মেলায় স্টল দেবেন বলে জানা গেছে।
১৬ ও ১৭ জানুয়ারি সোম ও মঙ্গলবার উপজেলা পরিষদ চত্বরের ঈদগাহ ময়দানে এই মেলা অনুষ্ঠিত হবে। যার ব্যাপ্তি থাকবে গোটা উপজেলা পরিষদ চত্বরে। সোমবার সকাল ৯টায় মেলার উদ্বোধন হবে। মঙ্গলবার মেলা উপলক্ষে উপজেলা পরিষদ বৈশাখী মঞ্চে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত সাংস্কৃতিক অন্ষ্ঠুান এবং গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী খেজুররস ও গুড় নিয়ে শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, রচনা ও কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। দুপুর ১২টায় উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণি অনুষ্ঠিত হবে। যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন। বিশেষ অতিথি থাকবেন চৌগাছা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ ড. মোস্তানিছুর রহমান। অনুষ্ঠানে শিশুদের প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ ছাড়াও মেলায় মানসম্মত খেজুর গুড় ও পাটালি প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে সার্টিফিকেট, ক্রেস্ট ও পুরস্কার এবং উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকায় সর্বোচ্চ খেজুর গাছ কাটা ৩ জন করে গাছিকে পুরস্কৃত করা হবে। এরইমধ্যে মেলার সব প্রস্ততি সম্পন্ন হয়েছে। উপজেলা পরিষদ চত্বরকে পরিপাটি করে সাজানো হয়েছে। সমগ্র উপজেলাব্যাপী ব্যাপক প্রচার প্রচারণা করা হয়েছে। সুদৃশ্য দাওয়াতপত্র দিয়ে সমাজের বিভিন্ন স্তরের নেতাদের দাওয়াত দেয়া হয়েছে।
মেলা উপলক্ষে উপজেলার গাছি ছাড়াও দর্শনার্থী ও ক্রেতাদের মধ্যেও এক প্রকার উৎসবের আমেজ দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, শত শত বছর ধরে এ অঞ্চলে বিপুল পরিমাণ খেজুর গুড় উৎপাদন হলেও এ পর্যন্ত এমন কোনো মেলার আয়োজন করা হয়নি। তাদের দাবি বর্তমান চৌগাছার সৃজনশীল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা এখানে যোগদানের পর থেকে নানা ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণ করে সাধারণ মানুষকে কাছে টেনে নেন। তার সেই উদ্যোগের সঙ্গে নতুন একটি সোপান ‘ঐতিহ্যবাহী খেজুর গুড়ের মেলা’।
এমন ব্যতিক্রমী আইডিয়ার বিষয়ে নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা বলেন, আমি চৌগাছায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করার পর জানতে পারি এই উপজেলার খেজুর রসের ঐহিত্য বিলুপ্তির পথে। খেজুর গাছও কমে গেছে, গাছির সংখ্যাও কমে গেছে। তখন আমার মনে হয় এই ঐতিহ্যকে যদি জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে ছড়িয়ে দেয়া যায় তাহলে খেজুররস ও গুড় অর্থনৈতিক সম্পদ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। তিনি আরো বলেন, চলতি মৌসুমের শুরুতেই আমরা গাছিদের সঙ্গে মতবিনিময় করি। তাতে এত বিপুল সংখ্যক গাছি যোগদান করেন যে, আমরা বিস্মিত হয়ে পড়ি। সেখান থেকে গাছিদের উৎসাহ প্রদান করতে এবং এই ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতেই এই মেলা। তিনি বলেন আশা করছি এই মেলার আয়োজন যশোরের ঐতিহ্য খেজুর রস ও গুড়কে আরো এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে।
চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোছা. লুৎফুন্নাহার বলেন, খেজুর গুড় একটি পুষ্টিকর খাবার। চিনিতে যে ক্ষতিকর উপাদান থাকে সেটা গুড়ে থাকে না। ফলে গুড় খাওয়া অনেকটাই নিরাপদ। উপজেলা প্রশাসন এ গুড়ের ঐহিত্য রক্ষায় যে মেলার উদ্যোগ নিয়েছেন তাকে আমি একটি অত্যন্ত মূল্যবান প্রচেষ্টা বলে মনে করছি।
খেজুর গুড়ের মেলা বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সমরেন বিশ্বাস বলেন, খেজুর গুড় আমাদের দেশের একটি অর্থকরী পণ্য। তবে খেজুর গাছ ও গাছি কমে যাওয়ায় বর্তমানে এর উৎপাদন নিম্নমুখী। সেক্ষেত্রে এই মেলা আমার মনে হয় একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে। চৌগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তানিছুর রহমান বলেন গুড়ের মেলার আয়োজন আমার কাছে খুব চমকপ্রদ উদ্যোগ বলে মনে হয়েছে। আমরা ছোটবেলায় এ অঞ্চলে রস গুড়ের যে বিপুল উৎপাদন দেখেছি এখন তা প্রায় হারাতে বসেছে। তাই এ ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দরকার। বর্তমান সরকার এসব বিষয়ে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এই মেলাও সেই উদ্যোগের অংশ।
মেলার বিষয়ে খুবই উৎসাহী উপজেলার কাবিলপুর গ্রামের গাছি মো. সেলিম। মেলায় স্টল দেবেন জানিয়ে সেলিম বলেন, আমি এখনো ১৬০টি খেজুর গাছ কাটি। মেলায় আমি খেজুর গুড় ও পাটালি নিয়ে যাব। মেলার জন্য বাদাম পাটালি, তিল পাটালি ও নারকেল পাটালি তৈরি করেছি। তিনি বলেন, মেলায় আমি খেজুররস জ¦ালিয়ে গুড় তৈরি করেও বিক্রি করব বলে প্রস্তুতি নিয়েছি।

মেলায় রস থেকে গুড় উৎপাদনের প্রস্তুতি নিয়েছে উপজেলা স্কাউটস গ্রুপও। স্কাউটের অন্যতম সদস্য এইচএম ফিরোজ বলেন, মেলায় আমরা রস থেকে গুড় উৎপাদন করে বিক্রি ছাড়াও রস ও গুড়ের নানা পিঠা তৈরি করে বিক্রির স্টল দেয়ার সব প্রস্তুতি নিয়েছি।
সোনালী ব্যাংক লিমিটেড চৌগাছা শাখার ব্যবস্থাপক ফারুক আযম বলেন, গুড় একটি অর্থকারী ফসল। এটাকে টিকিয়ে রাখতে আমাদের দায়িত্ব রয়েছে। রস ও গুড়ের এই ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে আমরা স্বল্পমেয়াদি ঋণের ব্যবস্থাও করতে পারি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়