মির্জা ফখরুল : বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গণবিরোধী

আগের সংবাদ

সতর্ক-সংকুলানমুখী মুদ্রানীতি : আমানত সুদের ঊর্ধ্বসীমা প্রত্যাহার > নীতি সুদহার বাড়ল > রেপো সুদহার বেড়েছে ২৫ বেসিস পয়েন্ট

পরের সংবাদ

হামলা খুন চাঁদাবাজির অভিযোগ : রূপগঞ্জে আকবর বাহিনীর কাছে জিম্মি ৫০ হাজার মানুষ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি : নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার তারাব এলাকার আতঙ্কের নাম আকবর বাহিনী। এই বাহিনীর বিরুদ্ধে পুলিশের ওপর হামলা, চাঁদাবাজি, হত্যা, জমিদখলসহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। তারাবসহ আশপাশের এলাকায় প্রায় ৫০ হাজার মানুষ এই বাহিনীর কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। প্রতিবাদ করলেই মামলা হামলা দিয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করছে। তাদের হাত থেকে প্রতিবন্ধীরাও রক্ষা পায়নি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার তারাব দক্ষিণপাড়া এলাকার বারেক ভূঁইয়ার ছেলে আকবর বাদশা। ২০১২ সালের মে মাসে ফয়সাল আহমেদ নামে এক যুবককে হত্যার পর আকবর বাদশার উত্থান শুরু হয়। এরপর আকবর বাদশা এলাকায় তৈরি করে আকবর বাহিনী নামে এক বাহিনী। এরপর থেকেই চাঁদাবাজি, হত্যা, ছিনতাই, জমি দখলসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ে আকবর বাহিনী। বর্তমানে স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার ছত্রছায়া ও সেল্টারে এ বাহিনী বেশ বেপরোয়া। আকবরের সেল্টারে থেকে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন রোবেল ও তার স্ত্রী রোকসানা। বর্তমানে রোবেল মাদক ও অস্ত্র মামলায় জেলহাজতে রয়েছেন। আর এসব মাদক সেবন করে দিন দিন যুবসমাজ ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। এছাড়া আকবর বাহিনী সদস্যের বিরুদ্ধে যেসব মামলা রয়েছে ওই সব মামলার বাদী ও সাক্ষীদের প্রাণনাশের হুমকি দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। আকবর বাহিনীর রিুদ্ধে অভিযোগ, তারাব এলাকার শবনম অয়েল ফ্যাক্টরির সুপারভাইজার লোকমান হোসেন ও ফরিদের কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে এ বাহিনী। দাবিকৃত চাঁদার টাকা না পেয়ে ২০২২ সালের ৩০ জুন লোকমান হোসেন ও ফরিদকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। শুধু তাই নয় দশ লাখ টাকার মূল্যের মেশিনারি মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় ওই ফ্যাক্টরির নিরাপত্তা কর্মকর্তা ফেরদৌস মিয়া বাদী হয়ে আকবর বাহিনীর প্রধান আকবর বাদশা, শহিদুল, সাইফুল, উত্তম, মাসুদ, মাসুম ও সবুজসহ ১০-১৫ জনকে আসামি করে রূপগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন।
২০২১ সালের ৫ ডিসেম্বর তারাব দক্ষিণপাড়া এলাকার জাহাদ আলী নামে এক ব্যক্তি ময়লা ফেলার জন্য হাউজ নির্মাণ করতে যান। পাশের বাড়ির হীরা মনিদের ঘরের সামনে হাউসটি নির্মাণ করলে দুর্গন্ধ বের হবে। এজন্য হাউস নির্মাণে হিরা মনিরা বাধা দেয়। পরে জাহেদ আলী আকবর বাহিনীকে ভাড়া করে। এক পর্যায়ে আকবর বাহিনী হিরা মনি, তার মা রাজিয়া বেগম, ভাই রহিম বাদশা ও প্রতিবন্ধী ভাই আব্দুল্লাহকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। ওই ঘটনায় হিরা মনি বাদী হয়ে আকবর বাহিনীর রুবেল, সিয়ামসহ ১৫-২০ জনকে আসামি করে রূপগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
একই বছর ১ সেপ্টেম্বর চলাচলের রাস্তা দখলকে কেন্দ্র করে আকবর বাদশা, মাসুম রেজা, আলামিনসহ ৫-৬ জন মিলে তালুকদার কেমিক্যাল কারখানার প্রশাসনিক কর্মকর্তা শাহীন মিয়াকে পিটিয়ে আহত করে। শাহীন মিয়া অভিযোগ করেন, আকবর বাহিনী প্রধান আকবর বাদশাসহ এ বাহিনীর সদস্যদের অন্য কোনো পেশা নেই। চাঁদাবাজি, হত্যা, জমিদখলসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডই তাদের মূল পেশা। 
২০২১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি তারাব বাজার ঘাট শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে জুয়ার আসর বসায় আকবর বাহিনী। খবর পেয়ে ডেমরা নৌপুলিশ ফাঁড়ি পুলিশ সদস্যরা সেখানে অভিযান পরিচালনা করে জুয়ার আলামত পান। পুলিশের অভিযানে আকবর বাদশাসহ বাহিনীর সদস্যরা পালিয়ে যায়। পরে জুয়ার আলামত সংগ্রহ করতে গেলে আকবর বাদশার নেতৃত্বে বাহিনীর আলামিন, সোহেল, আজমত আলী, আব্দুল মালেক, আব্দুর রহিমসহ ৩০-৪০ জন অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পুলিশের কাজে বাধা দেয় এবং পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ ও হামলা করে।
এ সময় ডেমরা নৌপুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক রহমত মিয়াকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়। এ ঘটনায় ফাঁড়ির উপপরিদর্শক আরিফুল ইসলাম বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। আকবর বাদশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একাধিকবার গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠালেও জামিনে বেরিয়ে এসে আবারো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে সে।
গত বুধবার আকবর বাহিনীর লোকজন প্রতিপক্ষ মুনসুরকে উদ্দেশ্য করে গালিগালাজ শুরু করলে উভয়গ্রুপের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় নিরীহ মানুষের ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। কেউ প্রতিবাদ করার সাহসটুকু পায়নি। 
আকবর বাহিনীর বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের শেষ নেই।
নাম না প্রকাশের সর্তে কয়েকজন বলেন, আকবর বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে এলাকার মানুষ। এ বাহিনী সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হলে এলাকার অপরাধ প্রবণতা অনেকটা কমে আসবে। 
এ সব বিষয়ে আকবর বাহিনীর প্রধান আকবর বাদশার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। এছাড়া ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমার বিরুদ্ধে মামলাগুলো দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ থানার ওসি এএফএম সায়েদ বলেন, আকবর বাদশাসহ তার লোকজনের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়