মির্জা ফখরুল : বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গণবিরোধী

আগের সংবাদ

সতর্ক-সংকুলানমুখী মুদ্রানীতি : আমানত সুদের ঊর্ধ্বসীমা প্রত্যাহার > নীতি সুদহার বাড়ল > রেপো সুদহার বেড়েছে ২৫ বেসিস পয়েন্ট

পরের সংবাদ

সাকরাইন উৎসব : ঢাকার আকাশে বাহারি রংয়ের ঘুড়ি, রাতে ডিজে পার্টি

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রকি আহমেদ : ঢাকার আকাশে বাহারি রংয়ের ঘুড়ি। কোনোটির নাম চিল ঘুড়ি, কোনোটির নাম বাদুড়, ময়ূর, পঙ্খিরাজ, প্রজাপতি, পানদার বা চোখদার। একজন আরেকজনের ঘুড়ি কাটায় ব্যস্ত। আনন্দ উল্লাসে মাতামাতি। সন্ধ্যা নামলে বাসার ছাদে ফুটানো হয় আতশবাজি। ছিল উদ্দাম ডিজে পার্টি। গতকাল শনিবার রাজধানী বিশেষ করে পুরান ঢাকার আকাশ ছিল সাকরাইন উৎসবপ্রেমীদের দখলে। তরুণ-তরুণীসহ সব বয়সি মানুষের ঘুড়ি কাটার এ উৎসবে যোগ দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার ও ব্রুনাইয়ের রাষ্ট্রদূতও।
গতকাল ভোরের কুয়াশা কেটে যাবার আগেই শুরু হয় ঘুড়ি উড়ানো খেলা। এরপর সারাদিন ঘুড়ি উড়ানো আর সুতা কাটার উৎসবে মাতে তরুণ-তরুণীসহ নানা বয়সের মানুষ। এছাড়া সকাল থেকে অনেকের বাসায় ছিল পৌষ মাসের পিঠাপুলির উৎসবও। ছাদে একদিকে চলে পিঠাপুলি বানানো, আরেকদিকে ছেলে-বুড়োদের ঘুড়ি কাটার আনন্দ। অনেকের ঘরে দেখা যায় জামাই মেয়ে আসার রীতিও।
পুরান ঢাকার সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছ থেকে জানা যায়, পৌষ মাসের শেষ দিন অর্থাৎ পৌষ সংক্রান্তির দিনে নতুন ধানের চালের পিঠাপুলি খেয়ে ঘুড়ি উড়িয়ে আনন্দ উৎসব করার রেওয়াজ দীর্ঘদিনের। পুরান ঢাকার মানুষ এই উৎসব উদযাপন করে আসছে প্রায় ৪০০ বছর ধরে। তবে এখন আর আগের মতো সবার ঘরে ঘরে পিঠা বানানো হয় না। তবে ঘুড়ি উড়ানোর মতো উৎসবে পিছিয়ে নেই এ প্রজন্মের তরুণ-তরুণীরা।
কথা হয় শাখাঁরিবাজারে মীনাক্ষী দেবির সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা সাকরাইন উৎসবের দিনে পৌষ সংক্রান্তির কথা ভুলে যাই। আমাদের বাসায় জামাই মেয়ে এসেছে। নতুন চালের পিঠা তৈরি করেছি। এছাড়া নানা পদের খাবারও রয়েছে। প্রতি বছর এদিন আসলে আনন্দ উৎসবে কাটে। ঘুড়ি উড়ানোর সময় আবির দাস বলেন, দিদি ও বাবার ঘুড়ি কেটেছি। এখন বাকি আছে জামাই বাবুর ঘুড়ি। ওটাও কেটে ফেলব। আমার চিল ঘুড়ি সবার সেরা। এ সময় সবার অট্টহাসিতে ছাদ ভরে উঠে।
ঘুড়ি উড়ানো দেখতে ও সাকরাইন উৎসবে যোগ দিতে উত্তরা থেকে ল²ীবাজার আসেন আনিকা ইসলাম। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, প্রতি বছর সাকরাইন উৎসবের কথা শুনি। ফেসবুকে বন্ধুদের ছবি ভিডিও দেখি। তাই এ বছর বন্ধুদের কাছে চলে এসেছি ঘুড়ি উড়াতে। এছাড়া রাতে ডিজে পার্টি হবে। নাচব, গাইব, মজা করব।
এদিকে, দিনের আলোয় ঘুড়ি উড়ানোর পর সন্ধ্যায় অনেক বাড়ির ছাদে ফানুস উড়াতে ও আতশবাজি ফুটাতে দেখা যায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও মানেনি কেউ। আগে প্রতিটি বাড়ির ছাদে মাইকের আধিপত্য থাকলেও এখনকার সাকরাইনে ডিজে গান আর বাজি ফুটানোর মতো আধুনিকতার ছোয়া লেগেছে। শাখাঁরিবাজার, সদরঘাট, কোটকাচারি, তাঁতীবাজার, দয়াগঞ্জ, মুরগিটোলা, কাগজিটোলা, গেন্ডারিয়া, বাংলাবাজার, ধূপখোলা মাঠ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, শিংটোলাসহ পুরান ঢাকার বিভিন্ন স্থানে জাঁকালোভাবে বাসার ছাদে ডিজে পার্টিতে সাকরাইন উৎসব উদযাপন করতে দেখা যায়। এদিকে এ বছরও ভিন্ন ধারার সাকরাইন উদযাপন করে ‘বাংলাদেশ ঘুড়ি ফেডারেশন’। রাজধানীর বকশি বাজারে অবস্থিত ঢাকা টাওয়ারের ছাদে তাদের সাকরাইন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্রিটিশ হাই কমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন এবং ব্রুনাইয়ের রাষ্ট্রদূত হাজী হারিস বিন ওথমান। অনুষ্ঠানের স্লোগান ছিল ‘ঢাকার প্রাণ বুড়িগঙ্গা বাঁচান’। এ সময় পুরান ঢাকার নৃত্য, কাওয়ালি ও ঢাক-ঢোল বাজিয়ে সাকরাইন উৎসব উদযাপন করা হয়।
পুরান ঢাকার ঐতিহ্যের ভূয়সী প্রশংসা করে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট ডিকসন বলেন, বাংলাদেশ এখন সবকিছুতে সমৃদ্ধশালী। কোনো কিছুরই অভাব নেই এই দেশে। আজকের এই আয়োজন সত্যিই মনোমুগ্ধকর। এই আয়োজনে অংশ নিতে পেরে আমরা গর্বিত।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়