মির্জা ফখরুল : বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গণবিরোধী

আগের সংবাদ

সতর্ক-সংকুলানমুখী মুদ্রানীতি : আমানত সুদের ঊর্ধ্বসীমা প্রত্যাহার > নীতি সুদহার বাড়ল > রেপো সুদহার বেড়েছে ২৫ বেসিস পয়েন্ট

পরের সংবাদ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক : গাড়িচালকদের জন্য বিশ্রামাগার নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কুমিল্লা প্রতিনিধি : সড়ক দুর্ঘটনা রোধে টেকসই ও নিরাপদ মহাসড়ক গড়ে তোলার লক্ষ্যে দেশের চারটি জাতীয় মহাসড়কের পাশে পণ্যবাহী গাড়িচালকদের জন্য পার্কিং সুবিধাসহ বিশ্রামাগার স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় সরকার। তারই অংশ হিসেবে পণ্যবাহী গাড়িচালকদের জন্য দেশে এই প্রথম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার নিমসারে ও বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমে মহাসড়কে সিরাজগঞ্জের পাঁচলিয়ায় গড়ে তোলা হয়েছে দুটি অত্যাধুনিক বিশ্রামাগার। এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটি উদ্বোধন করবেন। আধুনিক সুবিধাসংবলিত বিশ্রামাগারের কাজ শেষ পর্যায়ে। এখন এই বিশ্রামাগার দুটির সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ চলমান রয়েছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্র বলছে, বিশ্রামাগার চালু হলে দেশের সড়ক মহাসড়কে দুর্ঘটনা কমে যাবে এবং মহাসড়ক হবে নিরাপদ।
জানা যায়, দেশের মহাসড়ক নিরাপদ রাখতে দূরপাল্লার পণ্যবাহী চালকদের কথা চিন্তা করে নির্মাণ করা হয় এসব আধুনিক বিশ্রামাগার। আধুুনিক সুযোগসুবিধা সংবলিত দ্বিতলবিশিষ্ট বিশ্রামাগার দুটিতে চালকদের নানাবিধ সুযোগসুবিধা থাকবে। মনোমুগ্ধকর বিশ্রামাগার দুটি চালু হলে বিশ্রামাগারে দূরপাল্লার পণ্যবাহী ট্রাকচালকরা বিভিন্ন সুযোগসুবিধা ভোগ করতে পারবে। উদ্বোধনের পর প্রতিষ্ঠানটি পাবলিক ইজারার ভিত্তিতে পরিচালিত হবে বলে জানিয়েছে সওজ। সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এক জেলা থেকে অন্য জেলায় চলাচলরত দূরপাল্লার পণ্যবাহী যানবাহনচালকরা সড়কে একটানা ৫ ঘণ্টার বেশি গাড়ি চালানোর ফলে চালকদের একঘেয়েমিসহ ঘুম-ঘুমভাব তৈরি হয়। এতে মহাসড়কে নিরাপত্তার ঝুঁকি বাড়ে। তাই সরকারি ব্যবস্থাপনায় আধুনিক সুবিধাসংবলিত বিশ্রামাগারগুলো নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। এসব বিশ্রামাগারে দূরপাল্লার ট্রাকচালকদের জন্য দ্বিতল শয়নকক্ষে রাত্রীযাপন, পণ্যবাহী গাড়ি পার্কিং, বিনোদন পয়েন্ট, ক্যান্টিন, গোসলখানা, নামাজের জায়গা, প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা কক্ষ, গাড়ি মেরামতের জন্য ওয়ার্কশপ, ওয়াশজোন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎব্যবস্থা, আধুনিক স্যানিটেশন ব্যবস্থা, দুটি লেক, সবুজায়ন ও নিরাপত্তা প্রাচীরে সীমিত আকারে খেলার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। যাতে চালকরা এসব বিশ্রামাগারে বিশ্রাম নিয়ে সহজেই দূরবর্তী গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে। উক্ত ঝুঁকি নিরসনে সরকারি ব্যবস্থাপনায় পর্যাপ্তসংখ্যক আধুনিক সুবিধাসংবলিত বিশ্রামাগার চালু হলে দূরপাল্লার ট্রাকচালকদের বিশ্রাম নেয়ার সুবিধা হবে। ফলে তাদের রাত্রীযাপনের সমস্যাসহ ভ্রমণজনিত কান্তি ও অবসাদ নিরসন সম্ভব হবে। এছাড়া প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সড়কের দুর্ঘটনা হ্রাস পাবে। মহাসড়ক হবে নিরাপদ। এই বিশ্রামাগার স্থাপনের মাধ্যমে গাড়িচালকদের মানসিক ও শারীরিক উৎকণ্ঠা দুরীভূত করে আবারো তারা পরিপূর্ণভাবে গাড়ি চালনায় মনোনিবেশ করতে পারবে। এই প্রকল্পের আওতায় কুমিল্লা, সিরাজগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মাগুড়া জেলায় চারটি বিশ্রামাগার স্থাপন করা হচ্ছে। এই আধুনিক চারটি বিশ্রামাগার তৈরি করতে সরকারের ২২৬ কোটি ২১ লাখ টাকা ব্যয় হচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান আলাউদ্দিন ট্রেডিং কোং লিমিটেডের সাইট ইঞ্জিনিয়ার মো. আমান বিশ্বাস বলেন, আধুনিক বিশ্রামাগার নির্মাণে সব রকমের মান বজায় রেখে কাজ করা হয়েছে। এখন শেষমুহূর্তের কাজ চলছে।
এদিকে মহাসড়কের পাশে সরকারি এমন স্থাপনা নির্মাণে খুশি দূরপাল্লার পণ্যবাহী চালকরা। তারা বলছেন, সরকারের এই উদ্যোগের ফলে দেশের সড়ক মহাসড়কে দুর্ঘটনা কমে যাবে।
চালকরা নির্বিঘেœ যাতায়াত করতে পারবে।
দূরপাল্লার সড়কে নিয়মিত চলাচলরত ট্রাকচালক আলমগীর স্বপন বলেন, প্রধান সড়কে গাড়ি পার্কিংয়ের নির্ধারিত কোনো জায়গা নেই আমাদের। তাই আমাদের বাধ্য হয়েই এতদিন মহাসড়কের পাশেই গাড়ি রেখে বিশ্রাম নিতে হতো। এখন বিশ্রামাগারটি চালু হলে আমরা বিশ্রাম নিতে পারব। বিশ্রামের ফলে আমাদের শরীরও ভালো থাকবে, আমাদের গাড়িও নিরাপদে থাকবে। অপর চালক মমতাজ উদ্দিন বলেন, সরকার ভবনটি আমাদের জন্য নির্মাণ করায় এখন বিশ্রাম নেয়া যাবে এবং সড়কে দুর্ঘটনাও কমে যাবে বলে জানান তিনি। কুমিল্লা ময়নামতি হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আকুল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এই বিশ্রামাগারটি চালু হলে সড়ক দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে আসবে এবং যানচলাচলে স্বস্তি ফিরে আসবে।
এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমিত চাকমা বলেন, ভবন নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এখানে শুধু গাড়ি পার্কিং ও বিশ্রামাগার নয়, এখানে গাড়ি মেরামতের জন্যও সুযোগসুবিধা থাকবে। খাওয়া, গোসল এবং নামাজ পড়ার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। পার্কিংয়ের নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটি উদ্বোধন করবেন।
সড়ক বিভাগসংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, দেশের চারটি জাতীয় মহাসড়কের চারটি স্থানে আধুনিক সুবিধাসংবলিত বিশ্রামাগার নির্মাণের প্রকল্পটি ২০১৯ সালের ২৭ আগস্ট একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। ওই প্রকল্পের আওতায় চারটি বিশ্রামাগারের মধ্যে দুটি সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নিজস্ব ভূমিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ৭৮তম কিলোমিটারে কুমিল্লার নিমসার নামক স্থানে এবং ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের ১০৯তম কিলোমিটারে সিরাজগঞ্জের পাঁচলিয়া নামক স্থানে নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় আরো দুটি বিশ্রামাগার ভূমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে নির্মিত হবে যার একটি ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের মাগুরার ল²ীকান্দর নামক স্থানে এবং অপরটি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ১২৮তম কিলোমিটারে হবিগঞ্জ জগদীশপুর নামক স্থানে নির্মাণ করা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়