‘রেজা বাহিনী’ থেকে রেহাই চান হোটেল ব্যবসায়ী

আগের সংবাদ

২৭ দফাই হবে ভোটের ইশতেহার : বিএনপির ‘রাষ্ট্র মেরামতের রূপরেখা’ ঘষামাজার কাজ চলছে > নেয়া হবে সব স্তরের মানুষের মত

পরের সংবাদ

ব্লæমবার্গের বিশ্লেষণ : নন-লেদার ফুটওয়্যার খাতে বিপুল সম্ভাবনা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বলা যায় নীরবেই বাড়ছে নন-লেদার ফুটওয়্যার খাতের রপ্তানি আয়। গত ৫ বছরে এ খাতের রপ্তানি প্রায় দ্বিগুণ হয়ে ৫০০ মিলিয়ন ডলার ছুঁয়েছে। আগামী দিনগুলোতেও এই পণ্যের রপ্তানিতে ভালো প্রবৃদ্ধির আভাস মিলছে। ২০২৩ সাল নাগাদ ২ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানিতে চোখ বাংলাদেশের। 
ব্লæমবার্গের এক বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, সোর্সিং ব্যয় কমানোর অংশ হিসেবে চীন থেকে ব্যবসা কমিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, পাকিস্তানের মতো দেশগুলোতে ব্যবসা বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে বড় নন-লেদার জুতার ব্র্যান্ডগুলো।
খাত সংশ্লিষ্টরাও বলছেন, বৈশ্বিক ক্রেতারা এ পণ্যটির জন্য সম্ভাবনাময় সোর্সিং কান্ট্রি হিসেবে বাংলাদেশকে তাদের বিবেচনায় রাখছেন। বিশেষত বিশ্বের শীর্ষ নন-লেদার ফুটওয়্যার রপ্তানিকারক চীনের ওপর থেকে পশ্চিমা ক্রেতারা নির্ভরতা কমানো শুরু করায় বাংলাদেশের সামনে ভালো সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, বেঙ্গল লেদার কমপ্লেক্স লিমিটেড প্রতি বছর প্রায় ১০ মিলিয়ন ডলারের নন-লেদার সু রপ্তানি করে। আগামী বছরগুলোতে এই পণ্যের ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে শীর্ষস্থানীয় লেদার এন্ড নন-লেদার ফুটওয়্যার রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডও মনে করে, সামনে ব্যবসার সুদিন আসছে। এপেক্স ফরাসি ক্রীড়াসামগ্রী বিক্রয়কারক প্রতিষ্ঠান ডেকাথলন এসএর সরবরাহকারীদের একজনও বটে।
এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেড সূত্রে জানা গেছে, ক্রেতারা চীন থেকে অর্ডার কমাচ্ছে। নন-লেদার ফুটওয়্যারের ক্ষেত্রে ভিয়েতনামের অবস্থানও বেশ ভালো। কিন্তু ভিয়েতনাম হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিতে যাচ্ছে, যার ফলে সেখান থেকেও ক্রেতারা সোর্সিং কমাবে। এর ফলে বাংলাদেশের সামনে দারুণ সুযোগ রয়েছে এই পণ্যটির রপ্তানি বাড়ানোর।
এই পণ্যের তালিকায় রয়েছে স্যান্ডেল, ফ্লিপ-ফ্লপ, বুট, জুট বেসড এসপাড্রিলস, ক্যানভাস বা রাবারের জুতা, স্নিকার্স, মোল্ডেড পলিইউরেথেন এবং পিভিসি স্যুজ। বাংলাদেশের মূল রপ্তানি বাজার স্পেন, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, জার্মানি ও ইতালি।
বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ বিশ্ববাজারে লেদার ছাড়াও অন্যান্য ফুটওয়্যার রপ্তানি করেছে ৪৪৯ মিলিয়ন ডলারের, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি। পাঁচ বছর আগে অর্থাৎ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এই পণ্যটির রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২৪৪ মিলিয়ন ডলারের। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) অন্যান্য ফুটওয়্যার রপ্তানির প্রবৃদ্ধিও আশাব্যঞ্জক। আলোচ্য সময়ে এই পণ্যটি রপ্তানি হয়েছে ২৫০ মিলিয়ন ডলারের, যাতে প্রবৃদ্ধি ১৮ শতাংশ।
এদিকে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) আশা করছে, আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে নন-লেদার ফুটওয়্যারের রপ্তানি ১ বিলিয়ন ডলার আর ২০৩০ সাল নাগাদ তা ২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হতে পারে। খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, এই পণ্যের বৈশ্বিক বাজারের আকার ৩০০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে।
কমছে চীন নির্ভরতা : ব্লæমবার্গের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ২০১১ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে বিশ্ববাজারে সু রপ্তানিতে চীনের অংশ কমেছে প্রায় সাড়ে ছয় শতাংশ। ২০১১ সালে বিশ্ববাজারে সু রপ্তানিতে চীনের অংশ ছিল ৬১ শতাংশ, আর ১০ বছর পর এসে তা দাঁড়িয়েছে ৫৪ শতাংশে।
এতে বলা হয়, চীনের উৎপাদন সক্ষমতা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাইরে, অর্থাৎ ভারতের মতো দেশে স্থানান্তর করলে তা জুতার উৎপাদন খরচ কমাতে ভূমিকা রাখতে পারে। ২০২৫ সালে ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির পরও ভারতে শ্রম খাতে খরচ চীনের তুলনায় অর্ধেক এবং ভিয়েতনামের তুলনায় ৭০ শতাংশ কম হবে বিধায় এ খরচ কমবে বলে উল্লেখ করা হয়। অনুমান করা হয়েছে, আগামী দুই বছরে চীনা সক্ষমতার প্রায় এক-পঞ্চমাংশ দক্ষিণ এশিয়ায় এবং আরো ৯ শতাংশ ভিয়েতনামে স্থানান্তরিত হতে পারে।
উদ্যোক্তাদের চ্যালেঞ্জ : চামড়াজাত পণ্যে যেমন কাঁচা চামড়াসহ কাঁচামালের প্রায় পুরো অংশ স্থানীয়ভাবে সরবরাহ সম্ভব, নন-লেদারের ক্ষেত্রে তা নয়। সিন্থেটিক, রাবার, প্লাস্টিক এবং কাপড় কিংবা কেমিক্যালের বেশির ভাগই আমদানি করতে হয়। এই আমদানি প্রক্রিয়া সবার জন্য সহজ নয়।
আবার এইচএন্ডএম, ডেকাথলন, ফিলা এন্ড কাপার মতো ব্র্যান্ডের অর্ডার পেলেও ?নাইকি, অ্যাডিডাসের মতো বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ডগুলোর অর্ডার পায় না বাংলাদেশ। উদ্যোক্তারা বলছেন, সাপ্লাই চেইন, লজিস্টিকসের মতো জায়গায় চীন, ভিয়েতনামের তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ।
এ খাতকে সহায়তা দেয়ার লক্ষ্যে সরকার ২০২০ সাল থেকে এই পণ্যের রপ্তানির জন্য ৪ শতাংশ নগদ প্রণোদনা দিয়ে আসছে। তবে উদ্যোক্তারা বলছেন, প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য তা ১৫ শতাংশ হওয়া উচিত।
এছাড়া বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে নন-ট্যারিফ ব্যারিয়ারের ইস্যুটি উঠে এসেছে ব্লæমবার্গের বিশ্লেষণে।
এতে বলা হয়, উন্নত অর্থনীতি থেকে বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে কার্বন নির্গমন রীতি এবং শ্রমের মানের (লেবার স্ট্যান্ডার্ড) মতো ইস্যুগুলো সমাধান করতে হতে পারে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়