প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য চাকরি মেলা

আগের সংবাদ

গুচ্ছের ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হয়নি : অনিশ্চয়তায় ২১ হাজার শিক্ষার্থী

পরের সংবাদ

মুক্তিযোদ্ধাদের বীর নিবাস নির্মাণে অনিয়ম, কাজ বন্ধ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সাইমুম সাব্বির শোভন, জামালপুর ও রাশেদুল ইসলাম রনি, বকশিগঞ্জ থেকে : মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে ‘অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় বীর নিবাস পাচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধা অথবা তাদের উত্তরাধিকারী। এরই অংশ হিসেবে দ্বিতীয় পর্যায়ে জামালপুরের বকশিগঞ্জে নির্মিত হচ্ছে ২৯টি বীর নিবাস। প্রায় ৪ শতাংশ জমির ওপর নির্মিত প্রতিটি ভবনের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪ লাখ ১০ হাজার টাকা। বীর নিবাসে থাকছে ২টি শোবার ঘর, ১টি রান্নার ঘর, ১টি ডাইনিং রুম ও ২টি বাথ রুম।
২৯টি বীর নির্বাস নির্মাণে কাজ করছে কয়েকজন ঠিকাদার। এর মধ্যে ৬টি বীর নিবাসের নির্মাণকাজ করছেন বকশিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম খান বিজয়।
মুক্তিযোদ্ধার স্বজনদের দাবি- ৬টি বীর নির্বাস নির্মাণে ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের ইট, বালু ও সিমেন্ট। এতে ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় যে কোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা তাদের। এছাড়া কাজের মান খুবই খারাপ। কাজের অনিয়মে বাধা দেয়া হলেও জোরপূর্বক ঘর নির্মাণের অভিযোগ ঠিকাদার সাইফুল ইসলাম খান বিজয়ের বিরুদ্ধে।
উপজেলার সূর্যনগর এলাকার মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাদেরের ছেলে মো. সোহেল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী একটি ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছেন। সেই ঘর নির্মাণে অনেক অনিয়ম হচ্ছে। সেটা হলো- ইট দিছে ৩ নম্বর।
বালু ও সিমেন্ট দিছে খারাপ। সাত বস্তা বালুর মধ্যে এক বস্তা সিমেন্ট দিয়ে কাজ করছে। আমার বাবা যুদ্ধ করে এই দেশকে স্বাধীন করছেন। আমার বাবার ঘরই যদি এ রকম হয়। তাহলে অন্য জনের ঘর কেমন হবে সেটাতো দেখলেই বোঝা যায়।’
উপজেলার চন্দ্রাবাজ এলাকার মরহুম মুক্তিযোদ্ধা হারনুর রশিদের ছোট ভাই হামিদুল্লাহ বলেন, ‘সরকার মুক্তিযোদ্ধা ঘর দিছে। ঘর যে করল। সমস্তটাই অনিয়ম। দুই নম্বর ইট, দুই নম্বর খোয়া, বালুও পচা বালু দিয়ে। যেভাবে ঘরটা করে গেল। আমরা বাধা দিলাম, তবু মানল না। জোর কইরে কইরে গেল। এই ঘরে মানুষ থাহা সম্ভব না। যে কোনো সময় ভাইঙে পইরে মানুষ মারা যাবে।’ দরপত্র অনুযায়ী সঠিকভাবে বীর নিবাস নির্মাণের দাবি মুক্তিযোদ্ধাদের।
মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাদের বলেন, ‘আমি নতুন বিল্ডিং ভালো চাই। যাতে আমারটা এক নম্বর ইট দিয়ে কাজ কইরে দেই। সিডিউলে যা আছে। এই সিডিউল মোতাবেক আমারে বিল্ডিং নির্মাণ কইরে দেবেন।’
মুক্তিযোদ্ধা মফিজ উদ্দিন বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের বাসস্থান নির্মাণে অনিয়মের বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। আমাদের দাবি হচ্ছে, সিডিউল অনুযায়ী যা লেখা আছে। সেই মোতাবেক যেন ঘরগুলা হয়।’
এ বিষয়ে ঠিকাদার সাইফুল ইসলাম খান বিজয় বলেন, আমি কোথাও কোনো কাজ খারাপ করিনি। যদি কাজ খারাপ হয়ে থাকে তাহলে আমি সেটি সংশোধন করে দেব।
এদিকে ভবন নির্মাণের অনিয়মের বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন, জেলা প্রশাসনসহ একাধিক দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাদের। তার অভিযোগের পর ৫ জানুয়ারি সরজমিন পরিদর্শনে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুন মুন জাহান লিজা ও উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ তালুকদার।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুন মুন জাহান লিজা বলেন, সরজমিন পরিদর্শন করে নির্মাণকাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের প্রমাণ পেয়েছি।
তাই আপাতত নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। নির্মাণসামগ্রী পরীক্ষা করে যদি সব ইট নিম্নমানের হয়। তাহলে এই ঘর ভেঙে নতুন ঘর নির্মাণ করা হবে।’
বকশিগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, উপজেলার সব বীর নিবাস ইউএনও ও পিআইওকে নিয়ে পরিদর্শন করা হবে। যদি কোনো ঘর ভালো না থাকে। তাহলে বিলও বন্ধ থাকবে। কাজও বন্ধ থাকবে। কারো জন্য কোনো ক্ষমা নেই।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়