৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে সংসদ অধিবেশন

আগের সংবাদ

চ্যালেঞ্জ অনেক, প্রত্যয়ী আ.লীগ : অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করা > সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরা ও অপপ্রচারের জবাব দেয়া

পরের সংবাদ

এখনো শুকায়নি বন্যার ক্ষত : সুনামগঞ্জে শীত যেন মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা : বিদায়ী বছরের ১৬ জুন সুনামগঞ্জ-সিলেটে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার ক্ষত এখনো পিছু ছাড়েনি হাওরবাসীর। পৌষের এই তীব্র শীতেও সেই ভয়াল বন্যার কথা মর্মে মর্মে স্মরণ করতে হচ্ছে হাওরবাসীকে।
বানের পানিতে ভিটেমাটি, বসতঘর, স্কুল,কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির, গোলার ফসল, গবাদিপশু, বই, খাতাসহ অনেক কিছুই ছিনিয়ে নিয়েছে বিদায়ী বছরের ১৬ জুনের ভয়াল বন্যা। সেই বন্যার ঘা এখন আবার বেড়ে উঠেছে পৌষের কনকনে শীতের মধ্যে। বানের পানি সব কিছুর সঙ্গে শীতের কাপড়-চোপড়ও কেড়ে নিয়েছে হাওরপাড়ের হতদরিদ্র মানুষের। ‘এ যেন মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা।’ চলতি আমন মৌসুমে আমনের বাম্পার ফলনে বন্যার ক্ষত কিছুটা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই এবার সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলের হতদরিদ্রপীড়িত মানুষজনের মধ্যে দেখা দিয়েছে শীতবস্ত্রের সঙ্কট। সরকারি/বেসরকারিভাবে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে যে পরিমাণ শীতবস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন তৃণমূলের শীতার্ত মানুষজন।
হাওরপাড়ের অনেক গ্রামের শীতার্ত মানুষ এখনো আগের মতো হাওরের পানে তাকিয়ে আছে কেউ শীতবস্ত্র নিয়ে আসছে কিনা তার অপেক্ষায়। গত কয়েকদিনের তীব্র শীতে এমন চিত্রই দেখা গেছে সুনামগঞ্জের দুর্গম হাওরাঞ্চলের দরিদ্র্য পীড়িত গ্রামগুলোতে।
সরজমিন সুনামগঞ্জের সদর উপজেলার গোয়ারচড়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, হাওরের মাঝে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে বৃদ্ধ ফাতেমা বেগমের একটি মাটির ঘর। উঠানে টানিয়ে রাখা দড়িতে ঝুলছে কয়েকটি ছেঁড়া-ফাঁড়া পুরনো কাঁথা। এই শীতে ফাতেমা বেগমের একমাত্র সম্বল কাঁথাটির এমনই দূরবস্থা যে, ছেঁড়ার আর কোনো জায়গাও যেন কাঁথাটিতে অবশিষ্ট নেই। এ কাঁথা দিয়েই কনকনে শীতের রাতে ৭ সন্তানকে নিয়ে ঘুমান দিনমজুর আলতাব আলীর স্ত্রী ফাতেমা বেগম। তাদের ২ ছেলে ও ৫ মেয়ে রয়েছে। শুধু ফাতেমাই নন তার মতো আরো অনেকে এই শীতে হাওরপাড়ে অমানবিক জীবনযাপন করছেন শীতবস্ত্র সংকট নিয়ে।
জানা যায়, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার দেখার হাওরপাড়ে গোয়ারচরা, ইসলামপুর, হালুয়ারগাঁও, তাহিরপুর উপজেলার উত্তর ও দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের জয়পুর, গোলাবাড়ি, মাটিয়াইন, মন্দিয়াতা, ছিলানিতাহিরপুর, ধরমপাশা উপজেলার গাবী, শুকদেবপুর, খয়েরদিরচড়, মধ্যনগর উপজেলার নিশ্চিন্তপুর, বংশীকুণ্ডাসহ বেশ কিছু দরিদ্র গ্রাম রয়েছে। বিদায়ী বছরের জুন মাসে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় প্লাবিত হয় পুরো জেলা। বন্যায় জেলার ১২ উপজেলার প্রায় সবকটি উপজেলাই প্লাবিত হয়েছিল। বন্যা কবলিত হয়ে পানিবন্দি ছিলেন অর্ধলক্ষাধিক পরিবারের অন্তত ২৫ লাখ মানুষ। প্রাণ বাঁচাতে মানুষ আশপাশের সরকারি/বেসরকারি উঁচু স্থাপনায় আশ্রয় নেয়। কোনো রকমে প্রাণ বাঁচাতে পারলেও পানিতে তলিয়ে যায় ঘরবাড়ি, ভেসে যায় গৃহস্থালির জিনিসপত্র। নষ্ট হয়ে যায় ঘরে থাকা লেপ-তোশক, কাঁথা,বালিশ ও শীতবস্ত্র।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী ভোরের কাগজকে বলেন, গত বছর এ জেলায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বন্যায় মানুষের যে শীতবস্ত্র ছিল সেটিও নষ্ট হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে হতদরিদ্র শীতার্তদের মাঝে বিতরণের জন্য প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে ৪৫ হাজার শীতবস্ত্র পেয়েছি। জেলার প্রতিটি উপজেলায় সেগুলো বিতরণ করা হয়েছে। তবে চাহিদার তুলনায় তা কম। আমরা ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি।
বাস্তবতা বিবেচনা করে এ জেলায় যেন আরো শীতবস্ত্র পাঠানো হয়। বরাদ্দ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো বিতরণ করা হবে। এছাড়াও শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান জেলা প্রশাসক।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়